মান্তু ঘোষ

ভারতীয় টেবিল টেনিস খেলোয়াড়

মান্তু ঘোষ (জন্ম ১৯৭৩ / ১৯৭৪) পশ্চিমবঙ্গের একজন ভারতীয় প্রাক্তন টেবিল টেনিস খেলোয়াড়। দুবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হিসাবে, মান্তু এখন ভারতের টেবিল টেনিস মহিলা দলের প্রশিক্ষক এবং ক্রীড়া প্রশাসক। পূর্বে তিনি রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে বিভিন্ন ক্ষমতায় কাজ করেছেন। তিনি ১৯৯০ সালে ১৬ বছর বয়সে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে স্থান পান। ২০০২ সালে, তাঁর কৃতিত্ব যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রক এবং ভারত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত হয়েছিল এবং তিনি অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।

মান্তু ঘোষ
২০১৯ সালে শিলিগুড়ির ওয়াইএমএ ক্লাবে মান্তু
জন্ম১৯৭৩/১৯৭৪
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাটেবিল টেনিস প্রশিক্ষক
ক্রীড়া প্রশাসক
পরিচিতির কারণটেবিল টেনিসে দুবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন
পুরস্কারঅর্জুন পুরস্কার (২০০২)
বঙ্গভূষণ (২০১৩)

জাতীয় ক্যারিয়ার সম্পাদনা

মান্তু হলেন শিলিগুড়ির প্রথম বিশিষ্ট টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের একজন, এই অঞ্চল থেকে অনেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিয়ান আসার পরে একে এখন ভারতের টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের "আঁতুড়ঘর" (নার্সারি) হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[১]

মান্তু দেশবন্ধু স্পোর্টিং ইউনিয়নে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন এবং ক্লাবে প্রশিক্ষণার্থী থাকা অবস্থায় ১৯৮৮ সাব-জুনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন।[২] তিনি ১৯৯০ সালে জুনিয়র জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। একই বছর তিনি রাজস্থানের জয়পুরে অনুষ্ঠিত ৫২তম সিনিয়র জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[৩][৪] এই শিরোপা জয় করে, তিনি ১৬ বছর বয়সে ভারতের সর্বকনিষ্ঠ জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। এটি একটি কৃতিত্ব যা লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে।[৪][৫] জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর জয় শিলিগুড়ির আরও খেলোয়াড়দের টেবিল টেনিস খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল।[৬] ১৯৯৩ সালে, তিনি ৫৫তম সিনিয়র জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে একক শিরোপা জিতেছিলেন।[৬][৭]

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সম্পাদনা

মান্তু ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ২০০২ কমনওয়েলথ গেমসে টেবিল টেনিসের সমস্ত ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি একক প্রথম রাউন্ড অতিক্রম করতে ব্যর্থ হন;[৮] ইন্দু নাগাপট্টিনাম আর- এর সাথে জুটি বেঁধে ডাবলসের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছেছিলেন, এবং শেষ পর্যন্ত পঞ্চম স্থানে পেয়েছিলেন।[৯] তিনি সুব্রামানিয়াম রমনের সাথে জুটি বেঁধে মিশ্র দ্বৈতের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছেছিলেন। [১০] মান্তু, মৌমা দাস, ইন্দু নাগাপট্টিনম আর., নন্দিতা সাহা এবং পৌলোমি ঘটকের সমন্বয়ে ভারতীয় দল ষষ্ঠ স্থানে ছিল।[১১]

মান্তু ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২০০৩ সালের বিশ্ব টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। ত্তিনি একক ও দ্বৈত দুটি ইভেন্টেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। মালয়েশীয় খেলোয়াড় ইয়াও লিন জিং মান্তুকে এককদের প্রথম রাউন্ডে ১২-১০, ১১-৬, ১১-৩, ১১-৫ এ পরাজিত করেন; মৌমা দাস এবং মান্তু জুটি সিঙ্গাপুরের জুয়েলিং ঝাং এবং তান পায় ফার্নের বিরুদ্ধে ১১-৮, ৭-১১, ৫-১১, ২-১১, ১১-৮, ৭-১১ ব্যবধানে দ্বৈত খেলায় হেরে যান।[১২]

অবসরের পর সম্পাদনা

অবসর নেওয়ার পর, মান্তু খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন এবং রাজ্য ও জাতীয় স্তরে টেবিল টেনিস সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থার সদস্য হয়ে ওঠেন। তিনি শিলিগুড়িতে ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশনের টেবিল টেনিস কোচিং সেন্টারের প্রধান প্রশিক্ষক।[১৩] তিনি মহিলা দলের জাতীয় কোচ ছিলেন এবং ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসের জন্য দলকে প্রস্তুত করেছিলেন।[১৪] তিনি সৌম্যজিৎ ঘোষ এবং অঙ্কিতা দাস উভয়কেই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন, যাঁরা লন্ডনে ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য তাঁদের নিজ নিজ বিভাগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।[১][১৫][১৬]

