ব্ল্যাক (২০০৫-এর চলচ্চিত্র)

২০০৫ সালের সঞ্জয় লীলা বানসালী পরিচালিত চলচ্চিত্র

ব্ল্যাক (হিন্দি: ब्लैक; বাংলায়: অন্ধকার) সঞ্জয় লীলা ভন্সালী পরিচালিত ২০০৫ সালের ভারতীয় নাট্য চলচ্চিত্র। ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছেন সঞ্জয় লীলা ভন্সালী, ভবানী আইয়ার, ও প্রকাশ কাপাডিয়া। এতে প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চনরানী মুখোপধ্যায়। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন আয়েশা কাপুর, শেরনাজ প্যাটেল, ধৃতিমান চ্যাটার্জি, নন্দনা সেন প্রমুখ।[৩]

ব্ল্যাক
ব্ল্যাক চলচ্চিত্রের পোস্টার
Black
পরিচালকসঞ্জয় লীলা ভন্সালী
প্রযোজক
  • সঞ্জয় লীলা ভন্সালী
  • অংশুমান স্বামী
চিত্রনাট্যকার
উৎসকর্তৃক 
শ্রেষ্ঠাংশে
বর্ণনাকারীরাণী মুখোপধ্যায়
সুরকারমন্টি শর্মা
চিত্রগ্রাহকরবি কে. চন্দ্র
সম্পাদকবেলা সেহগাল
পরিবেশকএসএলবি ফিল্মস
মুক্তি
  • ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ (2005-02-04)
[১]
স্থিতিকাল১২২ মিনিট
দেশভারত
ভাষাহিন্দি
আয়₹৬৫.২ মিলিয়ন[২]

ব্ল্যাক ২০০৫ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসব এ মার্শে দু ফিল্ম শাখায় প্রদর্শিত হয়।[৪] চলচ্চিত্রটি ৫৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রের পুরস্কার এবং ৫১তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কারশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া অমিতাভ বচ্চন তার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার,[৫] তার চতুর্থ ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার ও দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন, এবং রানী মুখার্জি তার দ্বিতীয় ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার লাভ করেন।[৬]

কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা

অন্ধ ও বোবা মিশেল ম্যাকনেলি তার সাবেক শিক্ষক দেবরাজ সাহাইকে দেখতে যান। দেবরাজ এখন আলৎসহাইমারের রোগে আক্রান্ত। মিশেল তার শৈশবে ফিরে যান এবং শৈশব থেকে বর্তমান পর্যন্ত বর্ণনা করতে থাকেন।

দুই বছর বয়সে একটি রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করার পর মিশেল তার দৃষ্টি ও শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে। সে যতই বেড়ে ওঠতে থাকে ততই হতাশা তাকে ঘিরে ধরে এবং আট বছত বয়সী মিশেল আরও উগ্র হয়ে ওঠতে থাকে। তার পিতামাতা পল এবং ক্যাথরিন তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। এসময়ে তাদের আশার আলো হয়ে আসে দেবরাজ সাহাই। দেবরাজ অন্ধ ও বোবা একজন বয়স্ক মদ্যপ শিক্ষক, যে নিজেকে একজন জাদুকর বলে দাবী করে। সে তার জাদুকরী শক্তি দিয়ে মিশেলকে আলোতে নিয়ে আসার কাজে হাত দেয়। তার শিক্ষাদান কিছুটা কঠোর কিন্তু তা মিশেলের ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগে।

প্রথমদিকে তার শিক্ষাদানের পদ্ধতিতে মিশেলের বাবা অসম্মতি প্রদান করে এবং তাকে চলে যেতে বলে। মিশেলের বাবা তাকে চলে যেতে বললেও সে ব্যবসায়িক সফরে ২০ দিনের জন্য বাইরে চলে গেলে দেবরাজ শিক্ষক হিসেবে থেকে যান। মিশেলের মা উৎকণ্ঠিত হয়ে তাকে বলেন তার শিক্ষাদান কাজে না আসলে মিশলকে পাগলাগারদের পাঠাতে হবে। ২০তম দিনে দেবরাজ মিশেলকে কিছুর শব্দ ও আচরণ শিখাতে সমর্থ হন, কিন্তু সে অর্থ বুঝতে পারে না। মিশেলের বাবা ফিরে আসলে দেবরাজ তার ব্যাগ গুছিয়ে চলে যেতে যাওয়ার পূর্বে মিশেলের উগ্র ব্যবহারের কথা ভেবে সে দরজার সামনে সুটকেস রেখে মিশেলকে পানি ভর্তি একটি ঝর্নায় ফেলে দেয়। মিশেল হঠাৎ দেবরাজের শিক্ষার অর্থ বুঝতে শুরু করে। সে তার মা ও বাবাকে চিনতে পারে এবং কিছু শব্দের প্রথম অংশ মুখে নিয়ে আসে। ফলে ম্যাকনেলি দম্পতি দেবরাজকে মিশেলের শিক্ষক হিসেবে রেখে দেন।

কয়েক বছর পর মিশেল অনেক কিছু শিখে এবং অনেকটা শান্ত ও তার মনের ভাব প্রকাশে সমর্থ হয়। দেবরাজ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষকে তার সাক্ষাৎকার নিতে বলে যেখানে মিশেল পাস করে এবং প্রথম অন্ধ ও বোবা শিক্ষার্থী হিসেবে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি নিতে ভর্তি হয়। মিশেল বাড়ি থেকে চলে যায় এবং দেবরাজ ও একজন গৃহপরিচারিকার সাথে থাকে। পরের দুই বছরে অকৃতকার্য হয়ে ডিগ্রি নিতে ব্যর্থ হয়। ১২ বছর পর মিশেল তার ডিগ্রি লাভ করে এবং তার ক্লাসে বক্তৃতাও দেয়। তার কালো গ্র্যাজুয়েশন পোশাক না পরে সে তার পিতামাতা ও শিক্ষককে ধন্যবাদ দেয় এবং বলে তার এই পোশাক সে তার শিক্ষকের সামনে প্রথম পরবে।

দেবরাজ এখন একটি মানসিক হাসপাতালে এবং সে পূর্বের সবকিছু প্রায় ভুলে গেছে এমনকি কীভাবে কথা বলতে হয় তাও। মিশেল গ্যাজুয়েশনের পোশাক পরে তার সাথে দেখা করতে যায়। দেবরাজ অল্প বুঝতে পারে মিশেল গ্যাজুয়েট হয়েছে এবং তারা বিজয় নৃত্য করে। জানালা খোলার পর দেখা যায় বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। মিশেল দেবরাজের হাত বাইরে বৃষ্টিতে নিয়ে যায় এবং তার প্রথম শেখা শব্দ "water" এর প্রথমাংশ শুনা যায় এবং পূর্বের ঘটনাবলী দেখা যায়। এখন দেবরাজ কথা বলা ও বুঝতে শিখছে।

শেষ দৃশ্যে মিশেল কালো কাপড় পরিহিত আরও লোকজনের সাথে মোমবাতি হাতে নিয়ে একটি গীর্জায় যাচ্ছে। সেখানে একটি কণ্ঠ শুনা যায়, মিশেল দেবরাজের বন্ধু মিসেস নায়ারকে লিখেছে স্কুলে তার শিক্ষক প্রথম দিনে একটি শব্দ শিখেছে, এবং তা হল "B L A C K"।

কুশীলব সম্পাদনা

  • অমিতাভ বচ্চন - দেবরাজ সাহাই (শিক্ষক)
  • রানী মুখোপধ্যায় - মিশেল ম্যাকনেলি
  • আয়েশা কাপুর - মিশেল ম্যাকনেলি (ছোট)
  • শেরনাজ প্যাটেল - ক্যাথরিন ম্যাকনেলি, মিশেলের মা
  • ধৃতিমান চ্যাটার্জি - পল ম্যাকনেলি, মিশেলের বাবা
  • নন্দনা সেন - সারাহ ম্যাকনেলি, মিশেলের বোন
  • সিলো মাহাভা - মিসেস গোমেজ
  • মহাবানু মোদি কোতওয়াল - মিসেস নায়ার

সঙ্গীত সম্পাদনা

প্রথমে এ. আর. রহমানকে এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তার ব্যস্ত শিডিউলের কারণে তিনি প্রস্তাব বাতিল করেন।[৭] পরে মন্টি শর্মা এই চলচ্চিত্রের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন।[৮] এই ছবিতে একটি মাত্র গান ছিল। "হাঁ ম্যাঁনে চুকার দেখা" গানটিতে কণ্ঠ দেন গায়ত্রী আইয়ার[৯]

