শুভ সুখ চৈন
শুভ সুখ চৈন (হিন্দি: शुभ सुख चैन, আক্ষ. '"শুভ সুখ-শান্তি"') ছিল আজাদ হিন্দ তথা সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকারের জাতীয় সঙ্গীত।
শুভ সুখ চৈন | |
---|---|
আজাদ হিন্দ সরকার-এর জাতীয় সঙ্গীত | |
কথা | ক্যাপ্টেন আবিদ হাসান, মুমতাজ হুসেন, ১৯৪৩ |
সুর | ক্যাপ্টেন রাম সিং ঠাকুরী |
গ্রহণের তারিখ | ১৯৪৩ |
পরিত্যাগ হয়েছে | ১৮ আগস্ট ১৯৪৩ |
এই গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা কবিতা ভারত ভাগ্য বিধাতা অবলম্বনে লেখা হয়েছে। ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসু যখন জার্মানি থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় স্থানান্তরিত হন, তখন তিনি আজাদ হিন্দ রেডিওর লেখক মুমতাজ হুসেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের (আইএনএ) কর্নেল আবিদ হাসান সাফরানির সহায়তায় জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে হিন্দুস্তানি ভাষায় "শুভ সুখ চৈন" নামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনগণ মন পুনর্লিখন করেন। তারপর সুভাষ বসু সিঙ্গাপুরে অবস্থিত আইএনএ সম্প্রচার কেন্দ্র ক্যাথে বিল্ডিং-এ গিয়ে ক্যাপ্টেন রাম সিং ঠাকুরিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল বাংলা গানের অনুবাদিত গানটির সুরারোপ করতে বলেন।[১] তিনি তাকে গানটিকে একটি যুদ্ধজয়সূচক সুর দিতে বলেন।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর পরদিন সকালে জওহরলাল নেহেরু লালকেল্লার প্রাচীরে ভারতের তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এই উপলক্ষ্যে ক্যাপ্টেন ঠাকুরীকে তার অর্কেস্ট্রা দলের সদস্যদের সঙ্গে "শুভ সুখ চৈন" এর সুর বাজাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।[২]
ইতিহাস
সম্পাদনাভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়, প্রায়ই বিভিন্ন প্রতিবাদ সভায় "বন্দে মাতরম" গানটি গাওয়া হতো। এর মধ্যে ১৯৪৩ সালের অক্টোবর মাসে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার তথা সুভাষ বসুর অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকারের ঘোষণা সভাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, কিছু মুসলমান এই গানে ব্যবহৃত হিন্দু রূপকগুলির কারণে অস্বস্তি বোধ করতেন এবং গানটির মূল উৎস বঙ্কিমচন্দ্রের "আনন্দমঠ" বইটিও অপছন্দ করতেন। সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজের (আইএনএ) নেতারা এই সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে আইএনএ এবং আজাদ হিন্দের প্রধান সুভাষ চন্দ্র বসু এই সমস্যার সমাধান করবেন।
আইএনএ সদস্য লক্ষ্মী সেহগল "জন গণ মন" গানটি নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। এই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই গানটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন অধিবেশনে গাওয়া হয়েছিল। তিনি সুভাষ বসুর উপস্থিতিতে একটি মহিলা সভায় এটি গাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি গানটি পছন্দ করার পাশাপাশি এটি জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল বলে মনে করেছিলেন। তবে গানটি অতি-সংস্কৃত শব্দবহুল বাংলা ভাষায় রচিত হওয়ার বিষয়টি তিনি পছন্দ করেননি। তাই তিনি হিন্দুস্তানিতে এটি অনুবাদ করার নির্দেশ দেন।[৩]
