লাবড়া বা লাফরা বাঙালি হিন্দুদের বিশেষত পূর্ববঙ্গীয় হিন্দু সমাজের প্রচলিত জনপ্রিয় নিরামিষ ব্যঞ্জনের অন্যতম একটি ব্যঞ্জন। শব্দটি অলাবু থেকে লাবু, এবং এর সাথে 'ড়া' যুক্ত হয়ে লাবড়া শব্দটি এসেছে। ((তৎসম বা সংস্কৃত) অলাবু>লাবু+ড়া>)।[১] লাবড়া শব্দটি পূর্ববঙ্গীয় হিন্দুরা মূলত ব্যবহার করত[২], তবে এখন লাবড়াই বেশি পরিচিত।

লাবড়া বা লাফরা
লাবড়া
প্রকারসহযোগী - পরিবেশন পদ
উৎপত্তিস্থলঅবিভক্ত বাংলার পূর্ববঙ্গীয় হিন্দু সমাজে
পরিবেশনঘরের তাপমাত্রা
প্রধান উপকরণমিষ্টি কুমড়ো, লাল আলু (রাঙালু), আলু, মান, কাঁচকলা, বিচেকলার থোড়, গর্ভমোচা, বেগুন ও সিম

বৈষ্ণব সাহিত্যে এই ব্যঞ্জনের উল্লেখ পাওয়া যায়। চৈতন্যচরিতামৃততে মধ্যলীলার ষষ্ঠ ও দ্বাদশ পরিচ্ছেদে লাফরার উল্লেখ আছে। চৈতন্যদেব পূর্ববঙ্গীয় হিন্দু হওয়ায় তার খুব প্রিয় ছিল লাফড়া।[৩] সত্তর দশকেও বাঙালি হিন্দু বিয়েতে লাবড়ার প্রচলন ছিল।[২] এখন আর বিয়েবাড়িতে লাবরার চল নেই। তবে বিভিন্ন ঠাকুর বাড়িতে নিরামিষ ভোগ হিসাবে এবং বাঙালি হিন্দুর ঘরোয়া রান্নায় এটি প্রচলিত ব্যঞ্জন।

উপকরণ ও রন্ধন পদ্ধতি সম্পাদনা

মিষ্টি কুমড়ো, লাল আলু (রাঙালু), আলু, মান, কাঁচকলা, বিচেকলার থোড়, গর্ভমোচা, বেগুন ও সিম এই সবজি গুলো তেল ও হালকা মশলা দিয়ে রান্না করা হয়।[৪]

বৈষ্ণব সাহিত্যে উল্লেখ সম্পাদনা

চৈতন্যচরিতামৃততে মধ্যলীলার ষষ্ঠ পরিচ্ছেদে লাফারার উল্লেখ পাওয়া যায়।

অর্থাৎ সার্ব্বভৌম যখন চৈতন্যদেবকে খাবার পরিবেশন করছিলেন তখন প্রভু অর্থাৎ চৈতন্যদেব তাকে লাবড়া দেওয়ার কথা বলেন।[৩][৪]

চৈতন্যচরিতামৃততে মধ্যলীলার দ্বাদশ পরিচ্ছেদে আবারও লাবড়ার উল্লেখ পাওয়া যায়

নবদ্বীপের ঠাকুরবাড়িতে লাবড়া সম্পাদনা

লাবড়া পূর্ববঙ্গীয় হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং নবদ্বীপ পূর্ববঙ্গীয় হিন্দু অধ্যুষিত হওয়ার দরুন নবদ্বীপের ঠাকুরবাড়িতে ভোগ হিসাবে এই খাবারের জনপ্রিয়তা ভীষণ। চৈতন্যদেব নিজে পূর্ববঙ্গীয় হওয়ায় তিনিও খুব ভালোবাসতেন। চৈতন্যচরিতামৃতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়।[৩]

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. suvasishpaul.com। "বাংলা টু বাংলা অভিধান"। ২৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. আনন্দবাজার পত্রিকা (১ ডিসেম্বর ২০১৩)। "রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন- সাদা কাক" 
  3. চৈতন্যচরিতামৃত 
  4. রায়, প্রণব (১৯৮৭)। বাংলার খাবার। কলকাতা: সাহিত্যলোক।