মুক্তি সম্পাদনা

ব্ল্যাক প্রথমে ১০ ডিসেম্বর, ২০০৪ তারিখে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বনশালি পরে মুক্তির তারিখ পিছানোর সিদ্ধান্ত নেন।[১০] ছবিটি ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ ভারতের ১৭০ টি শহরে মুক্তি পায়। এছাড়া ছবিটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, যেমন ক্যাসাব্লাঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসব, ভারতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ও কান চলচ্চিত্র উৎসব এ প্রদর্শিত হয়।

মূল্যায়ন সম্পাদনা

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

ব্ল্যাক চলচ্চিত্রটি ইতিবাচক সমালোচনা লাভ করে। সমালোচকগণ অমিতাভ বচ্চন, রানী মুখোপাধ্যায়আয়েশা কাপুর এর অভিনয় এবং সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর পরিচালনার প্রশংসা করেছেন। অমিতাভ ও রানী তাদের ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কারশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কারের পাশাপাশি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সমালোচক পুরস্কারশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন। ইন্ডিয়া গিল্টজের সুভাষ কে. ঝা লিখেন প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী একটি সেরা কাজ করেছেন। অমিতাভ বচ্চনের অভিনয় সম্পর্কে তিনি বলেন, "এটি তার সেরা কাজ বললেও কম বলা হবে" এবং রানীর অভিনয় সম্পর্কে বলেন, "তার অভিনয় দেখে মনে হচ্ছিল যেন সে অন্ধ হয়েই জন্ম নিয়েছে।" এছাড়া ঝা চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা ও আবহ সঙ্গীতের প্রশংসা করেছেন।[১১] রেডিফের সীতা মেনন বলেন রানীর অভিনয়ে পরিপক্কতা ছিল, অমিতাভের কিছু একক দৃশ্যে মেলোড্রামা ছিল এবং সর্বোপরি ভন্সালীর পরিচালনায় আবেগ, বেদনা ও আনন্দ ছিল।[১২]

পুরস্কার সম্পাদনা

পুরস্কার বিভাগ মনোনীত ফলাফল
৫৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্র সঞ্জয় লীলা ভন্সালী, অংশুমান স্বামী বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন বিজয়ী
৫১তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার সঞ্জয় লীলা ভন্সালী, অংশুমান স্বামী বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পরিচালক পুরস্কার সঞ্জয় লীলা ভন্সালী বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার অমিতাভ বচ্চন বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার রানী মুখোপাধ্যায় বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার সঞ্জয় লীলা ভন্সালী বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা সমালোচক পুরস্কার অমিতাভ বচ্চন বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী সমালোচক পুরস্কার রানী মুখোপাধ্যায় বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী পুরস্কার আয়েশা কাপুর বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীত পুরস্কার মন্টি শর্মা বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রহণ পুরস্কার রবি কে. চন্দ্র বিজয়ী
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ চিত্রসম্পাদনা পুরস্কার বেলা সেহগাল বিজয়ী

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Black"IBOS network। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Black"বক্স অফিস ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  3. "Black"ফিল্মি বিট। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  4. "Indian films a `nonentity' at Cannes"দ্য হিন্দু। ১৯ মে ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  5. "National awards: Big B, Sarika win top honours"দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া। ৮ আগস্ট ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  6. "Black sweeps the board at Indian Filmfare awards"স্ক্রিন ডেইলি। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  7. Gautham, Savita (২৩ অক্টোবর ২০০৩)। "Chinese rhapsody"দ্য হিন্দু। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  8. Jha, Subhash K. (৪ জানুয়ারি ২০০৫)। "Bollywood is abuzz about 'Black'"IndiaGlitz.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  9. Dasgupta, Priyanka (৪ মে ২০০৫)। "On a song"দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  10. "The wait's over"দ্য টেলিগ্রাফ। ১৪ ডিসেম্বর ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  11. Jha, Subhash K. (৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৫)। "Bollywood is abuzz about 'Black'"IndiaGlitz.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 
  12. মেনন, সীতা (৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫)। "Black: Bhansali's passion, pain and pleasure"রেডিফ। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা