মমতাজ শেখ
মমতাজ শেখ (জন্ম: ১৮ নভেম্বর ১৯৮১) ভারতের একজন নারী অধিকার কর্মী, যিনি মুম্বাইয়ের পাবলিক শৌচাগারগুলিতে সমান প্রবেশের জন্য একটি সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ২০১৫ সালে বিবিসি তার অনুপ্রেরণাদায়ক ১০০ মহিলা প্রচারাভিজানের একজন হিসাবে তাকে নির্বাচিত করেছিল।
মমতাজ শেখ | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পেশা | মানবাধিকার কর্মী |
কর্মজীবন | ২০০০ – বর্তমান |
পরিচিতির কারণ | নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধ, রাইট টু পি আন্দোলন, মহিলা মণ্ডল ফেডারেশন |
জীবনের প্রথমার্ধ
সম্পাদনামমতাজ শেখ ১৯৮১ সালে মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা আবু বক্কর ছিলেন একজন গাড়িচালক এবং তিনি মালয়ালম এবং তাঁর মা মদিনা, হিন্দি ভাষাতে কথা বলেতেন। তার জন্মের পরপরই বড় ভাই রফিক সহ তার পরিবার মুম্বাই শহরতলির, চেম্বুরের বশি নাকা পাড়ায় চলে এসেছিল। [১] পারিবারিক সহিংসতার কারণে যখন মমতাজকে মামার কাছে থাকতে প্রেরণ করা হয়েছিল, তখন তিনি আশ্রয়ের পরিবর্তে গৃহস্থালী কাজ সম্পাদন করতে করতে প্রায়শই ক্ষুধার্ত হয়ে পড়তেন। [২] যখন তিনি পাঁচ বছর বয়সী ছিলেন এবং তার ভাই আট বছর বয়সী ছিলেন, তাদের বাবা রফিককে কেরালায় তাঁর পিতামাতার কাছে নিয়ে যান এবং দুবাইতে কাজ করতে যান। [১] চরম দারিদ্র্যময় কঠিন শৈশবের পরে, মমতাজ নবম শ্রেণির পরে স্কুল ছেড়ে চলে যান এবং পনেরো বছর বয়সে তার চাচা তার জন্য একটি বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। [২] [৩] বিয়ের পর তার দাম্পত্যজীবনে সমস্যা চলছিল এবং ষোল বছর বয়সে তার নিজের কন্যার জন্মের পরে মমতাজ তার এলাকায় রিসোর্স অর্গানাইজেশন কমিটির (সিওরও) সামাজিক কর্মীদের সহায়তায় পারিবারিক সহিংসতা সম্পর্কিত অনুষ্ঠানগুলিতে গোপনে বক্তৃতায় অংশ নিতে শুরু করেছিলেন। তার স্বামীর আপত্তি সত্ত্বেও তিনি এই সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিলেন এবং শিগগিরই বিবাহ বিচ্ছেদ দায়ের করার জন্য তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। [২]
পেশা
সম্পাদনা২০০০ সালে সিওআরও-র মূল দলের সদস্য হয়েছিলেন এবং ২০০৫ সালে লিডার কোয়েস্ট ফেলোশিপের জন্য নির্বাচিত হয়ে মমতাজ তার সম্প্রদায়ের অন্যান্য মহিলাদের পরামর্শদাতা হয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন। [২] [৪] পরের দশক ধরে সংগঠনের মাধ্যমে পদোন্নতি পেয়ে তিনি সিওআরও-র যুগ্মসচিব হন এবং ২০০৬ সালে পুনরায় বিবাহ করেন। সিওআরও যখন মহিলা মন্ডল ফেডারেশন গঠন করে, তখন মমতাজকে এর কার্যনির্বাহী সভাপতি করা হয়। [৫] [৪] সিওআরও স্যানিটারি কর্মসূচির অংশ হিসাবে, মমতাজ ২০১১ সালে পাবলিক শৌচাগার নিয়ে বলা শুরু করেছিলেন এবং ২০১২ সালে শৌচাগার সুবিধাগুলোর সুরক্ষা এবং শর্তগুলি মূল্যায়নের জন্য একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। [৪] ২০১৩ সালে, তিনি মুম্বাইয়ের শৌচাগার সুবিধার ক্ষেত্রে অসম প্রবেশাধিকারের বিষয়টি লক্ষ্য করে একটি প্রচার শুরু করেছিলেন। চীন থেকে পুরুষদের শৌচাগার দখল করুন অনুরূপ প্রচারের ভিত্তিতে, ৩২ টি বেসরকারী সংস্থা একসাথে এক দিনব্যাপী সেমিনারে পৃষ্ঠপোষকতা করে মহিলাদের জন্য শৌচাগারগুলিতে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা করেছিলেন। [৬] মমতাজ রাইট টু পি ক্যাম্পেইনের মুখপাত্র হয়েছিলেন, এই ক্যাম্পেইন বলছিল যদিও মহিলারা শহরাঞ্চলে প্রায় ৫০ শতাংশ কর্মশক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন, তবুও তারা অর্থ প্রদান করতে না পারলে তাদের শৌচাগারে কম প্রবেশাধিকার রয়েছে। ২০১২ সালে মুম্বই সরকার পুরুষদের জন্য ৫,৯৯৩ টি পাবলিক শৌচাগার এবং ২,৪৬৬ ইউরিনাল সরবরাহ করেছিল, তবে মহিলাদের জন্য কেবল ৩,৫৩৬টি সুবিধাসম্পন্ন শৌচাগার রয়েছে। [৭] ট্রেন স্টেশনগুলির অবস্থা আরো খারাপ ছিল, সেন্ট্রাল এবং হারবার রেল লাইনে অবস্থিত ৯ টি স্টেশনের জন্য ১০০টিরও কম ইউরিনাল এবং শৌচাগার ছিল। [৫] পুরুষদের শৌচাগার ব্যবহারের জন্য কিছুই দিতে হয় না, তবে মহিলাদের শৌচাগার ব্যবহারের জন্য অর্থ দিতে হয়। মহিলারা প্রস্রাব করার সীমাবদ্ধতার জন্য, মহিলারা প্রায়শই অপর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করেন, যা স্বাস্থ্য জটিলতা বাড়ায়। [৭]
এই উদ্যোগটি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছিল, যার ফলে সরকার মুম্বইয়ের প্রতি ২০ কিলোমিটার দূরে দূরে মহিলাদের জন্য শৌচাগারর একটি ব্লক তৈরি করা বাধ্যতামূলক করেছিল। [২] এক বছরের মধ্যেই, মহিলা সংস্থার চাপের ফলে এমসিজিএম দ্বারা মুম্বাইয়ে ৯৬টি নতুন শৌচাগার নির্মাণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। [৮] মমতাজকে পুনের নারী সমতা মঞ্চ "মহারাষ্ট্রের কন্যা" উপাধিতে ভূষিত করে [২] এবং ২০১৫ সালে বিবিসির অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসাবে তাদের ১০০ মহিলা প্রচারাভিযানে তাকে সম্মানিত করা হয়েছিল। [৮] স্যানিটেশন এবং নারীর সাম্যের অধিকারের প্রতি তাঁর উৎসর্গীকরণ ২০১৫ সালের মধ্যে সাঙ্গলি ও ভিদর্ভাতে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং শহর সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রসারিত হয়েছিল। [৯] তার দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পরে তিনি শিক্ষা গ্রহণে আবারও ফিরে আসেন এবং রাজনীতি বিষয়ে একটি স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি হোন। [৪] ২০১৬ সালে, মমতাজ জনসাধারণের শৌচাগার, মহিলাদের সুরক্ষা এবং সঠিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে এবং সরকারী নিষ্ক্রিয়তার কারণে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে কাজ চালিয়ে যান। [১০] [১১] তিনি বিভিন্ন মহলের স্থানীয় প্রয়োজন বুুুুুঝে মহারাষ্ট্র রাজ্য জুড়ে এই প্রোগ্রামটি বাড়ানোর পরিকল্পনা চালু করেন। [১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ Sangameshwaran 2016।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Sirohi 2015।
- ↑ The Hindu 2015।
- ↑ ক খ গ ঘ The Hindu 2015।
- ↑ ক খ Pinto 2014।
- ↑ Andhale 2013।
- ↑ ক খ Yardley 2012।
- ↑ ক খ Shaikh 2015।
- ↑ Andhale 2015।
- ↑ The Hindustan Times 2016।
- ↑ Purandare 2016।
- ↑ Andhale 2016।