শাহবাজ খান কামবোহ (ফার্সি: شهرالله کمبوه ১৫২৯-১১ নভেম্বর ১৫৯৯) ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি।[১][২] তিনি আকবরের বেশ কয়েকটি দুর্গম অভিযানে অংশ নেন এবং অনেক এলাকা সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। আকবরের পছন্দের তুলনায় তিনি একজন অধিক রক্ষণশীল সুন্নি মুসলিম ছিলেন। তবে প্রতি সহিষ্ণুতা দেখানো হয় এবং যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়।[৩] তাঁর কিংবদন্তি উদারতার কারণে লাহোরের জনগণ তাকে "মাঙ্গ খান" (পাঞ্জাবি: منگ خان) নামে অভিহিত করেছিল যার অর্থ "খানকে যা করতে বলুন তা করা হবে"।[৪] লাহোর দুর্গের প্রথম 'গুজার' এর নাম ছিল গুজার শাহবাজ খান (ফার্সি: گزر شاھباز خان) নামে পরিচিত ছিল।

শাহবাজ খান কামবোহ
شاهباز خان کمبوه
জন্ম
শাহবাজ খান কামবোহ

১৫২৯
মৃত্যু১১ নভেম্বর ১৫৯৯(1599-11-11) (বয়স ৬৯–৭০)
নিয়োগকারীআকবর
পরিচিতির কারণবাংলার সুবাদার
পূর্বসূরীওয়াজির খান তাজিক
উত্তরসূরীশাইখ ফরিদ বুখারী
আত্মীয়হাজী ইসমাইল কামবোহ
পরিবারকামবোহ

প্রাথমিক জীবন ও পরিবার সম্পাদনা

তার প্রকৃত নাম শাহরুল্লাহ। তিনি লাহোরের কম্বোহ বংশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার শিষ্য হাজী ইসমাইল কমবোহর ষষ্ঠ প্রজন্মের বংশধর ছিলেন।[৫] আকবরের সময়ে তিনি মুঘল সেবায় প্রবেশ করেন। সম্রাট প্রথম দর্শনেই তার বিচক্ষণতা এবং বুদ্ধিমত্তার তীক্ষ্ণতা দ্বারা খুব প্রভাবিত হন এবং তাকে মীর তোজাক (কোয়ার্টার-মাস্টার জেনারেল) এবং পরে আমির (মন্ত্রী) পদে উন্নীত করেছিলেন। তিনি একজন অত্যন্ত দক্ষ অফিসার, একজন সাহসী সৈনিক ছিলেন এবং বিভিন্ন পদে মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য ব্যাপক সেবা করেন।[৬] ১০০-এর মানসাব থেকে তিনি দ্রুত সংখ্যাটি ৫০০০-এ উন্নীত করেন। বাংলার গভর্নর হিসাবে, ব্রহ্মপুত্রে কাজ করার সময়, তিনি ৯০০০ শক্তিশালী অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

তিনি একজন অল-রাউন্ডার অফিসার ছিলেন এবং তার সামরিক দায়িত্ব ছাড়াও তিনি আকবরকে বেসামরিক প্রশাসন এবং আর্থিক বিষয়েও সহায়তা করেন। তিনি খুব ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন সঙ্গী, মীর বখশী (সামরিক বিভাগের প্রধান, রাজকীয় মন্ত্রীর পদমর্যাদাধারী) এবং আকবরের একজন ওয়াকিল (প্রধান প্রশাসক বা প্রধানমন্ত্রী) ছিলেন এবং ব্যাপক ক্ষমতা অর্জন ও প্রয়োগ করেন।তখন তাকে শাহবাজ খান নাম দেওয়া হয়। ১৫৮১ সালে সম্রাট আকবর যখন মির্জা হাকিমের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের দিকে যাত্রা করেন, শাহবাজ খান ফতেহপুরে আসেন এবং প্রায় দশ মাসের জন্য সম্রাটের অনুপস্থিতিতে তিনি রাজ্য প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন।[৭]

সেনাপতি হিসাবে সম্পাদনা

১৫৭২ সালে জেনারেল লস্কর খান মদ্যপ অবস্থায় রাজদরবারে প্রবেশ করেন এবং যে কাউকে তার সাথে যুদ্ধ করতে চ্যালেঞ্জ জানান। তার উচ্ছৃঙ্খল এবং নির্লজ্জ আচরণ মহামান্যকে এতটাই বিরক্ত করেছিল যে তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেওয়া হয়েছিল, একটি ঘোড়ার লেজের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং অবশেষে কারাগারে দেওয়া হয়।[৮] তার স্থলাভিষিক্ত হন শাহবাজ খান, যাকে সম্রাট তার মীর বকশি (পেমাস্টার-জেনারেল) বানিয়েছিলেন। তাকে শাহবাজ খান উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Aziz, Abdul (১৯৬৪)। Discovery of Pakistan (ইংরেজি ভাষায়)। Sh. Ghulam Ali। পৃষ্ঠা ৭১। 
  2. Jameil Ali Sheikh (২০০০)। Islamic Thought And Movement In The Subcontinent। পৃষ্ঠা ২৭৮। 
  3. S. R. Bakshi (১৯৯৫)। Advanced history of medieval India (1st ed সংস্করণ)। New Delhi: Anmol Publications। পৃষ্ঠা ৩৭৬। আইএসবিএন 81-7488-028-3ওসিএলসি 32677734 
  4. Sheikh, Majid (২০১৬-১০-০২)। "The 'guzar' named after great Kamboh general"DAWN.COM (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৪ 
  5. এ.এ শেখ মোঃ আসরারুল হক চিশতি (২০১২)। "শাহবাজ খান"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  6. Taher, Mohamed (১৯৯৭)। Encyclopaedic Survey of Islamic Culture (ইংরেজি ভাষায়)। Anmol Publications Pvt. Limited। পৃষ্ঠা ১১২। আইএসবিএন 978-81-7488-487-9 
  7. Devra, Ghan Shyam Lal (১৯৭৬)। "NATURE AND INCIDENCE OF ROKAD RAKAM (NON-AGRICULTURAL TAXES) IN THE LAND REVENUE SYSTEM OF THE BIKANER STATE (1650-1700 A D.)"। Proceedings of the Indian History Congress37: 190–195। আইএসএসএন 2249-1937জেস্টোর 44138932 
  8. Mukhia, Harbans (২০০৮-০৪-১৫)। The Mughals of India (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা ৯৮। আইএসবিএন 978-0-470-75815-1