মুহাম্মদ বিন কাসিমের মাজার

সিন্ধু বিজেতা মুসলিম সেনাপতি মুহাম্মাদ বিন কাসিম আস সাকাফির মাজার ( সমাধি) ইরাকের ওয়াসিত প্রদেশের আন নুমানিয়া শহরে অবস্থিত।[১][২] মুহাম্মদ ৭১২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সিন্ধু বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। [১][২] তিনি ইরাকের ওয়াসিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং ওয়াসিতে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। কিছু সুত্রের দাবি হল, তার মৃতদেহ বেলুচিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলের আধা-মরুভূমি মাক্রানে সমাহিত করা হয়। তবে এর সমর্থনে কোনো শক্তিশালী প্রমাণ পাওয়া যায়নি।[১]

মৃত্যু (শাহাদাত) সম্পাদনা

মুহাম্মাদ বিন কাসিমের একটি বেদনাদায়ক পরিণতি হয়েছিল। তিনি ঘৃণা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। এর প্রতিশোধ হিসেবে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ঘটনার দায় চাপানো হয়। তার বড় অপরাধ ছিল, তিনি হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাতিজা ছিলেন, যিনি প্রথম আল-ওয়ালিদের ডান হাত ছিলেন। হাজ্জাজ সুলেমান ইবনে আব্দুল মালেকের সবচে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। হাজ্জাজ চেয়েছিলেন, আল ওয়ালিদের পর তার ভাই সুলেমান খলিফা না হয়ে তার নিজের ছেলে হোক।[৩]

আল ওয়ালিদহাজ্জাজের স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেনি। সুলেমান খলিফা নির্বাচিত হওয়ার আগেই হাজ্জাজের মৃত্যু হয়। সুলেমান খলিফা হওয়ার পর হাজ্জাজের আত্মীয় হিসেবে মুহাম্মদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন এবং তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রথমে কাসেমকে পদচ্যুত করা হয় এবং পরবর্তীতে ইরাকে তলব করে হত্যা করা হয়।[৪][৫]

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, তিনি সিন্ধুর রাজা দাহেরের কন্যার ইজ্জত লুণ্ঠন করেছেন। অথচ সিন্ধু বিজয়ের প্রায় ৩ বছর পর তাকে এই অভিযোগে বন্দী করা হয়। দাবি করা হয় যে, মুহাম্মদ জোরপূর্বক তার সাথে সঙ্গম করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তাকে হত্যাও করেন। এই অভিযোগে ইরাকের গভর্নর সালেহ বিন আব্দুর রহমান তাকে শৃঙ্খলিত করে ওয়াসিতের কারাগারে পাঠান এবং সেখানে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাসের পর মাস তাকে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়। করেন।[৪]

এরপর ওয়াসিতেই তাকে সমাহিত করা হয়। মুস্তফা জাওয়াদ বলেন যে, তার সমাধি ওয়াসিত প্রদেশের আননুমানিয়াতে পরিচিত। এ কথা আগেকার একদল ঐতিহাসিক দ্বারা প্রমাণিত। [৬] আরবরাই কেবল তার মৃত্যুর জন্য কাঁদেনি; বরং সিন্ধুর সকল মানুষ, এমনকি ব্রাহ্মণবৌদ্ধরাও দুঃখপ্রকাশ করে এবং ভারতীয়রা তাকে নুড়ি দিয়ে চিত্রিত করেছিল। [৭]

ইরাকি ঐতিহাসিক সম্পাদনা

ইরাকি ঐতিহাসিক মুস্তফা জাওয়াদ উল্লেখ করেন যে, ড. হুসাইন আলী মাহফুজ এবং ড. আব্দুল আজিজের উপস্থিতিতে উচ্চ গবেষকদের ভবনে ইরাকি মাজারের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনার সময় দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে তিনি বলেছিলেন যে, এটা আশ্চর্যজনক যে, আমরা ইরাকিরা আমাদের পতাকাকে অন্যদের কাছে সমর্পণ করেছি। বেশিরভাগ সূত্র নিশ্চিত করে যে, মুহাম্মদ বিন কাসিম আস সাকাফির সমাধি ইরাকের ওয়াসিতের আন-নুমানিয়াহতে অবস্থিত, যা জনসাধারণের মধ্যে মুহাম্মদ বিন কাসিম আল-আলাউয়ের সমাধি হিসাবে পরিচিত। এটি সাফবীয়দের ইরাক বিজয়ের সময় এ মাজারের সম্মান রক্ষার্থে আলাভি (আলীপন্থী) মাজার বলে প্রচার করা হয়।[৮] এমনটি না হলে সফবীয় সৈন্য এটি গুড়িয়ে দিত এবং তখন থেকে এটি মুহাম্মাদ বিন কাসিম আল আলাভীর মাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

এটা জানা যায় যে, মুস্তফা জাওয়াদ ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে নিজের জন্য একটি সুপরিচিত পন্থা লিখেছেন। তা হল গবেষণার বিষয়ের কাছাকাছি উৎসগুলি গ্রহণ করা অর্থাৎ তিনি যদি বাগদাদ সম্পর্কে লেখেন তবে তিনি একজন বাগদাদি ঐতিহাসিককে গ্রহণ করেন ; যদি তিনি দামেস্ক সম্পর্কে লেখেন, তিনি একজন দামেস্কীয় ইতিহাসবিদকে সূত্র হিসেবে নেন এবং যদি তিনি শাফিঈ সম্পর্কে লেখেন তাহলে তিনি একজন শাফিঈ ঐতিহাসিককে গ্রহণ করেন।

উপসংহারে ড. আব্দুল কাদির আল-মাদিদি মুহাম্মাদ বিন কাসিমের সমাধির বিষয়টি গ্রহণ করেন যে, ইমাম মুহাম্মদ বিন কাসিমকে আন্নুমানিয়ার জমিতে সমাহিত করা হয়, যা ওয়াসিত শহরে অবস্থিত। তিনি ইরাক ও এর জনসাধারণের কাছে মুহাম্মদ বিন কাসিম আল আলাভির সমাধি হিসাবে পরিচিত হওয়ার কারণ হিসেবে বলেন, দেশটিতে সাফাভি দখলদারিত্বের দ্বারা মাজার ধ্বংসের ভয়ে তার উপাধি বিকৃত করা হয়েছিল এবং এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি ড. ইউসুফ আল আশ, ড. ফারুক ওমর ফাওজি, ড. হামাদান আব্দুল মাজিদ আল কুবাইসি, ড. লাবীদ ইব্রাহিম আহমেদ দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল। এছাড়া মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ, ডা. জামালুদ্দীন আল-শায়াল এবং অন্যান্য প্রবীণ ইতিহাসবিদেরা তা নিশ্চিত করেছেন। [৯] [১০]

তার মাজার সম্পাদনা

তার মাজার এখনো ইরাকের ওয়াসিত জেলার আন নুমানিয়াহ শহরে বহাল তবিয়তে আছে। [১] [২]

