শেখ আফজাল হোসেন (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]

শেখ আফজাল হোসেন
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

শেখ আফজাল হোসেনের জন্ম নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধোপাদহ গ্রামে। পাঁচ ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বাবার নাম জসিমউদ্দীন এবং মায়ের নাম আয়মনা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম রাবেয়া বেগম। তাদের তিন ছেলে ও চার মেয়ে।[২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন শেখ আফজাল হোসেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন কুমিল্লা সেনানিবাসে। ২৫ মার্চ আক্রান্ত হওয়ার পর অন্যান্যদের সঙ্গে বিদ্রোহ করে সেনানিবাসের ভেতরে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় তিনি সেনানিবাস ছেড়ে যান। পরে ২ নম্বর সেক্টরের মতিনগর সাব-সেক্টর এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ করেন। তাকে একটি গেরিলা দল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বুড়িচং, দেবীদ্বার, মুরাদনগর ও চান্দিনা থানার কিছু অংশে তারা গেরিলা যুদ্ধ করেন। বেশ কটি সফল অপারেশনে নেতৃত্ব দেন শেখ আফজাল হোসেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২১ জুলাই সকালে শেখ আফজাল হোসেন খবর পেলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী একদল ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সড (ইপিসিএএফ) কুমিল্লা থেকে বুড়িচং উপজেলায় আসছে। খবর পেয়েই সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের অ্যামবুশ করার। তখন বুড়িচং থানা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। পাশেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত। এই এলাকা দিয়েই ভারত থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে যাতায়াত করতেন। সে জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীরা এই এলাকায় বেশি বিচরণ করত। মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ঝটিকা আক্রমণ চালাতেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেখ আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা গোপনে অবস্থান নিলেন বুড়িচং থানার সাধবপুর গ্রামে। ঝোপঝাড় বা গাছের আড়ালে তারা ওত পেতে থাকেন। একসময় তারা দেখতে পেলেন, মাঠের ভেতর দিয়ে ইপিসিএএফরা দল বেঁধে আসছে। তারা কল্পনাও করেনি সামনের বিপদ সম্পর্কে। তখন সকাল আনুমানিক নয়টা। মুক্তিযোদ্ধারা অপেক্ষায় আছেন ইপিসিএএফরা অস্ত্রের গুলির আওতায় আসার জন্য। তারা বেশির ভাগ অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল তাদের সবার অস্ত্র। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ল কয়েকজন। হকচকিত ইপিসিএএফরা দৌড়াদৌড়ি করে যে সেখানে পারল পজিশন নিল। বিপর্যয় কাটিয়ে ইপিসিএএফরাও প্রবলভাবে পাল্টা আক্রমণ করে। শুরু হয় যুদ্ধ এবং চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ যুদ্ধে শেখ আফজাল হোসেন ও তার কয়েকজন সঙ্গী যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। ইপিসিএএফ ছিল তাদের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। আর তারা ছিলেন মাত্র ২৮ জন। সন্ধ্যার পর ইপিসিএএফরা পিছু হটে বুড়িচং থানায় আশ্রয় নেয়। যুদ্ধে ইপিসিএএফের ৩০ জন নিহত হয়। ছয়জন তাদের হাতে ধরা পড়ে। মুক্তিবাহিনীর নায়েক কবির শহীদ এবং শেখ আলম ও আবদুল আলিম আহত হন। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৮-০৯-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা