ভুজপুর জমিদার বাড়ি

ভুজপুর জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। যা স্থানীয়দের কাছে কাজী বাড়ি ও মিঞা বাড়ি নামে পরিচিত। এছাড়াও ফাঁসির ঘর হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত। [১]

ভুজপুর জমিদার বাড়ি
বিকল্প নামভুজপুর কাজী বাড়ি
কাজী বাড়ি
মিঞা বাড়ি
সাধারণ তথ্য
ধরনবাসস্থান
অবস্থানফটিকছড়ি উপজেলা
ঠিকানাভূজপুর ইউনিয়ন
শহরফটিকছড়ি উপজেলা, চট্টগ্রাম জেলা
দেশবাংলাদেশ
খোলা হয়েছে১৮০০
বন্ধ১৯৫৫
স্বত্বাধিকারীকাজী শাহাব উদ্দিন চৌধুরী
কারিগরী বিবরণ
উপাদানইট, সুরকি ও রড
অন্যান্য তথ্য
কক্ষ সংখ্যা৬০

ইতিহাস সম্পাদনা

জমিদার কাজী শাহাব উদ্দিনের দাদা মহব্বত সাধু ছিলেন গৌড় নগরের বাসিন্দা। পরে তিনি চট্টগ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। মহব্বত সাধুর ছেলে সাদাল্লাহর ঘরেই জন্ম নেন কাজী শাহাব উদ্দিন। পরে তিনি ১৮০০ শতকে এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন এবং জমিদারী পরিচালনা করেন। আর এইভাবে একের পর এক তাদের বংশধররা এখানে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। জমিদার কাজী শাহাব উদ্দিনের পর জমিদার হন তার পুত্র কাজী হায়দার আলী চৌধুরী।কাজী হায়দার আলীর পর জমিদার হন কাজি হাসমত আলী চৌধুরী।তিনি খুবই সু-পরিচিত ছিলেন।কাজি হাসমত আলী চৌধুরী ছিলেন একজন বিখ্যাত কবি। তার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে ছিল আলিফ লায়লা ও চিনফগপুর শাহ নামের দুটি পুঁথি। এই জমিদার বংশের অনেক সুনাম ছিল। কারণ তারা তাদের জমিদারী এলাকায় অনেক সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন। প্রজাদের কল্যাণে মোগল স্থাপত্যের আদলে ২৪টি মহাল, ১২টি তরফ, ২২টি দীঘি, ২২টি মসজিদসহ বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এছাড়াও অনেক রাস্তাঘাটসহ ২২টি ব্রিজ কালভার্টও নির্মাণ করেছিলেন। জমিদার বংশের নিজস্ব পারিবারিক মসজিদ এখনো বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। মসজিদটি ৩ গুম্বজ ও ১২টি মিনার বিশিষ্ট্য। যা প্রায় ২৫০ বছর আগে তুর্কি প্রকৌশলীদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। সুনামের পাশাপাশি এই জমিদার বংশের একটি দুর্নামও ছিল। সেটি হলো ফাঁসির মঞ্চের কারণে। জমিদার বাড়িতে একটি ফাঁসির মঞ্চ ছিল। যা মূলত ব্রিটিশদের সন্তুষ্টি করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল।জমিদার বংশের সর্বশেষ জমিদার ছিলেন কাজী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী।তার জমিদারী টিকে ছিল প্রায় ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। এখনো এই জমিদার বংশধররা এখানে বসবাস করতেছেন। একটি সূত্র থেকে জানা যায় বাংলাদেশের সাবেক অষ্টম প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ এই জমিদার বংশের বংশধর ছিলেন।

জমিদারগণদের তালিকা সম্পাদনা

১.কাজী শাহাবুদ্দিন চৌধুরী

২.কাজী হায়দার আলী চৌধুরী

৩.কাজি হাসমত আলী চৌধুরী

৪.কাজী আহমদুজ্জামান চৌধুরী

৫.কাজী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী

অবকাঠামো সম্পাদনা

জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ৬০ কক্ষ বিশিষ্ট্য একটি প্রাসাদ তৈরি করা হয়। প্রসাদের ভিতরে একটি ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করা হয়। বাড়িটির চারপাশে পরিখাঁ খনন করা হয়। বাড়ির উত্তর পাশে মোগল স্থাপত্যে তৈরি করা হয় একটি মসজিদ। যা এখন কাজী বাড়ি মসজিদ নামে পরিচিত।

বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা

৬০ কক্ষ বিশিষ্ট্য প্রাসাদটি এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। ফাঁসির মঞ্চটি এখন আর নেই। প্রাসাদটির যা অবশিষ্ট্য আছে, সেগুলোতে এখন লতাপাতায় জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। আর জমিদার বাড়ির চারপাশের সেই পরিখাঁটি এখন আর নেই। তবে জমিদার বাড়ির প্রাঙ্গণে যে মসজিদটি ছিল। তা ব্যবহারের ফলে এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

 
লতাগুল্ম দালানটিকে আঁকড়ে ধরেছে
 
উপরে উঠার সিঁড়ি
 
তিন তলা বিশিষ্ট দালানটির উপরিভাগ ধ্বসে গেছে
 
সংরক্ষণের অভাবে খসে পড়েছে কারুকার্যখচিত পলেস্তারা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা