মোহেলি
মোহেলি [mɔ.e.li], মোয়ালি নামেও পরিচিত,[২] হলো একটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ যেটি কোমোরোস ইউনিয়ন এর একটি অংশ। দেশটির প্রধান দ্বীপগুলোর মধ্যে[৩] এটি সবচেয়ে ছোট। এটি আফ্রিকার উপকূলে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত এবং এটি কোমোরো দ্বীপপুঞ্জের প্রধান চারটি দ্বীপের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।[৪] এটির রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর ফোমবোনি।[৫]
মোহেলি ইলু অতুমেঁ দে মোয়েলি[১] মোয়ালি جزيرة موهيلي المتمتعة بالحكم الذاتي | |
---|---|
কোমোরোস ইউনিয়ন এর স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ | |
স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ মোহেলি | |
কমোরোস দ্বীপপুঞ্জ গুলোর মধ্যে মোহেলিকে সবচেয়ে নীচে দেখানো হয়েছে। | |
দেশ | কমোরোস |
রাজধানী | ফোমবোনি |
সরকার | |
• ধরন | স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের অধীনে |
আয়তন | |
• মোট | ২১১ বর্গকিমি (৮১ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৭৯০ মিটার (২,৫৯০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০০৩) | |
• মোট | ৩৫,৪০০ |
• আনুমানিক (২০০৬) | ৩৮,০০০ |
• জনঘনত্ব | ১৭০/বর্গকিমি (৪৩০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | ইএটি (ইউটিসি+০৩:০০) |
ইতিহাস
সম্পাদনা১৮৩০ পর্যন্ত, মোহেলি এনজুয়ানি সালতানাত এর অধীনে ছিল, যেটি প্রতিবেশী দ্বীপ আনজোয়ানও নিয়ন্ত্রণ করতো। ১৮৩০ সালে মাদাগাস্কার থেকে রামানেটাকার নেতৃত্বে আসা অভিবাসীরা, যারা পরবর্তীতে তাদের নাম পরিবর্তন করে আবদেরমেন রাখে, দ্বীপটি দখলে নিয়ে নেয় এবং মোয়ালি'র সালতানাত প্রতিষ্ঠা করে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এটির শাসক ছিল রাণী জুম্বে-সৌলি। ১৮৮৬ সালে ফ্রান্স দ্বীপটিকে একটি সংরক্ষিত রাজ্যে পরিণত করে।
১৮৮৯ সাল পর্যন্ত, মোয়ালি'র নিজস্ব ফরাসি বাসিন্দা ছিল, কিন্তু দ্বীপটি তখন আনজুয়ান আবাসের অধীনস্থ ছিল। সালতানাতটি ১৯০৯ সালে ভেঙে যায় দ্বীপটিতে ফরাসিদের দখলের পরে। "মোহেলি" শিলালিপি সহ ফরাসি ঔপনিবেশিক স্ট্যাম্পগুলি ১৯০৬ এবং ১৯১২ সালের মধ্যে প্রচারিত হয়েছিল।
কোমোরোস
সম্পাদনা১৯৭৫ সালে, মোহেলি কোমোরোস জাতির সাথে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, গ্রান্ডে কোমোরোস এবং আনজুয়ান এর সাথে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতা মোহেলি এবং কোমোরোস এর জনসাধারণের মধ্যে দেখা দেয়।
স্বাধীনতা
সম্পাদনা১১ আগস্ট ১৯৯৭ এ, মোহেলি কোমোরোস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আনজুয়ান এর বিচ্ছিন্ন হওয়ার এক সপ্তাহ পরে। মোহেলি'র বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সাঈদ মোহাম্মদ সয়ফু রাষ্ট্রপতি এবং সইদরি আহমেদ প্রধানমন্ত্রী হয়।
কোমোরোস এর পুনরায় যোগদান
সম্পাদনামোহেলি কোমোরোস এ ১৯৯৮ সালে পুনরায় যোগদান করে। ২০০২ সালে মোহেলি নতুন কোমোরিয়ান সংবিধান অনুমোদন করে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের প্রতি কম কেন্দ্রীভূত হয় এবং দ্বীপ সরকার কে বেশি ক্ষমতা প্রদান করে। এটি কোমোরোস এ চলমান রাজনৈতিক অশান্তি এবং আঞ্জুয়ান এর বিচ্ছিন্নতাবাদ নিষ্পত্তি করতে সহযোগিতা করে। একই বছর মোহাম্মদ সাঈদ ফাজুল রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়। তার সমর্থিত প্রার্থীরা বেশিরভাগ আসনে জয়লাভ করে ২০০৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সংসদে মোহেলির প্রতিনিধিত্ব করে।
রাজনীতি
সম্পাদনা২০০২ সালে মোহাম্মদ সাঈদ ফাজুল মোহাম্মদ হাসানআলীর বিরুদ্ধে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়।
বিধানসভা নির্বাচন স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ মোহেলির দশটি আসন নিয়ে ২০০৪ সালের মার্চ ১৪ এবং ২১, এ গঠিত হয়। নয়টি আসন সাঈদ মোহাম্মদ ফাজুল এর সমর্থকরা জিতে এবং অবশিষ্ট আসন আজালি আসোমানির সমর্থনকারী জিতে। ২০০৭ সালে সাঈদ মোহাম্মদ ফাজুল কে হারিয়ে স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ মোহেলির রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয় মোহাম্মদ আলী সাঈদ (গভর্নরের পরিবর্তে বর্তমান রাষ্ট্রপতি)।