ক্যাপ্টেন আবিদ হাসান সাফরানি "শুভ সুখ চৈন" নামে গানটির অনুবাদ করেন এবং গানটিতে সুরারোপ করেনক্যাপ্টেন রাম সিং ঠাকুরি।[২] এটি "বন্দে মাতরম" এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে আজাদ হিন্দ সরকারের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয় এবং সব সভায় গাওয়া হতো। সুভাষচন্দ্র বসুর প্রস্থানের আগের চূড়ান্ত সমাবেশও গানটি গাওয়া হয়েছিল।[৪]
তবে ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারিতে ভারতের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ মূল "জন গণ মন" গানটিকেই ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ঘোষণা করেন।।[৫]
গানের কথা
সম্পাদনাOriginal Hindi version | Original Urdu Version | IAST | English Translation |
---|---|---|---|
शुभ सुख चैन की बरखा बरसे, भारत भाग है जागा |
شبھ سکھ چین کی برکھا برسے ، بھارت بھاگ ہے جاگا
پنجاب، سندھ، گجرات، مراٹھا، دراوڑ اتکل بنگہ چنچل ساگر، وندھیہ، ہمالے، نیلا یمنا گنگا تیرے نت گن گائیں، تجھ سے جیون پائیں سب تن پاے آشا۔ سورج بن کر جگ پر چمکے، بھارت نام سبھاگا، جئے ہو! جئے ہو! جئے ہو! جئے جئے جئے جئے ہو!
ہر صوبے کے رہنیوالے، ہر مذہب کے پرانی، سب بھید اور پھرک مٹا کے، سب گود میں تیری آکے، گونتھے پریم کی مالا۔ سورج بن کر جگ پر چمکے، بھارت نام سبھاگا، جئے ہو! جئے ہو! جئے ہو! جئے جئے جئے جئے ہو!
سب مل کر ہند پکارے، جے آزاد ہند کے نعرے۔ پیارا دیش ہمارا۔ سورج بن کر جگ پر چمکے، بھارت نام سبھاگا، جئے ہو! جئے ہو! جئے ہو! جئے جئے جئے جئے ہو! |
Śubh sukh cain kī barkhā barse, Bhārat bhāg hai jāgā |
শুভ সুখ শান্তির বৃষ্টি বর্ষে, ভারতের ভাগ্য জেগেছে |
ব্যবহার
সম্পাদনানেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু বা অন্তর্ধান রহস্য ও তার সঙ্গে ভগবানজী গুমনামী বাবার সংশ্লিষ্টতার উপর ভিত্তি পশ্চিমবঙ্গের সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের নির্মিত ২০১৯ সালের গুমনামি চলচ্চিত্রে গানটি ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনা- জন গণ মন, ভারতের জাতীয় সঙ্গীত
- বন্দে মাতরম, ভারতের জাতীয় স্ত্রোত্র
- আমার সোনার বাংলা, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত
- কদম কদম বাধায়ে যা, ভারতীয় জাতীয় রণসঙ্গীত
- আবিদ হাসান
- ক্যাপ্টেন রাম সিং ঠাকুরী
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Capt. Ram Singh Thakuri's interview"। Rediff on NET।
- ↑ ক খ "A tribute to the legendary composer of National Anthem", The Tribune, ২০০২-০৫-০৪, সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১০,
Snippet: ... Capt Ram Singh would be remembered for his composition of Jana Gana Mana, the original script of which was a little different. It was Sukh Chain Kee Barkha Barse, Bharat Bagiya Hai Jaga. ...
- ↑ Fay, Peter Ward (১৯৯৫), The Forgotten Army: India's Armed Struggle for Independence 1942-1945, Ann Arbor: University of Michigan Press, আইএসবিএন 0-472-08342-2 , pp. 230-234
- ↑ Fay, Peter Ward (১৯৯৫), The Forgotten Army: India's Armed Struggle for Independence 1942-1945, Ann Arbor: University of Michigan Press, আইএসবিএন 0-472-08342-2 , p. 380
- ↑ Volume XII. Tuesday, 24 January 1950. Online Transcript, Constituent Assembly Debates ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে