মুনিম খান
মুনিম খান খান-ই-খানান মুঘল সম্রাট হুমায়ূন ও আকবর অধীনে একজন উচ্চপদস্থ সেনাপতি ছিলেন। তার উপাধী ছিলোখান-ই-খানান, ১৫৬০ সালে সম্রাট আকবর তাকে এই উপাধী দিয়ে উপাধি দিয়ে ওয়াকিল পদে নিয়োগ করেন। আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে পাওয়া যায় তার আসল নাম ছিলো মির্জা মুনিম বেগ ১৫৬৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। তিনি সম্রাট আকবরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছিলেন।[১] তারপর ১৫৬৪ সালে উজবেক বিদ্রোহ দমনের পর তিনি জৌনপুরের সুবাদার নিযুক্ত হন। পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহ তার অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ১৫৭৪-১৫৭৫ সালে তিনি বাংলা ও বিহারের সুবাদার ছিলেন। ১৫৭৪-৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর মনসবদরি প্রথা প্রবর্তন করে মুনিম খানকে তৎকালীন সর্বোচ্চ পাঁচ হাজারী মনসবদারের মর্যাদা প্রদান করেন।[২]
ওয়াকিল মুনিম খান খান-ই-খানান | |
---|---|
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
মৃত্যু | ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দ |
জাতীয়তা | তুর্কি |
পিতা | মিরান বেগ আন্দিজানি |
জাতি
সম্পাদনাতার পূর্বপুরুষ আন্দিজান (বর্তমান উজবেকিস্তান) থেকে এসেছিলেন। তার বাবার নাম মিরান বেগ আন্দিজানি।
দাউদ খানের বিরুদ্ধে অভিযান
সম্পাদনাবাংলার সুলতান দাউদ খান কররানী সম্রাট আকবরের বশ্যতা অস্বীকার করলে সম্রাট বাংলা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং মুনিম খানকে দাউদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। মুনিম খানের অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় ১৫৭৪ খ্রিষ্টাব্দে আকবর নিজেই দাউদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং হাজীপুর ও পাটনা থেকে দাউদকে বিতাড়ন করে রাজধানী প্রত্যাবর্তন করেন। দাউদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযানের ভার মুনিম খান ও টোডরমলের উপর ন্যস্ত করা হয়। মুনিম খান ২০,০০০ সৈন্য নিয়ে বাংলার দিকে অগ্রসর হন এবং বিনা বাধায় সুরজগড়, মুঙ্গের, ভাগলপুর ও কহলগাঁও অধিকার করে তেলিয়াগড়ি গিরিপথে পৌঁছেন। এখানে দাউদ প্রতিরোধ ব্যূহ রচনা করেন। মুনিম খানের নেতৃত্বে মুগল বাহিনী স্থানীয় জমিদারদের সাহায্যে রাজমহল পবর্তমালার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। মুনিম খান ১৫৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলার রাজধানী তান্ডায় প্রবেশ করেন। ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ৩ মার্চ সুবর্ণরেখা নদীর নিকট সংঘটিত তুকারয়ের যুদ্ধে দাউদ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান। তার পশ্চাদ্ধাবন করে রাজা টোডরমল ভদ্রকে উপস্থিত হন। দাউদ কটক দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। রাজা টোডরমল কটক অবরোধ করলে দাউদ নিরুপায় হয়ে সন্ধির প্রস্তাব দেন এবং ১২ এপ্রিল মুনিম খানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। উভয়পক্ষে সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। মুনিম খান রাজধানী তান্ডা থেকে গৌড়ে সরিয়ে নেন। কিন্তু গৌড় বহুকাল পরিত্যক্ত থাকায় বাসোপযোগী ছিল না।[২]
মৃত্যু
সম্পাদনা১৫৭৫ সালের ২৩ অক্টোবর মুনিম খান প্লেগ রোগে মারা যান। তার মৃত্যুর পর দাউদ খান ফিরে আসে ও গৌড় দখল করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ এ.কে.এম ইয়াকুব হোসাইন (২০১২)। "মুনিম খান, খান-ই-খানান"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ ক খ এ.কে.এম ইয়াকুব হোসাইন (২০১২)। "মুনিম খান, খান-ই-খানান"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743। "মুনিম খান, খান-ই-খানান - বাংলাপিডিয়া"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-০১।