লেমন শার্ক
লেমন শার্ক (ইংরেজি: Lemon shark; বৈজ্ঞানিক নাম: Negaprion brevirostris) বা লেবু হাঙর কারকারিনিডি (Carcharhinidae) গোত্রের অন্তর্গত এক প্রজাতির হাঙ্গর। এরা ১০ ফুট (৩.০ মিটার) পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের লেমন শার্ক বলার কারণ- সমুদ্রের পানিতে আলো পড়লে এদের রং অনেকটা পাকা কমলালেবুর মত হলুদ মনে হয়।
লেমন শার্ক | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | Chondrichthyes |
উপশ্রেণী: | Elasmobranchii |
বর্গ: | Carcharhiniformes |
পরিবার: | Carcharhinidae |
গণ: | Negaprion |
প্রজাতি: | N. brevirostris |
দ্বিপদী নাম | |
Negaprion brevirostris (Poey, 1868) | |
লেমন শার্কের বিস্তৃতি | |
প্রতিশব্দ | |
Carcharias fronto Jordan & Gilbert, 1882 |
বিচরণ
সম্পাদনাআটলান্টিক মহাসাগর, মেক্সিকো উপসাগর, বাহামা এবং ক্যারিবিয়ানের মধ্যে এদের পাওয়া যায়। তাছাড়া দক্ষিণ বাজা ক্যালিফোর্নিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, ইকুয়েডর, প্রশান্ত মহাসাগরেও দেখতে পাওয়া যায়। লেমন শার্ক সাধারণত অগভীর জলে বাস করে। নদীর মোহনা এলাকায়, উপসাগরীয় অঞ্চলে, মিঠা পানিতে এমন কি ম্যানগ্রোভ এলাকাতেও এদের দেখা যায়।
নামকরণ
সম্পাদনাপোয়ি সর্বপ্রথম ১৬৬৮ সালে নতুন প্রজাতি হিসেবে লেমন শার্ক শনাক্ত করেন। তিনি এর নাম দেন Hypoprion brevirostris। পরে এর পুনঃনামকরণ করা হয় Negaprion brevirostris।
বিভিন্ন দেশে লেমন শার্কের নামগুলো হলঃ লেমন শার্ক (ইংরেজি), সিত্রোঁ (ফ্রান্স), তিবুরোন গালানো (স্পেন), স্কালো লিমোনে (ইতালি), জিৎরোনেনহাই (জার্মানি), কাকো-লিমাও (ব্রাজিল), সেক (সেনেগাল), সিত্রোনেনহাই (নেদারল্যান্ড), গালানো (কিউবা), লিমোন (মেক্সিকো), রেকিয়াম (যুক্তরাজ্য), তিবুরোন আমারিইয়ো (ইকুয়েডর) এবং তুবারাও-লিমাও (পর্তুগাল)।
গঠন
সম্পাদনালেমন শার্ক বেশ বড় আকারের গাট্টাগোট্টা হাঙর। এটি বড় হাঙরগুলোর মধ্যে একটি। এদের গড় দৈর্ঘ্য ৯৫-১২০ ইঞ্চি (২৪০-৩০০ সেমি)। বছরে এদের বৃদ্ধির হার ০.২১ ইঞ্চি। এ প্রজাতির হাঙ্গর খুব বেশি বাড়লে ১৩৫ ইঞ্চি (৩৪৩ সেমি) পর্যন্ত হতে পারে। সদ্যোজাত হাঙরের দৈর্ঘ্য মাত্র ২ ইঞ্চি। এদের লম্বিত নাক গোলাকৃতির এবং মুখের তুলনায় ছোট হয়। এ হাঙ্গরের দুটি পৃষ্ঠীয় পাখনা (Dorsal Fins) একই আকারের। এদের বক্ষীয় পাখনা ( Pectoral Fin) অনেকটা কাস্তের মতো বাঁকা হয় এবং এদের শ্রোণী পাখনা অনেকটা খিলানাকৃতির হয়।
এদের পৃষ্ঠদেশ হলদে-বাদামি বা জলপাই রঙের। দেহতল হালকা হলুদ। লেমন শার্কের উপরের দাঁত বেশ সংকীর্ণ, ত্রিকোণাকার ও মসৃণ। মুখের কোণার দাঁত গুলো বাকানো থাকে। এদের নিচের দাঁত গুলোও উপরের গুলোর মত সংকীর্ণ, ত্রিকোণাকার ও মসৃণ হয়।
লেমন শার্ক খাবারের খোঁজে বালি ও কাদামাটি ঘেঁটে বেড়ায়। এদের খাবার তালিকায় আছে ক্যাটফিস, মুলেট, শজারু মাছ এবং চিংড়ি।
আধুনিক কালে বিজ্ঞানীর দেখেছেন বড়দের দেখেই অনেক কিছু শিখে নেয় লেমন শার্ক। একটি বাচ্চা হাঙ্গর দিয়ে এই পরীক্ষা করেন ওই বিজ্ঞানীদল। হাঙ্গরটিকে প্রথমে একটি অভিজ্ঞ এবং পরে একটি অনভিজ্ঞ হাঙ্গরের সঙ্গে রাখা হয়। দেখা যায়, তুলনামূলক অভিজ্ঞ হাঙ্গরের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে নিচ্ছে বাচ্চা হাঙ্গরটি খুব সহজেই। এমনকি লেমন শার্করা একে অন্যের ইঙ্গিত বুঝতে পারে।
প্রজনন
সম্পাদনাঅগভীর জলে বসন্ত কালে এদের প্রজনন ঘটে এবং এদের গর্ভকাল সময়সীমা ১০-১২ মাস। গর্ভবতী হাঙ্গর সেপ্টেম্বরে সন্তান জন্ম দেয়। বাচ্চা হাঙ্গর বেশ কয়েক বছর মায়ের সাথে থাকে। জন্মের সময় এদের আকার হয় ২৪-২৬ ইঞ্চি। শুরুর দিকে বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে।
মানুষের উপর আক্রমণ
সম্পাদনালেমন শার্ক কখনও কখনও মানুষের উপর হামলা চালায়। International Shark Attack File-এর হিসাব মতে লেমন শার্ক কর্তৃক কেবলমাত্র ২২টি হামলার কথা জানা গেছে। এতে অবশ্য কারও মৃত্যু হয়নি। এসব হামলার বেশিরভাগ ঘটেছে ফ্লোরিডা এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জতে। এই প্রজাতির কোনো মারাত্মক হামলার কথা এখনো শোনা যায় নি।
গুরুত্ব
সম্পাদনাবাণিজ্যিক কারণে আটলান্টিক মহাসাগরে লেমন শার্ক ব্যাপক হারে নিধন করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এর পাখনা অনেক বেশি দামে বিকোয়। এশিয়ার অনেক দেশে এর পাখনা রপ্তানি করা হয় স্যুপ বানানোর জন্য। অনেকে এদের চামড়ার জন্য এদের শিকার করে। এছাড়া হাঙ্গর নিয়ে গবেষণার কাজে লেমন শার্ক ব্যবহার করা হয়।
সংরক্ষণ
সম্পাদনাআইইউসিএন লাল তালিকায় এদের প্রায়-বিপদগ্রস্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাণিজ্যিক শিকার এদের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অনেক সংগঠন এদের বাঁচানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
চিত্রশালা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Sundström, L.F. (2005). Negaprion brevirostris. IUCN Red List of Threatened Species. Version 2011.1. International Union for Conservation of Nature. Retrieved 20 August 2011.