শিরক (ইসলাম)
শিরক (আরবি: شرك) বলতে ইসলাম ধর্মে, পৌত্তলিকতা বা বহুঈশ্বরবাদ চর্চা করার পাপকে বুঝায়। অর্থাৎ শিরক হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে উপাস্য হিসেবে নির্ধারিত করা বা তার উপাসনা করা। শাব্দিকভাবে এর দ্বারা এক বা একাধিক কোন কিছুকে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও কর্তৃত্বের অংশীদার সাব্যস্ত করাকে বুঝায়। এটি তাওহিদের পরিপন্থী একটি বিষয়। ইসলামে শিরক হলো একটি অমার্জনীয় অপরাধ যদি না মৃত্যু নিকটবর্তী হবার পূর্বে আল্লাহ্র নিকট এই অপরাধের জন্যে ক্ষমা চেয়ে না নেয়া হয়। ইসলামের নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুসারে, আল্লাহ্ তায়ালার কাছে ক্ষমা না চাইলেও মৃত্যুর পর নিজের বিচার অনুসারে তার ইবাদতকারীদের যে কোনো ভুল ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু শিরকের অপরাধী দুনিয়াতে ক্ষমা না চাইলে কখনোই ক্ষমা করবেন না।
আল্লাহ তায়ালা শিরকের বিপরীত তাওহিদের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন এভাবে,
বলঃ তিনিই আল্লাহ। একক/অদ্বিতীয়।
আল্লাহ্ কারও মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন,
এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই। সুরাতুল ইখলাস।
প্রকারভেদ
সম্পাদনাশিরক প্রধানত তিন প্রকার। যথা:
- আল্লাহ্র সত্তার সাথে শিরক করা (আত-তাওহিদুর রুবুবিয়াহ্র বিপরীত)। যেমন: আল্লাহ্র স্ত্রী, পুত্র, কন্যা আছে বলে বিশ্বাস করা।
- আল্লাহ্র ইবাদতে শিরক করা (আত-তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ্র বিপরীত)।
- আল্লাহ্র গুণাবলিতে শিরক করা (তাওহিদুল আসমা ওয়াস-সিফাতের বিপরীত)। যেমন: নবী, রাসুল ও আওলিয়াগণ নিজে থেকে গায়েব জানেন বলে মনে করা, কারণ গায়েবের জ্ঞান শুধু আল্লাহ্ জানেন।
তৎকালীন মক্কার মুশরিকদের অবস্থা
সম্পাদনামক্কার মুশরিকরা আল্লাহ্র অস্তিত্ব ও প্রতিপালকত্বে বিশ্বাস করতো। একইসাথে তারা বিভিন্ন মূর্তি, পাথর, গাছ, নক্ষত্র, ফেরেশতা, জিন, মৃতব্যক্তি ইত্যাদি বস্তু ও জীবের ইবাদত বা উপাসনা করতো। আল্লাহ্ ছাড়াও ঐসব দেবদেবীকে ভয়-ভীতি, আশা-আকাঙ্খার সাথে ডাকা, বিপদে তাদের কাছে সাহায্য, আশ্রয়, উদ্ধার প্রার্থনা করা এবং তাদের নামে জবাই ও মানত করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিরক করতো। কুরআনে বলা হয়েছে:
"আর তুমি যদি জিজ্ঞাসা কর, আসমানসমূহ ও যমিন কে সৃষ্টি করেছেন? তারা (মুশরিকরা) অবশ্যই বলবে, মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞই কেবল এগুলো সৃষ্টি করেছেন।"[কুরআন ৪৩:৯]
কুরআনে আরও বলা হয়েছে,
"তাদের অধিকাংশ আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস করে, তবে (উপাসনায়) শির্ক করা অবস্থায়।"[কুরআন ১২:১০৬]
মক্কার মুশরিকরা দাবি করত যে, দেবদেবীকে ডাকলে বা উপাসনা করলে এরা আল্লাহ্র নৈকট্য মিলিয়ে দেয়। কুরআনে বলা হয়েছে,
"জেনে রেখ, আল্লাহ্র জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের উপাসনা করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দেবে।’..."[কুরআন ৩৯:৩]
তারা আরও দাবি করত যে, দেবদেবীরা আল্লাহ্র দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
"আর তারা আল্লাহ্ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহ্র নিকট আমাদের সুপারিশকারী’। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ্কে আসমানসমূহ ও যমিনে থাকা এমন বিষয়ে সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন’? তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা শরিক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।"[কুরআন ১০:১৮]
কুরআনে এগুলোকে মিথ্যাচার এবং তাদের মনগড়া উদ্ভাবন বলা হয়েছে,
"অতঃপর তারা আল্লাহ্র সান্নিধ্য লাভের জন্য আল্লাহ্র পরিবর্তে যাদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, তারা কেন তাদেরকে সাহায্য করল না? বরং তারা তাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল, আর এটা তাদের মিথ্যাচার এবং তাদের মনগড়া উদ্ভাবন।"[কুরআন ৪৬:২৮]
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Zebiri, Kate (১৯৯৫)। "Relations Between Muslims and Non-Muslims in the Thought of Western-Educated Muslim Intellectuals – Islam and Christian-Muslim Relations"। Islam and Christian–Muslim Relations। 6 (2): 255–277। ডিওআই:10.1080/09596419508721055।
- আইনে শিরক ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ মে ২০১৫ তারিখে