ফিল্মফেস্ট ম্যুনশেন

মিউনিখ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
(মিউনিখ ফিল্মফেস্ট থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মিউনিখ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (জার্মান: Filmfest München ফিল্মফেস্ট ম্যুনশেন) মিউনিখে আয়োজিত জার্মানির সবচেয়ে বৃহৎ গ্রীষ্মকালীন চলচ্চিত্র উৎসব এবং আকার ও গুরত্বের দিক থেকে বার্লিনেলের পর দ্বিতীয় উৎসব।[১] ১৯৮৩ সাল থেকে প্রতিবছর জুন মাসের শেষের দিকে এর আয়োজন করা হয়। এই উৎসবে বিভিন্ন পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। বুদ্ধিমান এবং সৃজনশীল নতুন চলচ্চিত্রনির্মাতাদের আবিষ্কার করার জন্য উৎসবটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতীতের চলচ্চিত্র স্মরণ, সম্মাননা প্রদর্শন ব্যতীত অন্য যে সকল চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয় সেগুলোর বেশিরভাগ জার্মান, ইউরোপিয় এবং বিশ্বমানের চলচ্চিত্র হয়ে থাকে।

ফিল্মফেস্ট ম্যুনশেন
ফিল্মফেস্ট ম্যুনশেন ২০১৬-এ একটি চলচ্চিত্রের উদ্বোধন
অবস্থানমিউনিখ, জার্মানি
প্রতিষ্ঠিত১৯৮৩
পুরস্কার
  • জার্মান সিনেমা নিউ ট্যালেন্ট এওয়ার্ড
  • এআরআরআরআই
  • অসরাম এওয়ার্ড
  • বার্নড বার্জেমিস্টার টিভি মুভি এওয়ার্ড
শিল্পী পরিচালকডায়ানা ইলজিন
চলচ্চিত্র সংখ্যাপ্রতিবছর প্রায় ২০০টি
ওয়েবসাইটwww.filmfest-muenchen.de
২০১৩সালের ফিল্মফেস্টের পোস্টার
২০০৯সালের ফিল্মফেস্টের পোস্টার
গাসতেইগ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হলো ফিল্মফেস্টের আয়োজনস্থল
ফিল্মফেস্টের জন্য বিজ্ঞাপন

উৎসবে প্রতিযোগিদের প্রায় €১৫০০০০ মূল্যমানের পুরস্কার প্রদান করা হয়, যা উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং অংশীদারদের কর্তৃক সরবহার করা হয়ে থাকে। উৎসবে ১৮টির বেশি পর্দা (স্ক্রিন) রয়েছে যেগুলোতে ২০০টিরও অধিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ফিল্মফেস্ট ম্যুনশেন প্রতিবছর প্রায় ৮০,০০০ জন চলচ্চিত্র প্রেমিদের আকর্ষণ করে। এই উৎসবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রায় ৬০০ জন সদস্য এবং প্রায় ২৫০০ জন চলচ্চিত্র পেশাদার যোগ দেয়। জার্মান এবং ইউরোপের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য এটি একটি জনপ্রিয় মিলনস্থান। উৎসবটির কেন্দ্র হলো ম্যুনশেনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র[২] যেখানে অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় এবং এখানেই চলচ্চিত্র উৎসবের কার্যালয় অবস্থিত।

ফিল্মফেস্ট ম্যুনশেনের পরিচালক ডায়ানা ইলজিন,[৩][৪] যিনি ২০১১ সালের আগস্টে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাবেক পরিচালকরা হলেন আন্দ্রেস স্থ্রোল (২০০৪-২০১১) এবং এবারহার্ড হোফ, যারা উৎসবটির সূচনা করেছিলেন।[৫]

শাখাসমূহ সম্পাদনা

এই উৎসবের আয়োজনে[৬] থাকে বড় প্রযোজনা থেকে বাজেটবিহীন চলচ্চিত্র। প্রধান আকর্ষণ থাকে জার্মানি এবং বিশ্বের সৃজনশীল নতুন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ওপর।

ফিল্মফেস্ট ম্যুনশেন আয়োজনের শাখাগুলো হলো:

সিনেমাস্টার্স প্রতিযোগিতা সম্পাদনা

এই শাখায় বিশ্বের (জার্মানি ব্যবতীত) খ্যাতনামা পরিচালকদের চলচ্চিত্র থাকে।

সিনেভিশন প্রতিযোগিতা সম্পাদনা

স্পটলাইট সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক স্বাধীনতা সম্পাদনা

নতুন জার্মান চলচ্চিত্র সম্পাদনা

নতুন জার্মান টেলিভিশন চলচ্চিত্র সম্পাদনা

স্বীকৃতি সম্পাদনা

এ শাখায় বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

স্মৃতিচারণ সম্পাদনা

এই ধরনের চলচ্চিত্রের মাঝে রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজ।

স্মৃতিচারণমূলক চলচ্চিত্র নির্মাতারা হলেন: সের্জিও লেওনে (১৯৮৬), ইম কোন-তেক (১৯৯০), লারস ভন ট্রাইয়ার (১৯৯১), হাল হার্টলে (১৯৯২), নাগিসা অসীমা (১৯৯২), স্টানলে ডনেন (১৯৯২), নান্নি মোরেত্তি (১৯৯৪), মাইকেল হানেকে (১৯৯৪, ২০০৯), নেলসন পেরেইরা (১৯৯৫), নিকোলাস রোয়েগ (১৯৯৫), রবার্ট ওয়াইজ (১৯৯৬), রন বাস (১৯৯৬), রোমান পোলান্‌স্কি (১৯৯৯), মিলশ ফরমান (২০০০), আকি এবং মিকা কোরিস্মাকি (২০০৪), এলেন পার্কার (২০০৪), ব্যারী লেবিনসন (২০০৬), মাইক ফিগ্গিস (২০০৬), রিচার্ড লিংকলেটার (২০০৭), ভের্নার হের্ৎসগ (২০০৭), হারবার্ট আচটার্নবুশ (২০০৮), জুলি ক্রিস্টি (২০০৮), স্টিফেন ফ্রিয়ার্স (২০০৯), উলরিচ সেইড (২০১০), টম ডিসিল্লো (২০১১), টড হায়নেস (২০১২), আলেহান্দ্রো হোদোরফ্‌স্কি (২০১৩), ওয়াল্টার হিল (২০১৪), আলেক্সান্ডার পায়নে (২০১৫), ক্রিশ্চিয়ান পেটজোল্ড এবং বাহমান গবাদি (২০১৬), সোফিয়া কপোলা (২০১৭) এবং লুস্রেসিয়া মার্টেল (২০১৮).

সিনেমেরিট পুরস্কার সম্পাদনা

কিন্ডারফিল্মফেস্ট সম্পাদনা

১৯৮৩সাল থেকে, ফিল্মফেস্ট মুঞ্চেনে বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে সারা পৃথিবীর শিশুদের (৪বছর ও তার উপরের বয়সী) জন্য নতুন চলচ্চিত্র দেখানো হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রগুলো যেমন শিক্ষণীয় হয় তেমনি বিনোদনদায়ক হয়। এক্ষেত্রে শিশুদের সুযোগ থাকে কিন্ডারফিল্মফেস্ট অডিয়েন্স পুরস্কার এর জন্য নির্দিষ্ট চলচ্চিত্রকে ভোট দেওয়ার।

পুরস্কার[৭] সম্পাদনা

ফিল্মফেস্ট মুঞ্চেনে নিম্নের পুরস্কারগুলো প্রদান করা হয় (প্রায় ১৫০,০০০পাউন্ড সমমূল্যের)ঃ

  • আরি/ওসরাম পুরস্কার (আরি এবং ওসরাম থেকে ৫০,০০০ পাউন্ড মূল্যের পুরস্কার) দেওয়া হয় সেরা চলচ্চিত্রকে (অ-জার্মান ভাষা)। এই পুরস্কারটি আরি ২০০৮সাল থেকে প্রদান করে আসছে এবং ওসরাম ২০১৩সাল থেকে এই পুরস্কারটি প্রদান করছে।
  • সিনেমেরিট পুরস্কার (১৯৯৭সাল থেকে) চলচ্চিত্র সম্প্রদায়ে সবচেয়ে ভালো অবদানকারী ব্যক্তিত্বকে প্রদান করা হয়।
  • সিনেভিশন পুরস্কার এবং ১২,০০০পাউন্ড প্রদান করা হয় উদীয়মান পরিচালক নির্মিত সেরা সিনেমাকে। এটির মূল উদ্দেশ্য নতুন আগত পরিচালকদের সাহায্য করা এবং জার্মানিতে তাদেরকে খ্যাতি প্রদান করা। বিজয়ীকে অনুষ্ঠানের সিনেভিশন শাখা থেকে নির্বাচন করা হয় এবং এতে অর্থ প্রদান করে ওয়াইল্ড বাঞ্চ।
  • জার্মান নিউ ট্যালেন্ট পুরস্কার প্রদান করে ডিজি ব্যাঙ্ক, বাভারিয়া ফিল্ম এবং বাভারিয়ান ব্রডকাস্টিং। এই পুরস্কারটি দেওয়া হয় সেরা পরিচালক, সেরা প্রযোজক, সেরা লেখক, সেরা অভিনেতা এবং সেরা অভিনেত্রীকে। যাদেরকে নতুন জার্মান সিনেমা শাখা থেকে নির্বাচন করা হয়।
  • বার্নড বার্জিমেস্টার টিভি পুরস্কার (পূর্বে ভিএফএফ টিভি পুরস্কার নামে পরিচিত ছিল) প্রদান করে ভিএফএফ, জার্মান ফিল্ম এন্ড টিভি প্রোডিউসারস রয়েল্টি কোম্পানি। ভিএফএফ সেরা জার্মান টিভি সিনেমার প্রযোজককে ২৫,০০০পাউন্ড প্রদান করে।
  • বেয়ার্ন ২ এবং এসজি অডিয়েন্স পুরস্কার পৃরদান করে সুডেশে জেইটাং এবং রেডিও স্টেশন বেয়ার্ন ২। এই পুরস্কারটি ২০০৪সাল থেকে প্রদান করা হয়। এই পুরস্কারের বিজয়ীকে নির্বাচন করে ফিল্মফেস্টের দর্শকরা।
  • কিন্ডারফিল্মফেস্ট অডিয়েন্স পুরস্কারঃ দর্শকদের মাঝের শিশুরা তাদের প্রিয় সিনেমার জন্য ভোট দিয়ে থাকে।
  • ওয়ান ফিউচার প্রাইজ (১৯৮৩সাল থেকে প্রদান করা হয় এবং এতে অর্থ দেয় ইন্টারফিল্ম একাডেমি, মুঞ্চেন) প্রদান করা হয় সেই সিনেমাকে যেটি প্রদর্শন করে পৃথিবীর ভবিষ্যৎকে।
  • ফ্রিটজ্ গার্লিচ প্রেইস প্রদান করে মিউনিখের প্রযোজনা কোম্পানি টেলাক্স। আর এটি সেই সিনেমাকে দেওয়া হয় যেটি জনসাধারণের মানবাধিকারকে প্রদর্শন করে। গার্লিচ ছিলেন একজন সাংবাদিক জিনি ১৯৩৪সালে এডলফ হিটলারের বিরুদ্ধে পৃরতিবাদ করেছেন। এই পুরস্কারের মূল্য ১০,০০০পাউন্ড।

উক্তি সম্পাদনা

মিউনিখ অন্যান্য উৎসবের মতো নয়। এটা বিশাল অনুষ্ঠান যেখানে আপনি অনেক নতুন বন্ধু বানাতে পারেন।

অন্যান্য ঝাঁকঝমকপূর্ন উৎসব থেকে এখানে আমি অনেক ঘরোয়া অনুভব করেছি। মিউনিখ আদর্শ দর্শকদের জন্য আসল সিনেমা প্রদর্শন করে।

কানেতে, তারা চলচ্চিত্র কিনে ও বেচেঁ। মিউনিখে তারা চলচ্চিত্র আবিষ্কার করে।

— মার্টিন মস্কোউইজ, কনস্টানটিন ফিল্ম প্রধান

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Filmfest München – Weltkino an der Isarmeile"। Sehnsuchtdeutschland.com। ২০১৩-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-২৩ 
  2. "Filmfest München"। Filmfest-muenchen.de। ২০১৩-১২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-২৩ 
  3. "Kultur Nachrichten aus München und Bayern" (জার্মান ভাষায়)। Merkur-online.de। ২০১৩-১১-১৯। ২০১৩-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-২৩ 
  4. "Profil & Geschichte - Filmfest München"। Filmfest-muenchen.de। ২০১৩-১২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-২৩ 
  5. "Profil und Geschichte"। Filmfest-muenchen.de। ২০১৩-১২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-২৩ 
  6. "Filmfest München"। Filmfest-muenchen.de। ২০১৩-১২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-২৩ 
  7. "Awards"। Filmfest-muenchen.de। ২০১৩-১০-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-২৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা