য়ে-শেস-দ্পাল-'ব্যোর

য়ে-শেস-দ্পাল-'ব্যোর (তিব্বতি: ཡེ་ཤེས་དཔལ་འབྱོར་ওয়াইলি: ye shes dpal ’byor) (১৭০৪-১৭৮৮) তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের দ্গে-লুগ্স ধর্মসম্প্রদায়ের তৃতীয় সুম-পা-ম্খান-পো উপাধিধারী বৌদ্ধ লামা ছিলেন।

প্রথম জীবন

সম্পাদনা

য়ে-শেস-দ্পাল-'ব্যোর ১৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের আমদো অঞ্চলের থো-লি (ওয়াইলি: tho li) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল র্দো-র্জে-ব্ক্রা-শিস (ওয়াইলি: rdo rje bkra shis) এবং মাতা ব্ক্রা-শিস-ম্ত্শো (ওয়াইলি: bkra shis mtsho) জাতিতে মঙ্গোল ছিলেন। তিনি তার পিতা মাতার সাত সন্তানের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন। চার বছর বয়সে তিনি সোগ-পো-ছে-হোর-দ্গে-স্লোং (ওয়াইলি: sog po che hor dge slong) নামক এক মঙ্গোল বৌদ্ধ ভিক্ষুর নিকট শিক্ষালাভ শুরু করেন। ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্রত্সোন-'গ্রুস (ওয়াইলি: ngag dbang brtson 'grus) নামক প্রথম 'জাম-দ্ব্যাংস-ব্ঝাদ-পা (ওয়াইলি: 'jam-dbyangs bzhad-pa) উপাধিধারী বৌদ্ধ লামা তাকে ব্লো-ব্জাং-ব্স্তান-পা'ই-র্গ্যাল-ম্ত্শান (ওয়াইলি: blo bzang bstan pa'i rgyal mtshan) নামক দ্বিতীয় সুম-পা-ম্খান-পো উপাধিধারী লামার পুনর্জন্ম রূপে চিহ্নিত করেন। ১৭১২ খ্রিষ্টাব্দে চতুর্থ দলাই লামার উপদেশ মতো তাকে দ্গোন-লুং-ব্যাম্স-পা-গ্লিং বৌদ্ধবিহারে (ওয়াইলি: dgon lung byams pa gling) নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ঙ্গাগ-দ্বাং-ব্স্তান-'দ্জিন (ওয়াইলি: ngag dbang bstan 'dzin) এবং ব্লো-গ্রোস-র্গ্যা-ম্ত্শো (ওয়াইলি: blo gros rgya mtsho) নামক দুই ভিক্ষু তাকে বিনয়, অভিধর্ম ও প্রজ্ঞাপারমিতা সম্বন্ধে শিক্ষাপ্রদান করেন। ১৭১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঙ্গাগ-দ্বাং-থুব-বস্তান-ব্স্তান-ফ্যুগ (ওয়াইলি: ngag dbang thub bstan dbang phyug) নামক বৌদ্ধ ভিক্ষুর নিকট শিক্ষার্থীর শপথ গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি দ্পা'-রিন-ঙ্গাগ-দ্বাং-বক্রা-শিস (ওয়াইলি: dpa' rin ngag dbang bkra shis) নামক এক ভিক্ষুর নিকট তন্ত্র শিক্ষালাভ করে মধ্য তিব্বত যাত্রা করেন। ১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্ক্রা-শিস-ল্হুন-পো বৌদ্ধবিহারে পঞ্চম পাঞ্চেন লামা তাকে ভিক্ষুর শপথ প্রদান করেন। এরপর তিনি দ্রেপুং বৌদ্ধবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গোমাং মহাবিদ্যালয়ে 'জাম-দ্ব্যাংস-র্গ্যা-ম্ত্শো (ওয়াইলি: 'jam dbyangs rgya mtsho) এবং ঙ্গাগ-দ্বাং-নাম-ম্খা' (ওয়াইলি: ngag dbang nam mkha') ন্মক লামাদের নিকট শিক্ষালাভ করেন। এরপর তিনি তিব্বতের বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে বহু বিখ্যাত পণ্ডিতের নিকট শিক্ষালাভ করেন। তিনি স্মোন-লাম-ল্হুন-গ্রুব (ওয়াইলি: smon lam lhun grub) নামক লামার নিকট সংস্কৃত ধ্বনিতত্ত্ব, স্কু-'বুম-ব্সোদ-নাম্স-র্গ্যা-ম্ত্শো (ওয়াইলি: sku 'bum bsod nams rgyal mtshan) নামক লামার নিকট সংস্কৃত ব্যাকরণ, পা-ত্শা-গ্রাগ্স-পা-ল্হুন-গ্রুব (ওয়াইলি: pa tsa grags pa lhun grub) নামক লামার নিকট উর্দু লিপি এবং থাংকা চিত্রকলা, সোগ-পো-ঙ্গাগ-দ্বাং-র্গ্যা-ম্ত্শো (ওয়াইলি: sog po ngag dbang rgya mtsho) নামক লামার নিকট জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্র সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন। তার অসাধারণ পাণফিত্যের জন্য তিনি সুম্পা পণ্ডিত নাম পরিচিত ছিলেন।[]

পরবর্তী জীবন

সম্পাদনা

য়ে-শেস-দ্পাল-'ব্যোর দুই বছর ধরে 'ব্রাস-য়ুল-স্ক্যিদ-ত্শাল (ওয়াইলি: 'bras yul skyid tshal) বৌদ্ধবিহারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি দ্গোন-লুং-ব্যাম্স-পা-গ্লিং বৌদ্ধবিহারে বসবাস শুরু করেন। তিনি দ্গা'-লদান-ছোস-র্দ্জোং (ওয়াইলি: dga' ldan chos rdzong) নামক একটি বৌদ্ধ আশ্রম স্থাপন করেন। ১৭৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চিং সম্রাট চিয়ানলোংয়ের আমন্ত্রণে বেজিং যাত্রা করেন। সম্রাট তাকে ম্ত্শো-ব্দুন (ওয়াইলি: mtsho bdun) বৌদ্ধবিহারের প্রধান বানিয়ে দেন, কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারোনে তিনি তিব্বত ফিরে আসেন। তিনি দ্গোন-লুং-ব্যাম্স-পা-গ্লিং বৌদ্ধবিহারে ফিরে এসে বিহারের সুম-পা'ই-জিন-য়োন-ল্হা-খাং (ওয়াইলি: sum pa'i zin yon lha khang), স্রিদ-গ্নোন-'বুম-পা-ছেন-পো (ওয়াইলি: srid gnon 'bum pa chen po) এবং দ্মার-ত্শাং-ল্হা-খাং (ওয়াইলি: dmar tshang lha khang) প্রভৃতি মন্দিরগুলির ব্যাপক সংস্কার সাধন শুরু করেন এবং একটি বিশালাকার মৈত্রেয় মূর্তি নির্মাণ করান। তিনি দ্পা'-রি-ব্ক্রা-শিস-ছোস-লিং (ওয়াইলি: dpa' ri bkra shis chos gling) এবং সার-লুং (ওয়াইলি: ser lung) বৌদ্ধবিহারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুনরায় চীন যাত্রা করেন কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে অল্পদিনের মধ্যে তিব্বত ফিরে আসেন। এরপর তিনি পো-শোগ-থু (ওয়াইলি: po shog thu) বৌদ্ধবিহারে তিনি একটি নতুন মন্দির স্থাপন করেন এবং ত্সোং-খা-পা-ব্লো-ব্জাং-গ্রাগ্স-পার একটি স্বর্ণখচিত মূর্তি নির্মাণ করান। ১৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তাকে দ্গোন-লুং-ব্যাম্স-পা-গ্লিং বৌদ্ধবিহারের প্রধান হিসেবে অধিষ্ঠিত করা হয়। এই সময় তিনি এই বিহারে রোল-পা'ই-র্দো-র্জে (ওয়াইলি: rol pa'i rdo rje) নামক তৃতীয় ল্চাং-স্ক্যা হো-থোগ-থু উপাধিধারী বৌদ্ধ লামার পরামর্শ মতো সংস্কৃত ব্যাকরণ, তিব্বতী ব্যাকরণ, কাব্যশাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্য, চিকিৎসাশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ের পাঠ্যক্রম চালু করেন। তিনি এই সময় এক মাসের জন্য ব্শাদ-গ্রুব-দার-র্গ্যাস-গ্লিং (ওয়াইলি: bshad sgrub dar rgyas gling) নামক বৌদ্ধবিহারের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৭৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মঙ্গোলিয়া যাত্রা করেন ও সাত বছর সেখানে শিক্ষাদান করে তিব্বত ফিরে এলে দ্গোন-লুং-ব্যাম্স-পা-গ্লিং বৌদ্ধবিহারে তাকে পুনরায় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।[]

য়ে-শেস-দ্পাল-'ব্যোর প্রমাণ, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, চিকিৎসাশাস্ত্র, কাব্যশাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত, তিব্বতমঙ্গোলিয়ায় বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসের ওপর তার বিখ্যাত দ্পাগ-ব্সাম-ল্জোন-ব্জাং (ওয়াইলি: dpag bsam ljon bzang) নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি আমদো অঞ্চলের ইতিহাসের ওপর ম্ত্শো-স্ঙ্গোন-গ্যি-লো-র্গ্যুস (ওয়াইলি: mtsho sngon gyi lo rgyus) নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Chhosphel, Samten (নভেম্বর ২০১০)। "Sumpa Khenpo Yeshe Peljor"The Treasury of Lives: Biographies of Himalayan Religious Masters। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৭-২৯ 

আরো পড়ুন

সম্পাদনা
পূর্বসূরী
ব্লো-ব্জাং-ব্স্তান-পা'ই-র্গ্যাল-ম্ত্শান
য়ে-শেস-দ্পাল-'ব্যোর
প্রথম সুম-পা-ম্খান-পো
উত্তরসূরী
ত্শুল-খ্রিম্স-ব্স্তান-'দ্জিন