মাদারীপুর মিউজিয়াম

মাদারীপুর মিউজিয়াম বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলায় অবস্থিত একটি জাদুঘর।[১] জাদুঘরটি জেলা প্রশাসন, মাদারীপুর কর্তৃক ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রি. তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয়।[২][৩] এটি মাদারীপুর জেলার প্রথম জাদুঘর। জাদুঘরটি শহরের দৃষ্টিনন্দন শকুনী লেইকের উত্তরপাড়ে অবস্থিত। জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন ঐতিহাসিক ট্রেজারি ভবনকে জাদুঘরে রুপান্তর করে জাদুঘরটি চালু করা হয়েছে।

মাদারীপুর মিউজিয়াম
মাদারীপুর মিউজিয়াম ভবনের সামনের দৃশ্য
স্থাপিত৩১ মার্চ ২০২৩ (2023-03-31)
অবস্থানমাদারীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ
ধরনইতিহাস জাদুঘর
সংগ্রহ
  • প্রত্নতত্ত্ব
  • ধ্রুপদী
  • অলংকারিক এবং সমসাময়িক শিল্প
  • ইতিহাস এবং প্রাকৃতিক ইতিহাস
  • নৃবিদ্যা
  • বিশ্ব সভ্যতা
প্রতিষ্ঠাতাজেলা প্রশাসন, মাদারীপুর
সভাপতিমোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান
তত্ত্বাবধায়কমো: নাজমুল ইসলাম
মালিকজেলা প্রশাসন, মাদারীপুর

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

মাদারীপুর জেলায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবী অনেক পুরাতন। ইতিহাস সমৃদ্ধ এই জেলাতে ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক উপাদান সংরক্ষণের জন্য কোন প্রতিষ্ঠান না থাকায় জেলার সচেতন নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ও মহান মুক্তিযুদ্ধে এই জেলার অবদান সংরক্ষণের দাবীকে সামনে রেখে মাদারীপুর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইতিহাস সম্পাদনা

পুরাতন ট্রেজারি ভবনে এই জাদুঘর অবস্থিত। মাদারীপুর জেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই ভবনটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে বিবেচনা করা হয়।বিশেষত মাদারীপুর জেলায় মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল হায়াত ও তৎকালীন মহকুমা ট্রেজারি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতো মাদারীপুর জেলাতেও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয়। স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকগণ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও প্রয়োজনীয় অস্ত্রের অভাবে প্রশিক্ষণ শুরু করা যাচ্ছিল না। এই পরিস্থিতিতে মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল হায়াত এগিয়ে আসেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র তুলে দেন। প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেজারি হতে অস্ত্র নিয়ে যেতেন ও প্রশিক্ষণ শেষে ট্রেজারিত অস্ত্র রেখে যেতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে মহকুমা প্রশাসকের এই সাহসী ভূমিকার ফলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা নিয়ে যায় ও প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। একই সাথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্রেজারি ভবন দখল করে ক্যাম্প স্থাপন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই ভবন পুনরায় ট্রেজারি ভবন হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকের শুরুতে জেলা কালেক্টরেট শকুনী লেক পাড় হতে স্থানান্তরিত হয় প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বর্তমান স্থানে চলে যায়, ফলে জেলা ট্রেজারি নতুন কার্যালয়ে স্থানান্তরিত হয়। কালক্রমে পুরাতন ট্রেজারি ভবন পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয় ও বেদখল হয়ে যায়। এই ভবন সংরক্ষণের জন্য অনেক আগে থেকেই মাদারীপুর জেলার সচেতন নাগরিক সমাজের মধ্যে দাবী উঠেছিল। জেলা প্রশাসনের জাদুঘর স্থাপনের ফলে ভবনটিকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।

পরিচালনা পরিষদ সম্পাদনা

মাদারীপুর মিউজিয়াম পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা পরিষদ রয়েছে। জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দপ্তরপ্রধান ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদেরকে নিয়ে এই পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। মাদারীপুর জেলার জেলা প্রশাসক এই পরিচালনা পরিষদের সভাপতি। মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান, জেলা প্রশাসক, মাদারীপুর বর্তমানে পরিচালনা পরিষদ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

কিউরেটর সম্পাদনা

মাদারীপুর মিউজিয়াম এ বর্তমানে একজন কিউরেটর ও একজন সহকারী কিউরেটর দায়িত্ব পালন করছেন। মো: নাজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মাদারীপুর জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাকালীন কিউরেটর।

ট্রাস্টি সম্পাদনা

মাদারীপুর জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এই মিউজিয়ামের ট্রাস্টি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছেন। জনাব মোজাম্মেল হক খান, সাবেক কমিশনার, দূর্নীতি দমন কমিশন, বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব নুরে আলম বাবু চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান , মাদারীপুর পৌরসভা অন্যতম ট্রাস্টি।

সংগ্রহ সম্পাদনা

এই মিউজিয়ামে ইতোমধ্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রতিথযশা চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন এর শতাধিক চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া জেলার অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থান পেয়েছে। জাদুঘরের জন্য উপকরণ সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "দীর্ঘ ৯ মাস পর চালু হলো মাদারীপুর মিউজিয়াম"banglanews24.com। ২০২৪-০১-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৪ 
  2. "মাদারীপুরে মিউজিয়াম উদ্বোধন"jjdin (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৪ 
  3. "মাদারীপুর মিউজিয়াম: ইতিহাস সংরক্ষণের এক অনবদ্য প্রতিষ্ঠান"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৪