যোসেফ গাবচিক
যোসেফ গাবচিক (Jozef Gabčík) (৮ এপ্রিল, ১৯১২ - ১৮ জুন, ১৯৪২) একজন চেক সৈনিক, নাজিবিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্য। তিনি ১৯৪২ সালে থার্ড রাইখ প্রোটেকটর রেইনহার্ড হেড্রিককে হত্যার ষড়যন্ত্র, অপারেশন এনথ্রপয়েড এর সাথে যুক্ত ছিলেন।
জোসেফ গাবচিক | |
---|---|
জন্ম | ৮ এপ্রিল, ১৯১২ রাজেকফুরদো, অস্ট্রিয়া হাংগেরী, বর্তমান স্লোভাকিয়া |
মৃত্যু | ১৮ জুন, ১৯৪২ (৩০ বছর) সেন্ট সিরিল চার্চ, প্রাগ, (অধুনা চেক প্রজাতন্ত্র) |
আনুগত্য | চেকোস্লোভাকিয়া ইংল্যান্ড |
সেবা/ | চেকোস্লোভাকিয়ান সেনাবাহিনী |
কার্যকাল | ১৯৩৯–৪২ † |
পদমর্যাদা | স্টাফ সার্জেন্ট |
ইউনিট | স্পেশাল অপারেশন এক্সিকিউটিভ |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ *অপারেশন এনথ্রপয়েড |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনা১৯১২ সালে স্লোভাকিয়ার তদানীন্তন অস্ট্রিয়া হাংগেরি প্রদেশে জিলিনা জেলার পলুভসি'তে জন্মগ্রহণ করেন যোসেফ গাবচিক। তিনি বোহেমিয়ার কোস্টেলেক ন্যাড ভ্ল্যাটভউ গ্রামে কর্মকার ও ঘড়ি তৈরীর কাজ শিখেছিলেন। কামারশালার কাজ শিকতে তিনি স্থানীয় গ্রামের কর্মকার যে কুনিকের কাছে থাকতেন। ১৯৩৯ সালের আগে জিলিনার এক রাসায়নিক কারখানাতে কাজ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটেনে পালান এবং সেখানে প্যারাট্রুপারের প্রশিক্ষন নেন। কলমন্দলে দুর্গে, চেকোস্লোভাকিয়ার মুক্তি বাহিনীর একটি ইউনিট ব্রিটেনে চেক তরুনদের প্রশিক্ষন দিতো। এই সময় তার বন্ধু জ্যান কুবিশও তার সাথে প্রশিক্ষন নেন।
রেইনহার্ড হেড্রিক হত্যা
সম্পাদনা২৮ ডিসেম্বর, ১৯৪১ সালে রাত ১০ টায়, যোসেফ গাবচিক ও জ্যান কুবিশ প্যারাট্রুপারে এসে নামেন চেকোস্লোভাকিয়া। তাদের সাথে চেক গেরিলাবাহিনীর আরো সাতজন ব্রিটেন থেকে আসেন। চেকোস্লোভাকিয়ায় নাৎসি পার্টির অন্যতম প্রধান রেইনহার্ড হেড্রিককে হত্যার উদ্দেশ্যে তাদের এই অভিযানের নাম ছিল অপারেশন এনথ্রপয়েড। প্রাগ শহরে অনেকগুলি পরিবার ও নাৎসি বিরোধী জনগণ তাদের গোপনে সাহায্য করেন। ১৯৪২ সালের ২৭ মার্চ হেড্রিকের হিটলারের সাথে দেখা করার কথা ছিল। জার্মান দলিল অনুযায়ী আডলফ হিটলার তার বিশ্বস্ত হেড্রিককে জার্মান দখলীকৃত ফান্সের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন। ড্রেসডেন-প্রাগ রোড ও ট্রোজা ব্রিজের সংযগস্থলে হেড্রিককে আক্রমনের পরিকল্পনা করেন বিপ্লবীরা। এই রাস্তায় ট্রাম স্টপেজে, বুলোভকা হসপিটালের কাছে যোসেফ গাবচিক হেড্রিকের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির সামনে চলে আসেন ও গুলি করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার স্টেনগান বন্ধ হয়ে গেলে হেড্রিক গাড়ি থামিয়ে নিজেই পাল্টা গুলি করতে যান আক্রমনকারীকে কিন্তু কুবিশ এইসময় কামান বিধ্বংসী একটি শক্তিশালী গ্রেনেড ছোঁড়েন তার গাড়ি লক্ষ করে। বোমাটি গাড়ির ভেতর না পড়লেও গ্রেনেডের টুকরোতে হেড্রিক মারাত্মক আহত হন ও ড্রাইভার ক্লেইনকে আদেশ দেন আক্রমনকারীদের ধরবার জন্যে। ক্লেইন ধরতে গেলে গাবচিক তাকে গুলি