২০১২ সালে দুই বছর মেয়াদ শেষ করার পরপরই, নির্বাচনী পঞ্জিকায় সমস্যা হওয়ার কারণে মোহাম্মদ আলী সাঈদ স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ মোহেলির গভর্নর নির্বাচিত হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী সাঈদ আলি হিলালীকে হারিয়ে। দ্বীপটির নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় মোহাম্মদ আলী সাঈদ এর দল।
২০১৫ এর আইনসভা এবং সাম্প্রদায়িক নির্বাচনের পর, গভর্নর মোহামেদ আলি সাঈদ এর দল দ্বীপটিতে অধিকাংশ আসন জিতে কাউন্সিলর এর সাথে জোট বাঁধে যারা রাষ্ট্রপতি ইকিলিলুইস এর সমর্থক এবং দলের (ইউপিডিসি পার্টি) সাথে সম্পর্কযুক্ত।
মে ২০১৬ সালে, দ্বীপটির পাঁচ বছর মেয়াদি গভর্নর নির্বাচনের সময় মোহামেদ সাঈদ ফাজুল রাষ্ট্রপতি ইকিলিলুইস এর স্ত্রী (হাদিদজা ঢইনাইন) এর বিপক্ষে জয় লাভ করে। এবং সে দ্বিতীয়বারের মতো দ্বীপটির শাসনভারের দায়িত্ব পায়।
জনসংখ্যা
সম্পাদনা২০০৬-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], মোহেলির জনসংখ্যা ৩৮,০০০ এর মতো। অন্যান্য কোমোরোস দ্বীপ গ্রান্দে কোমোরে ও আনজোয়ান এবং অন্যান্য ফরাসি অঞ্চল মায়োতে যারা কোমোরোস এর মূল জাতি। এছাড়াও, বান্টু, আরব, মালয়, মালাগাসি সংস্কৃতিরও দেখা মিলে। এবং প্রধান ধর্ম হলো সুন্নি ইসলাম।
পরিবেশ
সম্পাদনাসংরক্ষিত এলাকা
সম্পাদনাএপ্রিল ১৯, ২০০১ সালে – মোহেলি মেরিন পার্ক – প্রথমবারের মতো সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয়।[৬] মেরিন পার্কটিকে ২০১০ সালে মোহেলি ন্যাশনাল পার্ক নামকরণ করা হয় এবং ২০১৫ সালে এটিকে দ্বীপটির এক তৃতীয়াংশ অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়।[৭]
গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা
সম্পাদনাদ্বীপটির পশ্চিম অংশের অভ্যন্তরের উচ্চভূমি জুড়ে একটি ৬,২৬৮ হেক্টর অঞ্চল, মেলেডেলে (Mlédjélé) পাহাড় সহ, বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা গুরুত্বপূর্ণ পাখি এলাকা (IBA) হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।[৮]
জাতীয় পতাকা
সম্পাদনাঅনুপাত | ২:৩ |
---|---|
গৃহীত | ২০০৩ |
অঙ্কন | হলুদ জমিনের মাঝখানে পাঁচটি বিন্দু বিশিষ্ট বড় একটি লাল তারকা |
মোহেলির জাতীয় পতাকা হলুদ জমিনের মাঝখানে একটি লাল তারকা বিশিষ্ট। এটি অনেকটা ভিয়েতনামের জাতীয় পতাকার মতো। এটি ২০০৩ সালে গ্রহণ করা হয়।[৯] ২০০২ সালে মোহেলি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ হওয়ার পর এটি পূর্ববর্তী পতাকার স্থান নেয়।
বিমানবন্দর
সম্পাদনাদ্বীপটির উত্তর উপকূলে ফোমবোনি এবং জোইএজি এর গ্রামগুলোর মধ্যে মোহেলির একমাত্র বিমানবন্দর মোহেলি বান্দার এস এসলাম।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Information : Arrêté du gouvernorat de l'île autonome de Mohéli"। La France en Union des Comores। ১ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- ↑ "Figure 1. Map of the Comoros showing the islands of Ngazidja (Grande..."। ResearchGate (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-২৫।
- ↑ Verhandelingen der Koninklijke Nederlandsche Akademie van Wetenschappen te Amsterdam, Afdeeling Natuurkunde: Tweede sectie (ইংরেজি ভাষায়)। N.V. Noord-Hollandsche Uitgevers-Maatschappij। ১৯৩৮।
- ↑ Frazier, J. (১৯৮৫)। Marine Turtles in the Comoro Archipelago (ইংরেজি ভাষায়)। North-Holland Publishing Company। আইএসবিএন 978-0-444-85629-6।
- ↑ The New Encyclopaedia Britannica: Micropaedia (ইংরেজি ভাষায়)। Encyclopaedia Britannica। ১৯৯৫। আইএসবিএন 978-0-85229-605-9।
- ↑ Hauzer, Melissa D. (২০০৭)। Stakeholders' Perceptions of Mohéli Marine Park, Comoros: Lessons Learned from Five Years of Co-management (ইংরেজি ভাষায়)। Community Centred Conservation (C3)।
- ↑ UNEP-WCMC (2021). Protected Area Profile for Parc National de Mohéli from the World Database of Protected Areas. Accessed 10 August 2021. [১]
- ↑ "Mont Mlédjélé (Mwali highlands)"। BirdLife Data Zone। BirdLife International। ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০২১।
- ↑ Cahoon, Ben। "Comoros"। World Statesmen.org। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৩।