মহসিন শস্ত্রপাণি (১৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৫ - ২ মার্চ ২০১৯) বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক। তিনি মার্কিসীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানে দীক্ষিত। যৌবনের প্রারম্ভেই তিনি সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার অবসান এবং মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে পড়েন। তিনি বাংলাদেশের গণ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। চীনা লেখক লু স্যুন সম্পর্কে গবেষক।[১]

মহসিন শস্ত্রপাণি
মহসিন শস্ত্রপাণি
জন্ম১৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৫
মৃত্যু২ মার্চ ২০১৯
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পেশালেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ
পরিচিতির কারণসাহিত্য ব্যক্তি; রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক,
উল্লেখযোগ্য কর্ম
লাল পতাকার নিচে সাংস্কৃতিক আন্দোলন, 'জনশ্রুতি', দেশের নাম চীন, বিপ্লবী হো চি মিন, ধানমুট, তাদের যেমন জেনেছি, মহাবিপ্লবের পদধ্বণি, শবের মিছিলে জীবনের জয়গান
রাজনৈতিক দলকমিউনিস্ট পার্টি
আন্দোলনগণসাংস্কৃতিক আন্দোলন
পিতা-মাতা
  • সৈয়দ আবদুল মুত্তালিব (পিতা)
  • জাহানারা খাতুন (মাতা)

জীবন সম্পাদনা

মহসিন শস্ত্রপাণি-র জন্ম ব্রিটিশ ভারতে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে তার মাতৃক নিবাস বর্তমান বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কাজীরবেড় নামক গ্রামে। তার পিতা সৈয়দ আবদুল মুত্তালিব ও মাতা জাহানারা খাতুন। পিতা একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন। মহসিন শস্ত্রপাণি পিতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে প্রথম। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম ঢাকায় আসেন। কিছুদিন পরে আবার ঢাকার বাইরে চলে যান। সে সময়টাতে কুষ্টিয়া, যশোরেই বেশিরভাগ সময় কাটান। তিনি পরে ১৯৬৬ সাল থেকে পুরোপুরি ঢাকায় বসবাস করা শুরু করেন। জীবনের প্রধান একটি অংশ, প্রায় ৩০ বছর, তিনি একাধারে সাংবাদিকতা ও প্রকাশনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। যে সকল পত্রিকায় তিনি কাজ করেছেন সেগুলো হলো: দৈনিক আজাদ, দৈনিক জনপদ এবং সাপ্তাহিক গণবাংলা। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি মাসিক উন্মেষ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও আমৃত্যু তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকা নয়া দুনিয়া'র (অনিয়মিত) সম্পাদক-প্রকাশক ছিলেন।[১] তিনি বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি দুবার চীন ভ্রমণ করেন, চীনা কম্যুনিষ্ট পার্টির আমন্ত্রণে। এছাড়া তিনি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, হল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, নেপাল, ভুটান, ভারত ভ্রমণ করেছেন।

লেখালেখি ও প্রকাশনা সম্পাদনা

তার সাড়া জাগানো একটি গল্পসংকলন ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় যার নাম জনশ্রুতি। পরে এটার দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস অন্তরিত লোকালয় মুক্তিযুদ্ধের সময় মূল কপিসহ ছাপানো সব কপি বিনষ্ট হয়, এখন আর কোন কপি নেই। তাঁর আরো একটি উপন্যাস জোছনায় কালো মেঘ যা পরে মূল নাম ধানমুট নামে ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৪টি (কয়েকটি সম্পাদিতসহ)।

তাঁর রচিত অন্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো:

১। জনশ্রুতি (ছোট গল্পসংকলন) ১৯৮০;

২। অন্তরিত লোকালয় উপন্যাস, ১৯৭১ (কপি খুঁজে পাওয়া যায় না); ৩। "ধানমুট" (যা আগে জোছনায় কালো মেঘ নামে প্রকাশিত উপন্যাস, ফেব্রুয়ারি ২০১৮; ৪। আজগুবি শিশু; ব্যঙ্গগল্প; ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ ৫। বিপ্লবী হো চি মিন'; জীবনীগ্রন্থ (প্রথম প্রকাশ - মে ১৯৭২, তৃতীয় সংস্করণ - ফেব্রুয়ারি ২০০০); ৬। মহাবিপ্লবের পদধ্বনি - নাটিকা, জানুয়ারি ১৯৭০; ৭। শবের মিছিলে জীবনের গান - নাটিকা, ১৯৭১; ৮। প্রস্তুতি - নাটিকা, ১৯৭০; ৯। লাল তারার কাহিনী চীনা কাহিনীর নাট্যরূপ; ১৯৭৯ ১০। আজালিয়া পর্বত চীনা কাহিনীর নাট্যরূপ; ১৯৭৮ ১১। দেশের নাম চীন ভ্রমণ কাহিনী - ১৯৮৫; ১২। এডগার স্নো - সংক্ষিপ্ত জীবনী; ১৩। শেষ যুদ্ধের ডাক - প্রবন্ধগ্রন্থ, - ১৯৯৯, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৫; ১৪। লাল পতাকার নিচে সাংস্কৃতিক আন্দোলন - প্রবন্ধগ্রন্থ, ২০১৫ (বাংলা ১৪২৩); ১৫। সংস্কৃতি আন্দোলন পক্ষ ও বিপক্ষ - প্রবন্ধগ্রন্থ, বাংলা ১৪১৪; ১৬। তাদের যেমন জেনেছি - প্রবন্ধগ্রন্থ, ২0১৬; ১৭। উত্তর দেশের দৃশ্য - নাটিকা; ১৯৭১ ১৮। মহসিন শস্ত্রপাণি-র চারটি গল্প - ছোটগল্প সংকলণ, বাংলা ১৪১৬; ১৯। সুরমা উপত্যকার শংখচিল (সম্পাদনা, বাংলা বৈশাখ ১৪১৯); ২০। কাগমারী সম্মেলন স্মারক গ্রন্থ (সম্পাদনা, মে ২০১১);

২১। মজলুম জননেতাঃ মওলানা ভাসানী স্মারক-সংকলণ (সম্পাদনা, ডিসেম্বর ২০০২);

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. ’’বঙ্গসাহিত্যাভিধান, ২য় খণ্ড, ডঃ হংসনারায়ণ ভট্টাচায্র্, ফামা কেএলএমপ্রাইভেট লি: কলিকাতা, ১৯৯০, পৃ: ৪৩২-৪৩৩।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা