রক্তদহ নদী বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি নদী।[] এই নদীর একাংশকে বিলের মতো দেখায় এবং এটি অন্যতম বৃহৎ বিল। এটি নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত।[] তেরটি খাল ও অন্যান্য জলপথ রক্তদহ বিলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। ।[][]

রক্তদহ নদী (রক্তদহ বিল)
দেশ বাংলাদেশ
অঞ্চল রাজশাহী বিভাগ
জেলা নওগাঁ জেলা
উৎস তুলসীগঙ্গা নদী
মোহনা গুড় নদী
 - স্থানাঙ্ক ২৪°৩৭′২৫″ উত্তর ৮৮°৫৯′৩৫″ পূর্ব / ২৪.৬২৩৫৯৯৯° উত্তর ৮৮.৯৯২৯৯২৭° পূর্ব / 24.6235999; 88.9929927
দৈর্ঘ্য ১৫ কিলোমিটার (৯ মাইল)

ইতিহাস

সম্পাদনা

ফকির মজনু শাহ এখান থেকেই সশস্ত্র অনুচরসহ প্রায় প্রতি বছর তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকারভুক্ত বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতেন। প্রধানত বিহারের পানিয়া অঞ্চল এবং বাংলার রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও ময়মনসিংহ জেলা ছিল তার অভিয়ানের অঞ্চল। ১৭৮৬ সালের আগস্ট মাসে বগুড়া থেকে ৩৫ মাইল দূরবর্তী এক স্থানে লেফটেন্যান্ট আইন শাইনের সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে , এ স্থানটি আদমদীঘি থানার রক্তদহ বিল। এখানে ব্যাপক ইংরেজ সৈন্য হতাহত হয়েছিল এবং রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল বলে সে সময় এর নাম রাখা হয় রক্তদহ বিল।[] রক্তদহ বিলে ফকির বাহিনীর একজন শাহাদত প্রাপ্ত মুজাহিদ শায়িত আছেন। এই রক্তদহ মাজারটি স্থানীয় ভাবে ‘রক্তদহ দরগা’ নামে পরিচিত

আরেকটি যুদ্ধে মজনু শাহ ও ইংরেজ সৈন্যদের মাঝে যুদ্ধে প্রচুর লোক হতাহত হওয়ায় বিল ভোমরার পানি রক্তের জোয়ারে লাল রং ধারণ করে সেই থেকে বিল ভোমরা ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল নাম ধারণ করে আসছে। ঐ যুদ্ধে মজনু শাহ এর একজন শীর্ষ সহযোগী শহীদ হন। তার লাশ ঐ বিলের মধ্যেই একটু উঁচু স্থানে দাফন করা হয়। সেখানে একটি বটগাছ সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে। []

রক্তদহ নদীর উৎপত্তি সান্তাহার পৌরসভায় প্রবাহিত তুলসীগঙ্গা নদীর বাম দিকের প্রবাহ থেকে। অতপর নদীটি বগুড়া নওগাঁ মহাসড়ক অতিক্রম করে সান্তাহার স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে কায়েতপাড়া গিয়ে রামখাল নদীর প্রবাহ গ্রহণ করে রক্তদহ বিলে পৌঁছে। রক্তদহ বিলের প্রাথমিক অন্তর্প্রবাহ ৪৬টি নদ নদী।[] এর পৃষ্ঠতল অঞ্চল ২৬ বর্গকিলোমিটার এবং গড় গভীরতা ২ মিটার এবং সর্বাধিক গভীরতা ৪ মিটার।

বগুড়ার আদমদীঘির ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল ফাল্গুনের শুরুতে চারপাশে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়। প্রায় ৯শত একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃতি এ বিলে একসময় পানি পরিপূর্ণ হয়ে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এ বিল থেকে এলাকায় মাছের চাহিদা পূরণ করে বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার দক্ষিণ পূর্ব এলাকার মাছের চাহিদা পূরণ হতো। এ বিলে বোয়াল, চিতল, আইড়, গজার, পবদাসহ মাছের সুক্ষাতি আজও ছড়িয়ে রয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এনজিও সংস্থা ব্র্যাক এই বিলের সংস্কার ও মাছ চাষের দায়িত্ব গ্রহণ করে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. ম ইনামুল হক, বাংলাদেশের নদনদী, অনুশীলন ঢাকা, জুলাই ২০১৭, পৃষ্ঠা ১৬৯।
  2. ফারুক, ওমর (২০২৩-১০-১৩)। "অপরূপ রক্তদহ বিল"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০১-৩০ 
  3. Srinivasan, Roopa; Tiwari, Manish; Silas, Sandeep (২০০৬)। Our Indian Railway: Themes in India's Railway History। New Delhi: Foundation Books। আইএসবিএন 81-7596-330-1। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-২৯ 
  4. মোহা. শামসুল আলম এবং মোঃ সাজ্জাদ হোসেন (২০১২)। "চলন বিল"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  5. "রাণীনগর উপজেলা"তথ্য বাতায়ন। ২০১৯-০৮-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৮-১৫