লীনা আলম

আফগান অভিনেত্রী

লীনা আলম (ফার্সি: لينا علم) হচ্ছেন একজন আফগান চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী যিনি আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাবুলি কিড, লুরি, এবং মুভিং ইন এ সার্কেল। তিনি আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণ করেছেন। শিরীন (شیرین) নামে একটি নিষিদ্ধ-মর্মান্তিক নারীবাদী চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পর তিনি তার দেশে "আফগানিস্তানের শিরীন" (شیرین افغانستان) নামেও পরিচিতি লাভ করেন। এই চলচ্চিত্রটি গাফর আজাদ পরিচালনা করেছেন এবং কাবুরা ও তলো টিভি প্রযোজনা করেছে।

লীনা আলম
লীনা আলম ২০১৬ সালে
জন্ম
লীনা আলম

পেশাঅভিনেত্রী, সমাজকর্মী
কর্মজীবন১৯৯৮ – বর্তমান

১৯৮৯ সালে, আলম এবং তার পরিবার তাদের মাতৃভূমিতে সংগঠিত গৃহযুদ্ধের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এই গৃহযুদ্ধটি ১৯৮৯ সালে শুরু হয়ে ১৯৯২ সালে গিয়ে শেষ হয়েছিল। অতঃপর গৃহযুদ্ধের প্রায় ৬ বছর পর, ১৯৯৮ সালে লীনা আলম অভিনয়ে এবং চলচ্চিত্রে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।

ক্যারিয়ার সম্পাদনা

সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনা

২০০৯ সালে, লীনা আলম আফগানিস্তানের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা মিশনের (ইউএনএএমএ) একজন "শান্তি দূত" হিসেবে কাজ করেছেন।

ফরখুন্দার ৪০ দিন পর, একজন ২৭ বছর বয়সী আফগানিস্তানের নারীর ওপর পবিত্র কুরআনের একটি কপি পুড়িয়ে ফেলার আরোপ করা হয়েছিল, যেটা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। উক্ত নারীকে জনসম্মুখে নির্মমভাবে মারা হয় এবং তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল।[১] ২০১৫ সালের ১৯ মার্চে, লীনা আলম কাবুলেথাকা কিছু কর্মীদের সাথে যোগদান করেন এবং তাদেরকে নিয়ে উক্ত ঘটনার একটি নাটক তৈরি করেন। তিনি উক্ত নাটকে ফরখুন্দার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি রিপোর্টে তার সম্পর্কে বলে:

উক্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি বা নাটকটি পরিবেশনের সকালে, মিসেস আলম (এখানে লীনা আলমকে বোঝানো হয়েছেন) যখন ঘুম থেকে উঠেছিলেন তখন তিনি তার পেটের ওপর একটি প্রজাপতি দেখতে পান। যদিও তিনি একজন খুবই অভিজ্ঞ অভিনেত্রী, তিনি বলেন যে, এই চরিত্রটি প্রতিপাদন করা বা অভিনয় করা তার জন্য খুবই কষ্টকর হপ্যে উঠবে। যেকোনো একটি বিষয়ের জন্য, মিসেস আলম ফরখুন্দার সমাধিতে উপস্থিত একজন শোকার্ত বা শবানুগমনকারী ছিলেন, এবং সেটাই ছিল তার দেখা প্রথম সত্যিকারের মৃতদেহ। তিনি এর পূর্বে কখনোই কোনো মৃতদেহ দেখেননি। তিনি বলেন [...]

তিনি এবং তার সাথে কিছু অভিনেতা একত্রে রাজি হন যে তারা যখন অভিনয় করবেন তখন কেউ কান্না করবে না, কিন্তু সেই নাটকের রিহার্সালের সময়, তারা সকলেই কান্নায় ফেটে পড়েন। তিনি বলেন যে, "শ্রমিকগণ, আমার পরিচালক, সবাই, আমরা সবাই পাগল"। একজন ব্যক্তি কান্নাকাটি করায় তখন তিনিও কান্নাকাটি করেন। তিনি আরো বলেন: "আমি সকলকে বলেছিলাম, 'আমাকে তোমরা দুর্বল করে তুলো না, আমি চাই না যে আমি কান্নাকাটি করি।"

উক্ত নাটকের সময়, তার সাথে থাকা কিছু অভিনেতাগণ নাটকের একেবারে ভেতরে ঢুকে পড়েন। যদিও উক্ত নাটকে ব্যবহৃত তৈজসপত্রগুলো ফোমের তৈরি ছিল, কিন্তু সেই নাটকের সকল ঘাত প্রতিঘাতে তারা চেহারা দংশন হচ্ছিল। সেখানে তিনি একটু থেঁত হয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত দর্শকেরা হাঁপাইতে হাঁপাইতে বলছিল এটা একেবারে সত্যি বলে মনে হচ্ছে, এমনকি সেখানে উপস্থিত কিছু পুলিশের কর্মকর্তাও তাদের নাটক দেখে কান্না করে দিয়েছিলেন।[২]

পুরস্কারসমূহ সম্পাদনা

  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী – কাবুল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ২০০৮
  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী – তলো চলচ্চিত্র উৎসব, ২০০৯
  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী – আফগানিস্তান মানবাধিকার চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৩
  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী – নেগাহ-এ-নো চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৪
  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী (সম্মানসূচক) – হেরাত আন্তর্জাতিক নারী চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৪
  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী – নেগাহ-এ-নো চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৫
  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী – মেহেরগান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৫
  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী – হেরাত আন্তর্জাতিক নারী চলচ্চিত্র উৎসব, ২০১৫
  • বর্ষসেরা অভিনেত্রী - মনোনীত, সিউল আন্তর্জাতিক নাটক পুরস্কার ২০১৬
  • আফগান চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য সম্মানসূচক পুরস্কার - দ্য আফগান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, সুইডেন ২০১৭

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Goldstein, Joseph; Shakib, Ahmad (২০১৫-০৩-২০)। "A Day After a Killing, Afghans React in Horror, but Some Show Approval"The New York Timesআইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-২৩ 
  2. Nordland, Rod (২০১৫-০৪-২৭)। "Tears Replace Cheers in Re-enactment of Farkhunda's Killing in Afghanistan"The New York Timesআইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা