মেসবাহুল হক

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

আ. আ. ম. মেসবাহুল হক ওরফে বাচ্চু ডাক্তার (৩ মার্চ ১৯৩০ - ১৬ জানুয়ারি ২০০৯) বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও ভাষাসৈনিক। তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন।[১] তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম হস্তলিখিত সংবিধানে স্বাক্ষরকারীদের একজন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে মুক্তিযুদ্ধে একুশে পদক ( মরণোত্তর)  প্রদান করে।[২][৩]

আ. আ. ম. মেসবাহুল হক
জন্ম
আ.আ.ম. মেসবাহুল হক বাচ্চু

(১৯৩০-০৩-০৩)৩ মার্চ ১৯৩০
কিরমিয কুটির, বালিয়াডাঙ্গা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী
মৃত্যু১৬ জানুয়ারি ২০০৯(2009-01-16) (বয়স ৭৮)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাচিকিৎসক, রাজনীতিবিদ
পরিচিতির কারণমুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ভাষাসৈনিক

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

মেসবাহুল হক রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ১৯৩০ সালের ৩ মার্চ এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। তাঁর স্ত্রীর নাম মাসুদা হক। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। শেষ জীবনে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মসজিদ পাড়ায় ১৫ নং ওয়ার্ড এ বসবাস করতেন।

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

মেসবাহুল হক ১৯৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ মালদাহ জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্টিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ১৯৪৯ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তৎকালীন রাজশাহী মেডিক্যাল স্কুল (বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ) থেকে ১৯৫২ সালে এলএমএফ ডিগ্রী অর্জন করেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

ডা. মেসবাহুল হক বাচ্চু ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে (১৯৭১-৭২) গণপরিষদ সদস্য হিসেবেও দায়ীত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় নির্বাচনে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৫] ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গভর্নর নিযুক্ত করেন।[৬]

ভাষা আন্দোলন সম্পাদনা

ছাত্রাবস্থায় মেসবাহুল হক তৎকালীন রাজশাহী মেডিক্যাল স্কুলের (বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ) ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। রাজশাহী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় মেসবাহুল হক সহ অন্যান্য ছাত্ররা ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান কে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করে। সেসময় প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান কে ডেপুটেশন প্রদানের কথিত অপরাধে মেসবাহুল হক ১৬ জন ছাত্রকে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে বহিস্কার করেন। এছাড়াও ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার কথিত অপরাধে ১৯৫৪ সালে রাজশাহীতে ৪০ জন ছাত্রনেতার সাথে সেই সময়কার দাপুটে ছাত্রনেতা মেসবাহুল হক বাচ্চু ও কারাবরণ করেন।[৭]

একাত্তর এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদনা

মেসবাহুল হক বাচ্চু চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়। যার অন্যতম সদস্য ছিলেন মেসবাহুল হক। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১৯৭১ সালে মালদাহে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানকার জোনাল অফিসের সহকারী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মেসবাহুল হক। তিনি সেখানে গৌড় বাগান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ছিলেন।[৮]

সম্মাননা সম্পাদনা

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতি তাঁর গৌরবময় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ তাঁকে আজীবন সম্মাননা-পদক প্রদান করেন। এছাড়াও ২০১১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নবনির্মিত স্টেডিয়ামটি ডা. আ. আ. ম. মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার) স্টেডিয়াম’ নামে নামকরণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ২০২০ সালে একুশে পদক ( মরণোত্তর) লাভ করেন।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "মেসবাহুল হক"প্রথম আলো। ১৫ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ 
  2. যুগান্তর, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০
  3. "একুশে পদক প্রাপ্ত সুধীবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান" (পিডিএফ)সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ 
  4. "মেসবাহুল হক বাচ্চুর মৃত্যু বার্ষিকী পালিত"The Report24.com। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ 
  5. "ডা. আ.আ.ম. মেসবাহুল হকের ৮৪তম জন্মদিন- 46509- Bangladesh Pratidin"। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ 
  6. "মেসবাহুল হক বাচ্চু"। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ 
  7. অামির হোসেন, এ্যাডভোকেট সৈয়দ। "বরেন্দ্র অঞ্চলের ভাষা অান্দোলন"। বরেন্দ্র অঞ্চলেরর ইতিহাস। ঢাকা, বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৬০০। 
  8. মনসুর আহমদ, খান (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪)। মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী (১ম সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: আগামী প্রকাশনী।