ভারত ভাগ্য বিধাতা হল বাংলা ভাষায় একটি পাঁচ স্তবক বিশিষ্ট ব্রাহ্ম স্তোত্র।[] এটি ১৯১৩ সালে নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা রচিত এবং সুর করা হয়েছিল। গানটির প্রথম স্তবকটি ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয়েছে।[][][]

ইতিহাস

সম্পাদনা

২৭ ডিসেম্বর ১৯১১ সালে কলকাতায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে কবিতাটি প্রথম গাওয়া হয়েছিল। গানটি বিশিষ্ট কংগ্রেসের সামনে একদল স্কুল ছাত্র সহ ঠাকুরের ভাগ্নী সরলা দেবী চৌধুরানী পরিবেশন করেছিলেন। বিষাণ নারায়ণ ধর, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি এবং অম্বিকা চরণ মজুমদারের মতো সদস্যরাও তাতে যোগদান করেন।

১৯১২ সালে, গানটি তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ভারত ভাগ্য বিধাতা শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল, যা ছিল ব্রাহ্মসমাজের অফিসিয়াল প্রকাশনা এবং যার সম্পাদক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কলকাতার বাইরে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের মদনাপল্লে বেসান্ত থিওসফিক্যাল কলেজের একটি অধিবেশনে গানটি প্রথম গাওয়া হয়েছিল। আজও গানটির ইংরেজি অনুবাদ প্রার্থনা সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মদনাপল্লেতেই গানটির প্রথম ইংরেজি অনুবাদ করেন।

ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের উপলক্ষ্যে, ভারতীয় গণপরিষদ ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখে একটি সার্বভৌম সংস্থা হিসাবে প্রথমবারের মতো একত্রিত হয়, মধ্যরাতে এবং অধিবেশনটি সর্বসম্মতভাবে জনগণমন-এর মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

১৯৪৭ সালে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে জন গণ মন একটি রেকর্ডিং দেন। সারা বিশ্বের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি সমাবেশের সামনে হাউস অর্কেস্ট্রা দ্বারা গানটি বাজানো হয়েছিল।

২৪ জানুয়ারি ১৯৫০ তারিখে ভারতের গণপরিষদ দ্বারা জনগণমনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।[]

কথামালা

সম্পাদনা

ভারত ভাগ্য বিধাতা

কথা ও সুর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥

অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী
হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খৃস্টানী
পূরব পশ্চিম আসে তব সিংহাসন-পাশে
প্রেমহার হয় গাঁথা।
জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥

পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থা, যুগ যুগ ধাবিত যাত্রী।
হে চিরসারথি, তব রথচক্রে মুখরিত পথ দিনরাত্রি।
দারুণ বিপ্লব-মাঝে তব শঙ্খধ্বনি বাজে
সঙ্কটদুঃখত্রাতা।
জনগণপথপরিচায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥

ঘোরতিমিরঘন নিবিড় নিশীথে পীড়িত মূর্ছিত দেশে
জাগ্রত ছিল তব অবিচল মঙ্গল নতনয়নে অনিমেষে।
দুঃস্বপ্নে আতঙ্কে রক্ষা করিলে অঙ্কে
স্নেহময়ী তুমি মাতা।
জনগণদুঃখত্রায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥

রাত্রি প্রভাতিল, উদিল রবিচ্ছবি পূর্ব-উদয়গিরিভালে –
গাহে বিহঙ্গম, পূণ্য সমীরণ নবজীবনরস ঢালে।
তব করুণারুণরাগে নিদ্রিত ভারত জাগে
তব চরণে নত মাথা।
জয় জয় জয় হে জয় রাজেশ্বর ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে॥

ইংরেজি অনুবাদ

সম্পাদনা
Bharata Bhagya Bidhata

(Lyrics: Rabindranath Tagore)


Oh! the ruler of the minds of people, victory be to You, dispenser of the destiny of India!
Punjab, Sindh, Gujarat, Maratha (Marathi heartland), Dravida (South India), Orissa and Bengal,
The Vindhyas, the Himalayas, the Jumna (Yamuna) and the Ganges, and the oceans with foaming waves all around.
Wake up listening to Your auspicious name, ask for Your auspicious blessings,
And sing to Your glorious victory.
Oh! You who impart well being to the people, victory be to You, dispenser of the destiny of India!
Victory, victory, victory to You!

Your call is announced continuously, we heed Your gracious call
The Hindus, Buddhists, Sikhs, Jains, Parsis, Muslims and Christians,
The East and the West come together, to the side of Your throne
And weave the garland of love.
Oh! You who bring in the unity of the people! Victory be to You, dispenser of the destiny of India!
Victory, victory, victory to You!

The way of life is somber as it moves through ups and downs, but we, the pilgrims, have followed it through ages.
Oh! Eternal Charioteer, the wheels of your chariot echo day and night in the path
In the midst of fierce revolution, your conch shell sounds.
You save us from fear and misery.
Oh! You who guide the people through torturous path, victory be to You, dispenser of the destiny of India!
Victory, victory, victory to You!

During the bleakest of nights, when the whole country was sick and in swoon
Wakeful remained Your incessant blessings, through Your lowered but wink-less eyes
Through nightmares and fears, you protected us on Your lap,
Oh Loving Mother
Oh! You who have removed the misery of the people, victory be to You, dispenser of the destiny of India!
Victory, victory, victory to You!

The night is over, and the Sun has risen over the hills of the eastern horizon.
The birds are singing, and a gentle auspicious breeze is pouring the elixir of new life.
By the halo of Your compassion, India that was asleep is now waking
On your feet we now lay our heads
Oh! Victory, victory, victory to you, the Supreme King, victory be to You, dispenser of the destiny of India!
Victory, victory, victory to You!

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. http://www.news18.com/news/movies/bharat-bhagyo-bidhata-from-rajkahini-is-a-tagore-song-and-not-an-extended-version-of-the-national-anthem-1108614.html IBNLive.com The original Tagore song – "Not a single note of the original Rabindranath Tagore composition has been altered"
  2. Bhattacharya, Sabyasachi (২০১১)। Rabindranath Tagore : an interpretation। New Delhi: Viking, Penguin Books India। পৃষ্ঠা 206। আইএসবিএন 978-0670084555Incidentally a myth regarding this song needs to be refuted and laid to rest. It is on record that the song was written on 11 December 1911. On 12 December 1911 the Delhi Durbar met to honour King Emperor George V. Obviously a poem written on 11 December could not be intended for an event the following day. The song was actually sung at the twenty-seventh session of the Indian National Congress, Calcutta on 28 December 1911 as the opening song at the beginning of the day’s proceedings. Thereafter it was also sung at the foundation day anniversary of Adi Brahma Samaj in February 1912 and included in their collection of psalms, Brahma Sangit. 
  3. "Untitled Document"satyashodh.com 
  4. "National Anthem – National Symbols – Know India. Nation Portal of Government of India."knowindia.gov.in। ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  5. "Interesting Facts About Our National Anthem"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা