মাহবুবা রহমান

একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি

মাহবুবা রহমান বাংলাদেশের অন্যতম কণ্ঠশিল্পী । পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশকের রেডিও ও চলচ্চিত্রের অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম মাহবুবা রহমান। তিনি চলচ্চিত্রকার, শিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও অভিনেতা প্রয়াত খান আতাউর রহমানের স্ত্রী।

মাহবুবা রহমান (মাহাবুবা হাসনাত)
জন্ম
চট্টগ্রাম,ব্রিটশ ভারত (বর্তমান   বাংলাদেশ)
পেশাসঙ্গীতশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গী
সন্তানরুমানা ইসলাম

অতীত জীবনসম্পাদনা

ব্রিটিশের শাসন। সেই যুগে চট্টগ্রামে মাহাবুবা রহমানের জন্ম। চট্টগ্রামের আর্ট সঙ্গীত সমিতিতে তিনি বেশ কয়েক বছর গান শেখেন। তখনকার দিনগুলোতে সঙ্গীত অনুষ্ঠানগুলো ঘরোয়া আসর মুখর করে রাখত। তাই অল্প বয়স থেকেই তিনি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিয়ে গান করতেন। গিরিন চক্রবর্তী, সুরেন চক্রবর্তী, সুধীরলাল চক্রবর্তীর মতো গুণী শিল্পীদের কাছে তার গান শেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের কাছে গান শিখেছিলেন তিনি। শৈশবেই চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। একেই পিসি গোমেজ এবং মোমতাজ আলী খানের কাছে কিছুদিন গান শেখেন। ১৯৪৭ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ঢাকা কেন্দ্র থেকে তার গান সর্বপ্রথম প্রচার হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে মাহাবুবা রহমান একবার জানিয়েছিলেন, বয়সে তখনও আমি ছোট। ওস্তাদ শম্ভু পাল বললেন, শাড়ি পরে গান করো, দেখবে তোমাকে একটু বড় বড় লাগবে। তার কথায় সেদিন শাড়ি পরে রেডিওতে গান করতে গিয়েছিলাম। প্রথম দিন একটি ভজন গেয়েছিলাম। ‘মন তু প্রেম নগর মে’— গানের প্রথম কলি এটাই ছিল। মাহাবুবা তখন নিভা রানী রায় নামে বেতারে গান করতেন। ১৯৪৭ সাল থেকেই রেডিওতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। রাগপ্রধান, ভজন, কীর্তন, নজরুলগীতি, আধুনিক প্রভৃতি গানই বেশি করেছিলেন। গীত, গজল শিখেছিলেন ওস্তাদ কাদের জামেরী ও ওস্তাদ ইউসুফ কোরেশীর কাছে। এদিকে মমতাজ আলীর কাছে শিখেছিলেন লোকসঙ্গীত। সেই ১৯৪৭ সালে নিভা রানীর বাসা ছিল ঢাকার যোগীনগরে। মাহাবুবা রহমান ১৯৪৮ সালে ঢাকার কামরুননেসা গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর আর পড়াশোনা করেননি।

তারপর সঙ্গীতে এতটা ডুবে যান যে আর পড়াশোনা করার সময়ই পাননি। তার গান শুনে তখনকার সঙ্গীত পরিচালক, শিল্পী ও শ্রোতারা বলতেন—এ কণ্ঠ যেন অবিকল উত্পলা সেনের মতো। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষার্ধে নায়ক আনিস ওরফে খান আতাউর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর তাদের বিয়ে হয়। সেই সময় খান আতা গান লিখতেন আর সে গানে তিনিই কণ্ঠ দিতেন। রেকর্ডের যুগে শতাধিক গান মাহাবুবা রেকর্ডে গেয়েছিলেন। মমতাজ আলী খানের সঙ্গে তার গাওয়া —‘যাইয়ো না যাইয়ো না বন্ধুরে’ এবং ‘ও বৈদেশী নাগর’ গান দু’খানি এক সময় ছিল মানুষের মুখে মুখে।

সঙ্গীতে অবদানসম্পাদনা

মাহবুবা রহমান মূলত পল্লিগীতি ও আধুনিক গানের শিল্পী । তাঁর গাওয়া অসংখ্য গান অসংরক্ষিত আছে ।

এ দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। আবদুল জব্বার খানের এই ছবিতে সমর দাসের সুরে মাহবুবা রহমান গেয়েছিলেন ‘মনের বনে দোলা লাগে’ গানটি। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আরও রয়েছে খান আতাউর রহমানের সুরে জহির রায়হানেরকখনো আসেনি’ ছবির ‘নিরালা রাতের প্রথম প্রহরে’, ‘তোমাকে ভালোবেসে অবশেষে কী পেলাম’,

‘মুখ ও মুখোশ’ ছবির পর ‘জাগো হুয়া সাভেরা’, ‘আসিয়া’, ‘এ দেশ তোমার আমার’, ‘যে নদী মরুপথে’, ‘কখনো আসেনি’, ‘সূর্যস্নান’, ‘সোনার কাজল’, ‘রাজা সন্ত্রাসী’; ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা,; ‘সাত ভাই চম্পা’ প্রভৃতি ছবিতে গান করেছিলেন মাহাবুবা রহমান।[১]

‘আসিয়া’ (১৯৬০) ছবিতে গেয়েছিলেন—‘আমার গলার হার খুলে নে ওগো ললিতে/আমার হার পরে আর কি লাভ হবে সখি...’।

‘সাত ভাই চম্পা’ ছবির ‘আগুন জ্বালাইস না আমার গায়’।

এমন বহু গানের গেয়েছেন মাহবুবা রহমান ।

উল্লেখযোগ্য গানসমূহসম্পাদনা

  • ‘আগে জানি না রে দয়াল’,
  • ‘আমার মন ভালো লাগে না গো প্রাণ ভালো লাগে না গো’,
  • ‘পাখি উইড়া যায় রে’

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "নিভৃতচারী এক শিল্পীর কথা"প্রথম আলো। ২০১৫-০৭-০২। ২০২০-০২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-২৬