রামকেলি মেলা[১] হল হিন্দুধর্মের একটি তীর্থযাত্রা ও উৎসব। এই মেলা উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা রামকেলিতে আসেন।[২] সাধারণ রামকেলি মেলা প্রতি বছর আয়োজিত হয়। রামকেলি "গুপ্ত বৃন্দাবন"[৩] হিসাবে পরিচিত, যা বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নিকট গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র।[৪]

রামকেলি মেলা
অবস্থাসক্রিয়
ধরনমেলা, ধর্মীয় সমাবেশ
পুনরাবৃত্তিপ্রতি বছর
ঘটনাস্থলরামকেলি গ্রাম
অবস্থান (সমূহ)মালদা জেলা, পশ্চিমবঙ্গ
স্থানাঙ্ক২৪°৫৩′২২″ উত্তর ৮৮°০৭′৪৩″ পূর্ব / ২৪.৮৮৯৪৪৯৮° উত্তর ৮৮.১২৮৭০৬১° পূর্ব / 24.8894498; 88.1287061
দেশভারত
পূর্ববর্তী ঘটনা২০২২
পরবর্তী ঘটনা২০২৪

মেলাটি প্রতি বছর জৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে শুরু হয়,[৫] এবং ৭ দিনব্যাপী চলে।[২] এটি মালদা জেলার বৃহত্তম ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ মেলা ও ধর্মীয় সমাবেশ।

ইতিহাস সম্পাদনা

মহাবৈষ্ণব হিসাবে পরিচিত রূপ গোস্বামীসনাতন গোস্বামী গৌড়ের শাসক হুসেন শাহরের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাঁরাই ১৫০৯ খ্রীষ্টাব্দে রামকেলিতে মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মহাপ্রভূ চৈতন্যদেব বৃন্দাবন যাত্রাকাল দুই মহাবৈষ্ণব রূপ গোস্বামী ও সনাতন গোস্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন জৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে রামকেলি গ্রামে মদনমোহন মন্দির সংলগ্ন কেলিকদম্ব ও তমাল গাছের তলে সাক্ষাৎ করেছিল।[৩] মহাপ্রভূ ও রূপ-সনাতনের এই মিলন দিনকে ঘিরেই রামকেলিতে গত ৫০০ বছরের অধিক সময় ধরে উৎসব বা মেলা হয়ে আসছে।[২][৬][৭]

সময় ও অবস্থান সম্পাদনা

সময় সম্পাদনা

রামকেলি মেলা সাধারণত ১৫ জুন জ্যৈষ্ঠ সংক্রান্তিতে চৈতন্যদেবের আগমন উপলক্ষে আয়োজিত হয়।[৩][৫] প্রথা অনুযায়ী, মহৎ উৎসব তিন দিন ধরে চলে, এবং মেলা ৭ দিন ধরে চলে।[২]

অবস্থান সম্পাদনা

রামকেলি মেলাটি রামকেলি গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়,[৮] যেটি মধ্যযুগীয় বাংলার রাজধানী গৌড় শহরের এলাকার অন্তর্গত[৩] এবং ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের নিকটবর্তী। স্থানটি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার অন্তর্গত। মদনমোহন মন্দিরকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়।[৩]

আচার অনুষ্ঠান সম্পাদনা

কীর্তন সম্পাদনা

মেলার প্রথম দিন থেকে কীর্তন উৎসব শুরু হয়, এবং তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে। এই উৎসবে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা যোগদান করে। বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীগণ কীর্তন উৎসবে উপস্থিত হন। রামকেলি গ্রাম জুড়ে বৈষ্ণব-বৈষ্ণবীদের প্রচুর আখড়াও তৈরি করা হয়।[২]

মাতৃ পিণ্ডদান সম্পাদনা

সাধারণত হিন্দুধর্মে পিতৃ পিণ্ডদান করা হয়। কিন্তু, রামকেলি মেলায় মাতৃ পিণ্ডদানের প্রথা রয়েছে, এবং মহিলারাই মাতৃ পিণ্ডদান করেন। বিহার, ঝাড়খণ্ডওড়িশা থেকে মহিলা ভক্তরা উপস্থিত হন, এবং তাঁরা মাতৃ পিণ্ডদান করেন। মাতৃ পিণ্ডদানের কার্যক্রম সকাল ৫ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চলে।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মিত্র ১৯৫৮, পৃ. ৮ ও ১০।
  2. "পয়লা দিনেই সরগরম মালদহের প্রাচীন রামকেলি মেলা"www.anandabazar.com। Malda: Anandabazar Patrika। ১৫ জুন ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  3. মিত্র ১৯৫৮, পৃ. ৮।
  4. মিত্র ১৯৫৮, পৃ. ১০।
  5. Roy, Avijit (১৪ জুন ২০২৩)। "Ramkeli Mela to start in Gour on June 15"www.millenniumpost.in। MillenniumPost। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  6. "Ramkeli – the Vaishnava heartland of Bengal famous for devotional fair"www.getbengal.com (ইংরেজি ভাষায়)। Get Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  7. Mitra, Anamika (১৩ জুন ২০২২)। "রামকেলি মহোৎসব: রয়েছে কোন মাহাত্ম্য, প্রচলিত কাহিনি কী ?"bangla.hindustantimes.com। Hindustantimes Bangla। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২৩ 
  8. "Ramkeli, Malda District, India"malda.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২৩ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা