শামসুল হক (গাজীপুরের রাজনীতিবিদ)

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

শামসুল হক (১ মার্চ ১৯২৭ - ১৬ জুন ১৯৯৮) একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি এপ্রিল ১৯৭২ সাল থেকে মার্চ ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।[১][২][৩][৪]

শামসুল হক
বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় মন্ত্রিসভার সদস্য
কাজের মেয়াদ
এপ্রিল ১৯৭২ – মার্চ ১৯৭৩
ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য
পূর্বসূরীআসন সৃষ্টি
উত্তরসূরীআবুল কাশেম
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১ মার্চ ১৯২৭
কালিয়াকৈর উপজেলা, গাজীপুর জেলা
মৃত্যু১৬ জুন ১৯৯৮(1998-06-16) (বয়স ৭১)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
প্রাক্তন শিক্ষার্থীঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

শামসুল হক ১৯২৭ সালে ১ মার্চ বর্তমান গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধিন মধ্যপাড়া ইউনিয়ন এর ঠেঙ্গারবান্ধ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওসমান গনী, মাতার নাম হায়তন নেছা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ১৯৫২-৫৩ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের ভিপি পদে নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্কাউট দলের দলনেতা হিসেবে স্কাউটের সর্বোচ্চ খেতাব উড ব্যাচ পদক পেয়েছিলেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত হওয়ার কারণে গ্রেপ্তার হন এবং কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবন সমাপ্ত হলে একই বছর তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

তিনি ১৯৫৬ সালে ঢাকা সদর উত্তর মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ১৯৫৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগের যুগ্ন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামিদুর রহমান কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।

১৯৫৪ সালে কালিয়াকৈর জয়দেবপুর থেকে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দী থাকেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনি মোকাবিলার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে শ্রীপুর, জয়দেবপুর, কালিয়াকৈর আসন থেকে বিপুল ভোটে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চের জয়দেবপুর সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ঢাকা থেকে পিরুজালী হয়ে ৩০ শে মার্চ শ্রীপুরে শফির উদ্দিন আহমেদের সাথে জনসভা করেন। এপ্রিল মাসের ১ তারিখে তিনি শফিউদ্দিন আহমেদ ও আব্দুল হাকিম মাস্টার সহ ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। যাওয়ার পূর্বে সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহর সাথে সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। পরে তারা হালুয়াঘাট হয়ে ১১ এপ্রিল ভারতের ঢালু থানায় প্রবেশ করেন। এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে তারা আসামের কৃষি মন্ত্রী মইনুল হোসেনের সহযোগিতায় শিলং পৌছান। সেখান থেকে মে মাসের ৩ তারিখে তারা কলকাতায় গমন করেন। অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৩ সালে পুনরায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সফল স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় এবং পাট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সোভিয়েত রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ফুটবল দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি এদেশের একজন প্রবীনতম সমবায়ী। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাওয়াল মির্জাপুর হাজী জমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় এর কার্যকরী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৯৮ সালে ১৬ জুন ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. রহমান, সাইদুর। Historical Dictionary of Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা ৩০৭। আইএসবিএন 9780810874534। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৬ 
  2. "ভাষা সৈনিক মরহুম শামসুল হকের ২৩তম স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত"alokitobangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৯ 
  3. খালেদা হাবিব। বাংলাদেশঃ নির্বাচন, জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা ১৯৭০-৯১ 
  4. জিবলু রহমান। ভাসানী-মুজিব-জিয়া। বাংলাদেশ: শ্রীহট্ট প্রকাশ। পৃষ্ঠা ৪৩৬। আইএসবিএন 9789849302728