মামণি রয়সোম গোস্বামী

ভারতীয় লেখিকা

মামণি রয়সোম গোস্বামী (অসমীয়া: মামণি ৰয়ছম গোস্বামী) আসামের একজন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রাপ্ত সাহিত্যিক। তার প্রকৃত নাম ইন্দিরা গোস্বামী। তিনি মামণী বাইদেউ নামেও পরিচিত। মাতৃভাষা অসমীয়া ছাড়াও ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন। তিনি ১৯৮২ সনে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার[৩] ও ১৯৯৯ সনে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার [৪] লাভ করেন। তিনি ভারতের প্রথম Principal Prince Claus Laureate (২০০৮) ছিলেন।[৫]

মামণি রয়সোম গোস্বামী
জন্মইন্দিরা গোস্বামী
(১৯৪১-১১-১৪)১৪ নভেম্বর ১৯৪১
গুয়াহাটি, আসাম
মৃত্যু২৯ নভেম্বর ২০১১(2011-11-29) (বয়স ৬৯)[১]
গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, গুয়াহাটী, অসম, ভারত[২]
পেশালেখক, সম্পাদক, কবি, অধ্যাপিকা ও সমাজকর্মী
জাতীয়তাভারতীয়
সময়কাল১৯৪১-২০১১
ধরনঅসমীয়া সাহিত্য
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি-দঁতাল হাতীর উঁয়ে খোয়া হাওদা
-চিন্নমস্তার মানুহটো
-তেজ আরু ধূলিরে ধূসরিত পৃষ্ঠা
দাম্পত্যসঙ্গীমাধবেন রয়সোম আয়েংগার

শৈশব ও শিক্ষা সম্পাদনা

1941 সনে গুয়াহাটিতে মামণি রয়সোম জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম উমাকান্ত গোস্বামী ও মাতার নাম অম্বিকা দেবী। উমাকান্ত গোস্বামী একসময়ে গুয়াহাটির কটন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। মামণি বয়সোম তার বাল্যকাল আমরঙা সত্রে অতিবাহিত করেন। তার কাকা চন্দ্রকান্ত গোস্বামী সত্রের সত্রাধিকার ছিলেন। গুয়াহাটির লতাশিল প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৎকালীন অসমের রাজধানী শিলংয়ের পাইন মাউন্ট স্কুল ও গুয়াহাটির তরিণীচরণ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মামণি রয়সোম শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি গুয়াহাটির সন্দিকৈ বালিকা বিদ্যালয় থেকে আই.এ পাস করেন1950 সনে অসমীয়া ভাষা বিষয়ে কটন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। 1960 সনে তিনি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।

বৈবাহিক জীবন সম্পাদনা

১৯৬২ সনে হিন্দুস্তান কন্সট্রাকশন কম্পানীর প্রকৌশলী হিসেবে ব্রহ্মপুত্রের শরাইঘাট সেতু নির্মানের জন্য মাধবেন রয়সম অসমে আসেন। ১৯৬৩ সনের চৈত্র মাসে তিনি মামণী রয়সোমকে বিবাহের প্রস্তাব দেন।[৬] ১৯৬৫ সনে অক্টোবর মাসে জগলীয়ার পাড়ের সত্রে হিন্দু রীতি মতে তারা বিবাহ সম্পর্কে আবদ্ধ হন। তারপর তিনি স্বামীর সহিত কাশ্মীরে গমন করেন। বিবাহের ১৮ মাস পর ১৯৬৭ সনের ১৫ এপ্রিল তারিখে এক পথ দূর্ঘটনায় মাধবেন রয়সমের মৃত্যু হয়।[৬] এই ঘটনা মামণি রয়সমের জীবন ও সাহিত্যে সুদুরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে। বিপর্যস্ত্য মামণী রয়সোম মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সনে প্রকাশিত আধা লেখা দস্তাবেজ নামক আত্মজীবনীতে লিখেছেন যে হতাশাগ্রস্ত হয়ে তিনি আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য শৈশবের স্মৃতি ও পিতার চিঠি ছাড়া আর কোন সম্বল ছিলনা।[৭] ১৯৬৮ সনে তিনি গোয়ালপারার সৈনিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা আরম্ভ করেন। কিছুদিন পর তিনি শিক্ষক উপেন্দ্র চন্দ্র লেখারুর পরামর্শক্রেমে বৃন্দাবনে থাকার জন্য প্রস্থান করেন।[৮] ১৯৬৯ সনে বৃদাবন ইন্সটিটিউড অফ ফিলোসফীতে উপেন্দ্র চন্দ্র লেখারুর সহিত গবেষণা আরম্ভ করেন। বৃন্দাবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে তিনি তার অন্যতম শক্তিশালী উপন্যাস নীলকণ্ঠ ব্রজ রচনা করেন। তিনি তার আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস গংগার পরা ব্রহ্মপুত্র এখানেই রচনা করেন।[৯]

