মতিউর রহমান (বীর উত্তম)
মতিউর রহমান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৬) ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[১]
মতিউর রহমান | |
---|---|
মৃত্যু | ১৯৯৬ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর উত্তম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামতিউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম জয়নুদ্দীন ডাক্তার এবং মায়ের নাম জমিলা বেগম। তাঁর স্ত্রীর নাম আমেনা বেগম। তাঁর চার ছেলে ও দুই মেয়ে।
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৭১ সালে মতিউর রহমান ঢাকায় বেবিট্যাক্সি (স্কুটার) চালাতেন। তখন তাঁর বয়স ২১-২২। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের আগরতলায় গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁকে নৌ-কমান্ডোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বেশ কয়েকটি নৌ-অপারেশনে অংশ নেন তিনি। বেশির ভাগ অপারেশনে অসাধারণ দক্ষতা, বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন। তিনি ছিলেন দুঃসাহসী একজন নৌ-কমান্ডো।[২] স্বাধীনতার পর তিনি কোনো স্বীকৃতির অপেক্ষা না করে মিশে যান সাধারণ্যে। মুক্তিযুদ্ধে নৌ-অপারেশনে অসাধারণ ভূমিকা রাখায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সর্বোচ্চ ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করেন। স্বাধীনতার কিছু দিন পর মতিউর রহমান ঢাকা ছেড়ে চলে যান গাইবান্ধা জেলায়। দুই বছর পর লালমনিরহাটে। সেখানে বিয়ে করেন এবং যোগ দেন স্থানীয় আনসার ব্যাটালিয়নে। চাকরি ও বিয়ের সুবাদে সেখানেই বসবাস শুরু করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনামতিউর রহমানের প্রথম গেরিলা ত ৎপরতা অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ১৫-১৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ পাওয়া নৌ-কমান্ডোরা পূর্ব পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দর ও প্রধান প্রধান নদী বন্দরে একযোগে যে অপারেশন করেন, সেটিই ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে খ্যাত। এ অপারেশনের বিশালতা ও ক্ষয়ক্ষতি এত ব্যাপক ছিল যে তা পাকিস্তানসহ বিশ্বকে হতভম্ব করে দেয়। পৃথিবীর প্রায় সব প্রচারমাধ্যম এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে। অপারেশনের চূড়ান্ত তারিখ ছিল ১৫ আগস্ট, পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে। মতিউর রহমান অংশ নেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি ফেরিঘাট আক্রমণে। এ অপারেশনে তাঁরা অংশ নেন মোট নয়জন। তাঁদের দলনেতা ছিলেন শাহজাহান সিদ্দিকী (বীর বিক্রম)। সহ-দলনেতা তিনি। আগস্ট মাসের ১১-১২ তারিখে সীমান্ত অতিক্রম করে তাঁরা বাংলাদেশে আসেন। অপারেশনের ধার্য করা দিন ১৫ আগস্ট দাউদকান্দি এলাকায় ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়। তাঁদের গাইড অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে কারণে অপারেশন স্থগিত রাখতে হয়। পরদিন ১৬ আগস্ট মধ্যরাতে তাঁরা সফলতার সঙ্গে দাউদকান্দি ফেরিঘাটের ফেরি ও পন্টুনে লিমপেট মাইন লাগান। এ কাজে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মতিউর রহমান। ফেরিঘাটে প্রহরায় ছিল পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকাররা। তারা একটুও টের পায়নি। মাইন লাগানোর পর মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত চলে যান নিরাপদ অবস্থানে। রাত দুইটা ৪৫ মিনিটে চারদিক প্রকম্পিত করে নয়টি লিমপেট মাইন একের পর এক বিস্ফোরিত হয়। মাইন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ও পাকিস্তানিদের অবিরাম গুলিবর্ষণে ২৫ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। দু-তিন দিন পর নৌ-কমান্ডোরা ভারতের আগরতলায় চলে যান। পরবর্তী সময়ে মতিউর রহমান বরিশাল বন্দর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি অপারেশন করেন। এর মধ্যে বরিশালের অপারেশন ছিল সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তিনিই ছিলেন দলনেতা। ২৫-২৬ অক্টোবর সফলতার সঙ্গে এ অপারেশন সম্পন্ন করেন। তিনটি জাহাজ লিমপেট মাইনের সাহায্যে তাঁরা ডুবিয়ে দেন।[৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০২-০৮-২০১১"। ২০১৭-০৩-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৯।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা (খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রন্থ)। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৯৫। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৯। আইএসবিএন 9789849025375।