২০১৬ সালে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে নর্থ বেঙ্গল বোর্ড ফর ডেভেলপমেন্ট অফ স্পোর্টস অ্যান্ড গেমসের ভাইস-চেয়ারপার্সন হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।[১৭] বাইচুং ভুটিয়াকে এর চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এই বোর্ডটির অফিস কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অবস্থিত। এটি উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলায় খেলাধুলার উন্নয়ন ও প্রচারের জন্য কাজ করে।[১৭]

২০১৭ সালে, তিনি ভারতের টেবিল টেনিস ফেডারেশনের যুগ্ম-সচিব হন।[১৮] তিনি বেঙ্গল স্টেট টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক এবং উত্তরবঙ্গ টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি।[১৯]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

২০০২ সালে, মান্তু তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রক এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে অর্জুন পুরস্কার পান।[২০] ২০১৩ সালের ২০শে মে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি নাগরিক সম্মান বঙ্গভূষণ উপাধি লাভ করেন।[২১]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

মান্তু পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির বাসিন্দা। তিনি টেবিল টেনিস কোচ সুব্রত রায়কে বিয়ে করেছেন।[২২] [২৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Siliguri hailed as 'Bhiwani of Indian TT' after twin Oly berth"Zee News। ২২ এপ্রিল ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২০ 
  2. "Social Institutions and their Impact on Urban Life – Sporting Clubs" (পিডিএফ)Shodhganga। পৃষ্ঠা 146। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২০ 
  3. "Table Tennis – Junior/ Senior Titles in a Year"Limca Book of Records। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  4. Limca Book of Records। Bisleri Beverages Limited। ২০০৬। পৃষ্ঠা 452। 
  5. Sharma, Ramu (৩১ মে ২০০৩)। "Sustained mediocrity in TT"The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২০ 
  6. Banerjee, Ruben (৩১ জুলাই ১৯৯৫)। India Today https://www.indiatoday.in/magazine/offtrack/story/19950731-siliguri-obsession-with-table-tennis-underlies-its-domination-of-the-sport-807560-1995-07-31। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২০  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  7. Mitra, H. N. (২০০০)। The Indian Annual Register A Digest Of Public Affairs Of India During The Period 1919-1947। Gyan Publishing House। পৃষ্ঠা 143। আইএসবিএন 8121202132 
  8. "Table Tennis Singles – Women Manchester 2002"Thecgf.comCommonwealth Games Federation। ১৯ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  9. "Table Tennis Doubles – Women Manchester 2002"Thecgf.comCommonwealth Games Federation। ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  10. "Table Tennis Doubles – Mixed Manchester 2002"Thecgf.comCommonwealth Games Federation। ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  11. "Table Tennis Team – Women Manchester 2002"Thecgf.comCommonwealth Games Federation। ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  12. "Indian challenge ends at world TT champs"The Times of India। New Delhi। Press Trust of India। ২২ মে ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০২০ 
  13. "Home is where the heat is"The Indian Express। ১৩ জানুয়ারি ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২০ 
  14. Rathee, Aabha (২৯ আগস্ট ২০০৭)। "Juniors not in awe of big names now: Mantu"The Indian Express। New Delhi। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২০ 
  15. "Siliguri hailed as 'Bhiwani of Indian TT' after twin Oly berth". Zee News. 22 April 2012. Retrieved 25 July 2020.
  16. Srivastava, Taruka (১৬ জানুয়ারি ২০১৩)। "Interview with Soumyajit Ghosh: "My goal is to be in the top 30""Sportskeeda। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২০ 
  17. "Baichung inaugurates NBBDSG, Mantu & Mann absent"News Time Today। Siliguri। ৪ জুলাই ২০১৬। ২৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২০ 
  18. "Dushyant Chautala is new TTFI president"The Times of India। Gurugram। Press Trust of India। ৩০ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  19. Bhattacharya, Nilesh (৮ জুন ২০১৯)। "Factions in Bengal table tennis brought under same umbrella"The Times of India। Kolkata। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  20. "List of Arjuna Awardees" (পিডিএফ)Yas.nic.inMinistry of Youth Affairs and Sports। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  21. "Chief Minister's Office – News"Government of West Bengal। ২০ মে ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  22. "Ghosh is 25th Arjuna!"Ttfi.orgTable Tennis Federation of India। ২৬ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০ 
  23. Karhadkar, Amol (২০ জুন ২০১৭)। "Selector's coaching raises eyebrows"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২০