১৯৭১ সনে তিনি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভারতীয় ভাষা-সাহিত্য অধ্যয়ন বিভাগে অসমীয়া ভাষার অধ্যাপিকা রুপে যোগদান করেন। এখান থেকে তিনি বিভাগের প্রধানরুপে অবসর গ্রহণ করেন। তুলসীদাসের রামচরিতমানস ও মাধব কন্দলীর অসমীয়া রামায়ণের তুলনামুলন অধ্যয়নের জন্য তিনি ১৯৭৩ সনে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।[১০]


মামণি রয়সম গোস্বামী lung infection সহ আরও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৮মাস সংকটজনক অবস্থায় ছিলেন।[১১] প্রথমে তাকে গুরগাওয়ের চিকিৎসালয়ে ভর্তী করানো হয়েছিল যদিও অবশেষে গুয়াহাটি চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে স্থানান্তর করানো হয়েছিল।[১১] ২০১১ সনের ২৯ নভেম্বর তারিখে সকাল ৭:৪৬ সময়ে অন্তিম নিশ্বাস ত্যাগ করেন।[২][১২]

শান্তিদূত সম্পাদনা

২০০৪ সনে মামণি রয়সোম গোস্বামী অসমের বিছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (ULFA)-কে হিংসা পরিত্যাগ করার আহ্বান জানান ও দলটির নেতৃবৃন্দ ও সরকারের সহিত আলোচনা অনুস্থিত করার প্রচেষ্টা করেছিলেন।[১৩] সেই প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানিয়ে সংগঠনটি অসমের বিশিষ্ট নাগরিক ও প্রচার মাধ্যমের প্রতিনিধিদের নিয়ে People’s Consultive Group (PCG) গঠন করে। PGG-এর মাধ্যমে সংগঠনটি সরকারের সহিত আলোচনা অনুষ্ঠিত করছিল।[১৪] এখানে একবার ভারতের প্রধান মন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং অংশগ্রহণ করেছিলেন। মামণি রয়সোম গোস্বামীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনটির সকল মুখ্য দাবীর জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে আলোচনা করার জন্য পত্র প্রেরন করে।[১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Jnanpith award winning Assamese litterateur Indira Goswami dies"। Times of India। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৯, ২০১১ 
  2. "Mamoni Raisom Goswami passes away"। Times of Assam। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৯, ২০১১ 
  3. Sisir Kumar Das, Sahitya Akademi। "A history of Indian literature: 1800-1910 Western impact: Indian responce"। Google Books। সংগ্রহের তারিখ December 01, 2011  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. Jnanpith award presented; ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ নভেম্বর ২০১২ তারিখে The Hindu 25/02/2002; Retrieved 1/12/2011
  5. "Principal Prince Claus Award for Indira Goswami In a rare honour,"। ২৭ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  6. "মামণি রয়ছমর যুগ্মজীৱন"। দৈনিক জনমভূমি: ১০ পৃষ্ঠা। ২০১১।  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  7. Mamoni Raisom Goswami passes away,[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] By Syed Zarir Hussain; Retrieved 1/12/2011
  8. "Prime News Tv"। Prime News Tv। ২০১২-০১-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০১-৩০ 
  9. Principal Prince Claus Award 2008[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], Principal Prince Claus Award 2008, Indira Goswami, Retrieved 1/12/2011
  10. Dr Indira Goswami-Assam's fiery pen ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে, By Shehar Bano Khan, Retrieved 1/12/2011
  11. "Mamoni Raisom Goswami - Profile, Biography, Photos of Famous Assamese litterateur"। Assam Journal। মে ২, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২২, ২০১৩  অজানা প্যারামিটার |3= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  12. Asomiya Writer Indira Goswami Dead,Three-Day State Mourning In Assam; 29 Nov 2011; Retrieved 1/12/2011
  13. SANGEETA BAROOAH PISHAROTY (আগস্ট ১১, ২০০৫)। "Scripting a recipe for peace"hindu.com। The Hindu। মার্চ ৫, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২২, ২০১৩ 
  14. "Mamoni tried to start ULFA peace talks"the assam tribune। Guwahati,। the assam tribune। নভেম্বর ৩০, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২২, ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]