সম্পর্কিত পাতা সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ضريح محمد بن القاسم الثقفي، عمار السنجري، البيان الاماراتية، التاريخ: 29 ديسمبر 2006
  2. ابن شاكر، الوافي بالوفيات، ج15،ص 194
  3. سلهب, حسن قاسم (২০১৯)। "بحر الخلفاء تاريخ المتوسط الإسلامي من القرن السابع إلى القرن الثاني عشر م.:, عرض ونقد"مجلة دراسات استشراقية: 114। ডিওআই:10.35518/1401-000-018-004 
  4. মুহাম্মদ বিন কাসিম : জীবন ও সংগ্রাম 
  5. "books-library.net-05100521Rr4K7.pdf"docs.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২৩ 
  6. محمد بن قاسم الثقفي فاتح بلاد السند,محمود شيت خطاب,129
  7. اصول التاريخ والادب، المجلد 19، المجمع العلمي العراقي سنة 1966
  8. حوار مع مصطفى جواد في الإذاعة والتلفزيون العراق بغداد 1966
  9. عبد القادر سلمان المعاضيدي، قبر الفاتح محمد بن القاسم الثقفي، بين الحقيقة والتاريخ والضياع، الشارقة، 2000
  10. ما رأي الشيخ بمحمد بن القاسم العلوي؟ وأين يقع قبره؟ سلام عليكم ورحمة الله وبركاته تحية طيبة إلى سماحة الشيخ المجاهد ياسر الحبيب أعزه الله سؤال : ما رأي سماحة الشيخ ياسر الحبيب أعزه الله بشخصية ابي جعفر محمد بن القاسم بن علي الأصغر بن عمر الأشرف بن الامام زين العابدين وسيد الساجدين عليه السلام صاحب الثورة ضد المعتصم العباسي لعنه الله والذي يقع قبره في مدينة النعمانية في محافظة واسط والذي يعرف مرقده بمقام الامام المهدي عجل الله فرجه ويذكر في خبر المقام رواية ابي الجود النعماني ؟ ان كان ممدوحا فمن اعطاه الإذن بالثورة علما ان وقته حساسا جدا كان ؟ وان كان مذموما ما صحة خبر مقام الامام عجل الله فرجه عند قبره ؟ نرجوا الإيجابة والإطناب ان أمكن في المسألة جزيتم خيرا. القسم:رجال بسم الله الرحمن الرحيم الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدنا محمد وآله الطيبين الطاهرين ولعنة الله على أعدائهم أجمعين السلام عليكم ورحمة الله وبركاته. عظم الله أجورنا وأجوركم بذكرى استشهاد الإمام الحسين وأصحابه صلوات الله عليهم ولعنة الله على قتلتهم وأعدائهم أجمعين. بمراجعة الشيخ أفاد أن هناك خلطا كبيرا ههنا، فالمسؤول عنه الذي ينتهي نسبه إلى عمر الأشرف ابن الإمام زين العابدين صلوات الله عليه هو محمد بن القاسم المعروف بالصوفي وصاحب الطالقان لأنه خرج هناك، ثم قُبض عليه وأُرسل إلى بغداد حيث ضُربت عنقه وصُلب بأمر من المعتصم العباسي لعنه الله، كما في (عمدة الطالب لابن عنبة ص306). وهو على أية حال لم يكن من الممدوحين ولم يؤذن له بالخروج، بل لم يكن منا، فهو من الزيدية، قد ادعى الإمامة وادُّعِيت له المهدوية. والمقبور في النعمانية ليس هذا؛ بل هو محمد بن القاسم الثقفي، المشهور بفاتح السند، وهو ابن عم الحجاج لعنه الله، وقد أُعيد إلى العراق تاليا وسُجن في النعمانية وعُذِّبَ حتى مات في عهد سليمان بن عبد الملك الأموي لعنه الله، فزمانه - إذن - متقدّم على زمان ذاك الصوفي المصلوب في بغداد أو المحبوس في سامراء المقدسة على قول آخر، وهما رجلان مختلفان في زمانين مختلفين ومكانين مختلفين. وأما محمد بن القاسم العلوي المذكور في (غيبة الطوسي ص259) والذي تشرف بلقاء مولانا صاحب الأمر صلوات الله عليه في مكة المكرمة؛ فرجل ثالث في زمان متأخر. والذي أوقع الاشتباه أن عامة الناس يسمون صاحب القبر الذي في النعمانية بمحمد بن القاسم العلوي، والحال أن النعمانية محل قبر الثقفي كما عرفت. ثم إن اسم صاحب الخبر الذي أشرتم إليه ليس أبا الجود؛ بل ابن أبي الجواد، كما ضُبط في (النجم الثاقب ج2 ص138). وهو شيخ يذكر لقاءه بصاحب الأمر صلوات الله عليه. وليس في خبره ذكر لمحمد بن القاسم أصلا، ولا لمجاورة الإمام عليه السلام لقبره ومقامه عنده. وعليه فلا يُعلم على وجه التحديد هل أن المقام المعروف في النعمانية هو نفسه هذا المقام المذكور في هذا الخبر أم لا؟ كما لا يُعلم على وجه التحديد لمن يكون القبر هناك، إذ لا يمكن القطع أنه للثقفي أو لغيره. والحاصل؛ أنه لم يثبت صلاح محمد بن القاسم المعروف بالصوفي ولا مقام صاحب الأمر صلوات الله عليه عند قبره، فقبره ليس في النعمانية أصلا. وفقكم الله لمراضيه.