চালিয়ে আহত করেন। এই ঘটনায় কুবিশ নিজেও ঘাতক গ্রেনেডের টুকরোয় আঘাত পান। গাবচিক ও কুবিশ আহত অবস্থায় পলায়নে সক্ষম হন। বুলোভকা হসপিটালে হেড্রিককে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা, ফুসফুস, কন্ঠার হাড়, ইত্যাদি নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ডাক্তারেরা অপারেশন করার চেষ্টা করেন ও তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। হিমলার তাকে দেখতে আসেন ২ জুন। হিমলারের আদেশে হিটলারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক, থিওডর মোরেল, কার্ল গেভারডথ তার চিকিৎসা করতে প্রাগে আসেন। ৪ জুন হেডারিক মারা যান।[১][২]
মৃত্যু
সম্পাদনাপ্রাগ শহরের রেসলোভা স্ট্রীটের সেন্ট সিরিল চার্চে যোসেফ গাবচিক ও জ্যান কুবিশকে খুজে পাওয়া যায়। তারা অনেকের সাথে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। চেকোস্লোভাকিয়ান বিপ্লবী দলের কারেল কুর্ডা'র বিশ্বাসঘাতকতায় নাৎসি সেনারা তাদের অবস্থান জেনে নেয়। ১৯৪২ এর ১৮ জুন এস এস ট্রুপস এর সাথে দীর্ঘ ছয় সাত ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে কুবিশ জখম অবস্থায় ধরা পড়েন ও হসপিটালে মারা যান। গাবচিক, যোসেফ ভালচিক, ওপেলকা সহ বাকি বিপ্লবীরা আরো চার ঘণ্টা লড়াই করেন ও জীবিত অবস্থায় ধরা দেবার পরিবর্তে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। এই যুদ্ধে ১৪ জন জার্মান মৃত ও ২১ জন ঘায়েল হয়। হেডারিক হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে নাজী সেনারা বিপ্লবীদের পরিচিত, আত্মীয়, অল্প পরিচিত মোট ২৪ টি পরিবারকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠায় ও হত্যা করে। ১৩০০০ হাজার মানুষকে সর্বমোট গ্রেপ্তার করে অত্যাচার করা হয়। জ্যান কুবিশের প্রেমিকা আনা মলিনোভাকে মাউথআউসেন-গুসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয় ও মেরে ফেলা হয়।[৩][৪]
চলচ্চিত্র
সম্পাদনা২০১৬ সালে অপারেশন এনথ্রপয়েডের ঘটনা নিয়েহলিউড চলচ্চিত্র 'এনথ্রপয়েড' নির্মিত হয়। এই সিনেমায় যোসেফ গাবচিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিললিয়ান মার্ফি।[৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Seven Men At Daybreak (১৯৮৩)। Burgess, Alan [1960]। New York: Bantam Books। পৃষ্ঠা ১৬০। আইএসবিএন 978-0-55323-5-081।
- ↑ Assassination: Operation ANTHROPOID, 1941–1942 (২০০২)। Burian, Michal; Knížek, Aleš; Rajlich, Jiří; Stehlík, Eduard। Prague: Ministry of Defence of the Czech Republic। আইএসবিএন 978-8-07278-1-584।
- ↑ Reinhard Heydrich: Assassination (১৯৯৪)। Cowdery, Ray R.; Vodenka, Peter। Lakeville, MN, USA: Victory WW2 Publishing Ltd.। আইএসবিএন 978-0-91066-7-425।
- ↑ "Poprava 262 spolupracovníků parašutistů v Mauthausenu 24. 10. 1942 - 74 let"। fronta.cz (in Czech)। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০১৭।
- ↑ "ANTHROPOID (2016)"। historyvshollywood.com। ১১ জুন, ২০১৭।