ব্যবহারকারী:Lakshmikanta Manna/অশোকবিজয় রাহা

অশোকবিজয় রাহা
জন্ম(১৯১০-১১-১৪)১৪ নভেম্বর ১৯১০
মৃত্যু১৯ অক্টোবর ১৯৯০(1990-10-19) (বয়স ৭৯)
সুরাহা, শান্তিনিকেতন পশ্চিমবঙ্গ
পেশাঅধ্যাপনা, কবি ও প্রাবন্ধিক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমুরারিচাঁদ কলেজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

অশোকবিজয় রাহা (১৪ নভেম্বর ১৯১০ – ১৯ অক্টোবর ১৯৯০) [১]ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক এবং সমালোচক। [২]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

অশোকবিজয় রাহার জন্ম ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন শ্রীহট্ট জেলার ঢাকা-দক্ষিণ গ্রামে। তার পিতা বঙ্কবিহারী রাহা ছিলেন কাছাড়ের চা বাগানের কর্মী এবং মাতা ছিলেন ব্রহ্মময়ী দেবী। তাদের চার পুত্র ও এক কন্যার মধ্যে অশোকবিজয় ছিলেন কনিষ্ঠ। পিতা চা বাগানের কর্মী ছিলেন বলে তার শৈশব কাটে কাছাড়ের আদিম বনানী পরিবেশে। তবে কৈশোরে কাকার কাছে শ্রীহট্ট শহরে এসে ভরতি হন সেখানকার ইংরেজি স্কুলে। বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে আই. এ., ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ বি. এ. এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সাহিত্যে এম. এ. পাশ করেন।

কর্মজীবন ও সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে বি.এ পাশের পর ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অশোকবিজয় শ্রীহট্ট ও করিমগঞ্জের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের করিমগঞ্জ কলেজ শুরু হওয়ার সময় থেকেই ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে অধ্যাপনা করেন। তারপর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। রবীন্দ্র অধ্যাপকরূপে বিশ্বভারতীতে চব্বিশ বৎসর অধ্যাপনা করার পর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি রবীন্দ্র ভবনের অধ্যক্ষও হয়েছিলেন একসময়ে।

শৈশবে ছড়ার প্রতি অশোকবিজয়ের আকর্ষণ থাকলেও, স্কুলে পড়ার সময় প্রথম দিকে অশোকবিজয় কবিতা সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ ছিলেন স্কুল পাঠ্যে কবিতার জড়তা বা আডষ্টতার কারণে। বরং অরণ্য-প্রকৃতির মাঝে লালিত হওয়ায় তার ঝোঁক এসেছিল গদ্যের প্রতি। শেষে পল্লীকবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের “ফুলের ফসল” কাব্য আর রবীন্দ্র-কবিতার প্রভাব ধীরে ধীরে তাকে কবিতার জগতে আকৃষ্ট করে। [৩]মুরারিচাঁদ কলেজে আই.এ পড়ার সময় থেকে নিজে কবিতা রচনা শুরু করেন। তার প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয় শ্রীহট্ট হতে প্রকাশিত কমলা পত্রিকায়। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে অশোকবিজয়ের এক সহপাঠী তার একগুচ্ছ কবিতার পাণ্ডুলিপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পাঠালে, রবীন্দ্রনাথ কবিতাগুলো পড়ে মন্তব্যও যোগ করেন এবং তাকে তরুণ চাঁদ অভিহিত করে আশীর্বাণীতে লেখেন-

"আকাশে চেয়ে আলোকবর

মাগিল যবে তরুণ চাঁদ

রবির কর শীতল হয়ে

করিল তারে আশীর্বাদ।"

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ডিহংনদীর বাঁকে এবং পরবর্তীতে রুদ্রবসন্ত। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বুদ্ধদেব বসুর এক পয়সার সিরিজ এ তার ভানুমতীর মাঠ প্রকাশিত হয়। সজনীকান্ত দাসের শনিবারের চিঠিতে কাব্যগ্রন্থটির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। অশোকবিজয় রাহার বেশিরভাগ কবিতারই বিষয়বস্তু চিত্রবহুল- নদী, পাহাড় ও অরণ্যপ্রকৃতি কেন্দ্রিক। [৪] স্বল্পবাক ও বর্ণাঢ্য চিত্র তার কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। [২] তার রচিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল-

  • জলডম্বুর পাহাড় (১৯৪৫)
  • উড়োচিঠির ঝাঁক (১৯৫১)
  • যেথা এই চৈত্রের শালবন (১৯৬১)
  • ঘন্টা বাজে(১৯৮১)
  • পর্দা সরে যায় (১৯৮১)
  • পৌষ ফসল(১৯৮৩)

এছাড়া দেশ-বিদেশের নানা পত্র-পত্রিকার তার প্রায় পঞ্চাশটি কবিতা হিন্দি, ইংরাজী, ফরাসি ও স্পেনীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। অধ্যাপক অশোকবিজয় একজন মননশীল প্রাবন্ধিক ও বিশিষ্ট সমালোচকও ছিলেন। নিম্নে উল্লিখিত গ্রন্থ সমূহ সেই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত

  • জীবনানন্দের জগৎ
  • রবীন্দ্রনাথের জীবনদেবতা
  • গীতিকাব্যে রবীন্দ্রপ্রতিভার বৈশিষ্ট্য
  • পত্রাষ্টক
  • বাণীশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ প্রভৃতি।

অধ্যাপক কবি অশোকবিজয় শিল্প-সংস্কৃতি কর্মে ভারতের বিভিন্নস্থানে ভ্রমণ করেছেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতীর প্রতিনিধি হিসাবে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু অ্যাওয়ার্ড কমিটির আমন্ত্রণে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া গমন করে 'রবীন্দ্রনাথ ও আন্তর্জাতিক' বিষয়ে ভাষণ প্রদান করেন।

জীবনাবসান সম্পাদনা

অধ্যাপক কবি অশোকবিজয় বিশ্বভারতী হতে অবসরের পর শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীতে নিজের তৈরি "সুরাহা" বাসভবনে শেষজীবন অতিবাহিত করেন। এখানেই ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১৯ অক্টোবর তিনি পরলোক গমন করেন।


তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. শিশির কুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৬। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  3. রাহা, অশোকবিজয় (২০১০)। পত্রাষ্টক। ভারবি, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৭৯। 
  4. "অশোকবিজয় রাহা এর জীবনী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-০৭