শার্ঙ্গদেব (১২১০-১২৪৭)[১] ছিলেন ত্রয়োদশ শতকের একজন ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞ, যিনি সঙ্গীত ও নাটকের উপর সংস্কৃত ভাষায় সঙ্গীত রত্নাকর নামে সঙ্গীতের আকর গ্রন্থ রচনা করেন।[২] ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের হিন্দুস্থানী সঙ্গীতকর্নাটকী সঙ্গীত উভয় ধারার সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রামাণিক গ্রন্থ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[৩][৪][৫]

শার্ঙ্গদেব কাশ্মীরের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। [৬] শার্ঙ্গদেব ছিলেন সেউণ (যাদব) রাজবংশের রাজা সিংহানের (১২১০-১২৪৭) রাজসভার একজন সভা গায়ক তথা দরবারী। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ইসলামি আক্রমণের সময় এবং দিল্লি সালতানাতের শুরুতে, তার পিতামহ কাশ্মীর থেকে দাক্ষিণাত্যের ইলোরা গুহা সংলগ্ন অঞ্চলে সেউণ (যাদব) রাজবংশের হিন্দু বসতি স্থাপন করেন। রাজা সিংহানের রাজসভায় শার্ঙ্গদেব স্বাধীনভাবে সঙ্গীতচর্চা ও প্রধান হিসাবরক্ষকের কাজ করতেন।[৬] [৭][৮] অন্যদিকে তিনি ছিলেন একজন সফল আয়ুর্বেদ চিকিৎসক।।[৯]

শার্ঙ্গদেব সঙ্গীত ও নৃত্যের উপর তার ধারণা সাতটি অধ্যায়ে সঙ্গীত রত্নাকর-এ উপস্থাপন করেছেন। সেগুলি হল-

  1. স্বর্গতাধ্যায়
  2. রাগবিবেকাধ্যায় #স্থানান্তর-সঞ্চয়নের প্রচুর ব্যবহার
  3. প্রকীর্ণকাধ্যায় (সঙ্গীত পরিবেশন)
  4. প্রবন্ধাধ্যায় (সঙ্গীত রচনা, শ্লোক)
  5. তালধ্যায় (ছন্দ)
  6. বাদ্যধ্যায়​​
  7. নর্তনাধ্যায় (নৃত্য)

তিনি অধ্যায়গুলিতে উপস্থাপনায় শব্দের প্রকৃতি, নিবন্ধন, মানুষ শুনতে পায় এমন ক্ষুদ্রতম স্বতন্ত্র ধ্বনি এবং বাদ্যযন্ত্র তৈরি করতে পারে এমন সঙ্গীতের ( শ্রুতি ), বাদ্যযন্ত্রের স্কেল এবং মোড, ২৬৪টি রাগ , বীট এবং সময়ের ভূমিকা ( তাল ), ছন্দ ইত্যাদির বৈশিষ্ট্য ও প্রতিটির পদ্ধতিগত আবশ্যকীয় গুণাবলী বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।

১৪৫৬-৭৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিজয়নগরের রাজা প্রতাপদেবের নির্দেশে কল্লিনাথ সঙ্গীতরত্নাকরের উপর একটি ভাষ্য লেখেন। গ্রন্থটি ৬০০ বছর ধরে সংগীতবিদদের কাজে গুরুত্বপূর্ণ গাইড বুক হিসাবে দিশা নির্দেশের কাজ করে আসছে। শার্ঙ্গদেবের উপর দক্ষিণী সঙ্গীতের বিশেষ প্রভাব ছিল। তার বইটি হতে জানা যায় যে, ভারতে তার পূর্বসূরিদের অনেকেই দক্ষিণের সঙ্গীতশিল্পী। তবে সঙ্গীত রত্নাকরের তার প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত পদ্ধতি এখন খুব কম লোকই বোঝেন। শার্ঙ্গদেবের প্রধান সুর 'মুখারি'ও দক্ষিণী সঙ্গীতের প্রধান সুর।

প্রভাব

সম্পাদনা

ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যযুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী সঙ্গীত তত্ত্ববিদদের একজন ছিলেন শার্ঙ্গদেব। তার গ্রন্থটিকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রথম আধুনিক বই" হিসাবে গণ্য করা হয়। [৪] গ্রন্থটিকে অনেকে ভরতের নাট্যশাস্ত্রের মতোই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিউজিকোলজির অধ্যাপক সঙ্গীতজ্ঞ ডন মাইকেল রান্ডেলের মতে, শার্ঙ্গদেবের পাঠ্য পুস্তকটি সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পূর্ণ গ্রন্থ যা প্রাচীন ভারতীয় সঙ্গীত ঐতিহ্যের নাট্যশাস্ত্র এবং মাতঙ্গ মুনির 'বৃহদ্দেশী'কে ব্যাখ্যা করে। [১০][১১]

আরো দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Ananda Lal (২০০৯)। Theatres of India: A Concise Companion। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 298। আইএসবিএন 978-0-19-569917-3  line feed character in |publisher= at position 7 (সাহায্য)
  2. Mohan Lal (১৯৯২)। Encyclopaedia of Indian Literature: Sasay to Zorgot। Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 3987। আইএসবিএন 978-81-260-1221-3 
  3. Rens Bod (২০১৩)। A New History of the Humanities: The Search for Principles and Patterns from Antiquity to the Present। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 116। আইএসবিএন 978-0-19-164294-4 
  4. Reginald Massey; Jamila Massey (১৯৯৬)। The Music Of India। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 42। আইএসবিএন 978-81-7017-332-8 
  5. Vijaya Moorthy (২০০১)। Romance Of The Raga। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 18–। আইএসবিএন 978-81-7017-382-3 
  6. Reginald Massey; Jamila Massey (১৯৯৬)। The Music Of India। Abhinav Publications। পৃষ্ঠা 41–42। আইএসবিএন 978-81-7017-332-8 
  7. Ramanlal Chhotalal Mehta, Musical Musings: Selected Essays, Indian Musicological Society (1996), p. 46
  8. T. V. Kuppuswami (১৯৯২)। Carnātic Music and the Tamils। Kalinga Publications। পৃষ্ঠা vii–viii। আইএসবিএন 978-81-85163-25-3 
  9. "ভারতীয় সঙ্গীতের সারগ্রন্থ 'সঙ্গীতরত্নকর' ও তার বঙ্গানুবাদ" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-২২ 
  10. Don Michael Randel (২০০৩)। The Harvard Dictionary of Music। Harvard University Press। পৃষ্ঠা 813। আইএসবিএন 978-0-674-01163-2 
  11. Emmie te NijenhuisMusicological literature। Harrassowitz। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 978-3-447-01831-9