মাখনলাল সেন
মাখনলাল সেন (১১ জানুয়ারি ১৮৮১ – ১১ মে ১৯৬৫ ) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বিপ্লবী, অনুশীলন সমিতির নেতা, সাংবাদিক ও সম্পাদক । তিনি বিপ্লবী সাংবাদিকতার আদর্শ স্থাপন করেছেন। [১]
মাখনলাল সেন | |
---|---|
জন্ম | ১১ জানুয়ারি ১৮৮১ |
মৃত্যু | ১১ মে ১৯৬৫ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৬৪ সাল পর্যন্ত) ভারত |
পেশা | রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সম্পাদক |
নিয়োগকারী | আনন্দবাজার পত্রিকা, "জার্নালিস্ট কর্নার" , ভারত চাকরি করেন |
পরিচিতির কারণ | ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নায়ক |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | সোনারং ন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা |
রাজনৈতিক দল | অনুশীলন সমিতি |
আন্দোলন | ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন |
পিতা-মাতা |
|
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনামাখনলাল সেনের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রামে পিতার কর্মস্থলে। পিতা গুরুনাথ সেন সেসময় অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন ছিলেন সেখানে। পৈতৃক বাড়ি ছিল মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার সোনারং য়ে । পড়াশোনা চট্টগ্রামেই।
বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ
সম্পাদনাএম.এ.পড়ার সময় মাখনলাল স্বদেশী আন্দোলন কালে বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে ঢাকা যান এবং অনুশীলন সমিতির নেতা পুলিনবিহারী দাস গ্রেফতার হবার পর তিনি সমিতির নেতা হন। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে তার নামে ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা বের হলে তিনি আত্মগোপন করে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানে ও কাঁথিতে প্রবল বন্যা হলে তিনি বাঘা যতীনের সহায়তায় বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে যান। এই ব্যাপারে তৎকালীন বাংলা সরকারের সঙ্গে প্রচন্ড বিবাদ শুরু হয়। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত রক্ষা আইন রচিত হলে মাখনলাল চট্টগ্রামের টেকনাফ অঞ্চলে গ্রেফতার হন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পেয়ে কলকাতায় আসেন এবং কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেন। অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধীর সমর্থনে এগিয়ে যান। এরপর নাগপুর কংগ্রেসে অসহযোগ নীতি গৃহীত হলে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অনুরোধে গৌড়ীয় সর্ববিদ্যায়তনের ভার গ্রহণ করেন। পূর্ববঙ্গের অধুনা বাংলাদেশের সোনারং ন্যাশনাল স্কুলের তিনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
সাংবাদিকতায় ভূমিকা
সম্পাদনাবিপ্লবীজীবনের বন্ধু সুরেশচন্দ্র মজুমদারের অনুরোধে তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক হন কিছুদিনের জন্য। ওই বছরের ১২ ই নভেম্বর রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সের প্রতিবাদে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের আদেশ অমান্য করে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকা ছেড়ে "জার্নালিস্ট কর্নার" নামে সাংবাদিক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ভারত নামে এক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৪২ এর 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের সময় তিনি "ভারত" পত্রিকা মারফত বিপ্লবী সাংবাদিকতার চূড়ান্ত আদর্শ স্থাপন করেন। পত্রিকাটি রাজরোষেও পড়ে এবং মাখনলাল আত্মগোপন করতে বাধ্য হন। কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং তিনি ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অন্তরীণ থাকেন। মুক্তি পেয়ে পুনরায় "ভারত" পত্রিকা প্রকাশ করলেও তিনি দীর্ঘদিন চালাতে পারেননি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাখনলাল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে যুক্ত হয়েছিলেন।
জীবনাবসান
সম্পাদনামাখনলাল সেন ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মে প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ৫৬৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