বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র উৎসবগুলো প্রধানত পূর্ণিমাকেন্দ্রিক। আর এই উৎসবগুলো উপলক্ষ্যেই মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণ ছুটি উপভোগ করে থাকেন। রাষ্ট্রভেদে এ ছুটিগুলোর কোনটি সাধারণ তথা বাধ্যতামূলক ছুটি আবার কোন কোনটি ঐচ্ছিক ছুটি। বৌদ্ধদের জন্যে সাধারণত সপ্তাহের কোন বিশেষ দিবস বিশেষ পবিত্রতা বহন করে না। তাই, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রধান দেশগুলোতেও পাশ্চাত্যের সাথে মিল রেখে রবিবার ই সাপ্তাহিক ছুটি উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। বৌদ্ধদের ধর্মীয় উৎসবগুলো চান্দ্রপঞ্জিকার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই, বৌদ্ধ ছুটির দিন চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।এছাড়া চাঁদ দেখার সময়ের হেরফেরের কারণে বৌদ্ধ উৎসবগুলো বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে উদযাপিত হতে পারে।

বৌদ্ধ উৎসবগুলোর মধ্যে প্রধান তম হলো বুদ্ধ পূর্ণিমা। অধিকাংশ রাষ্ট্রে এ দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।

বৌদ্ধ ধর্মীয় উৎসব সম্পাদনা

বুদ্ধ পূর্ণিমা

বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা রাতে বুদ্ধ পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয়। এই রাতে সিদ্ধার্থ গৌতম জন্মলাভ, বুদ্ধত্বলাভ ও মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। তাই, এ দিনটিকে 'বুদ্ধ দিবস' হিসেবেও উদ্‌যাপন করা হয়। এছাড়া, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় পঞ্জিকানুসারে পালনীয় সন 'বুদ্ধাব্দ' এর নতুন বছরের সূচনা হয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ সনের মে মাসের বৈশাখী পূর্ণিমায় বুদ্ধাব্দ নববর্ষ ২৫৬১ সনের সূচনা হয়।

আষাঢ়ী পূর্ণিমা

এই পূর্ণিমায় সিদ্ধার্থ মায়ের গর্ভে আসেন। এছাড়া, যৌবনকালে আষাঢ় মাসের আরেক পূর্ণিমায় তিনি স্ত্রী-পুত্র-রাজ্য সংসার সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে গৃহত্যাগ করেন।

মধু পূর্ণিমা

বুদ্ধ তার শিষ্যদের দুটি দলের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসা করতে না পেরে অভিমানবশত এক গভীর অরণ্যে আশ্রয় নেন। সেখানে, একটি হাতি তার সেবা করেন। হাতিকে সেবা করতে দেখে বনের একটি বানরও বুদ্ধের সেবায় নিয়োজিত হয়। বানরটি বুদ্ধকে ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা রাতে মধু পরিবেশন করে আপ্যায়ন করে।

প্রবারণা পূর্ণিমা

বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ তিন মাস বর্ষাবাসযাপনের পর কার্তিক মাসের এক পূর্ণিমা তিথিতে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকেন। এই তিথির সন্ধ্যায় আকাশে হাজারো ফানুস ওড়ানো হয়। এই পূর্ণিমার এক মাসের মধ্যে বৌদ্ধবিশ্বাসানুযায়ী শ্রেষ্ঠতম দানোৎসব তথা কঠিন চীবর দান উদ্‌যাপন করা হয়।

মাঘী পূর্ণিমা

মাঘ মাসের এক পূর্ণিমা তিথিতে বুদ্ধ তার মহাপরিনির্বাণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এতে ভক্তরা ক্রন্দন শুরু করলে তিনি তাদেরকে ধর্মোপদেশ দান করেন।

ফালগুনী পূর্ণিমা

গৃহত্যাগের পর বহুদিন পর্যন্ত সিদ্ধার্থের সাথে তার বাবা-মা, স্ত্রী-পুত্র কারো সাথে সাক্ষাৎ হয় নি। অবশেষ বহুদিন পর সিদ্ধার্থের সংবাদ জানতে পেরে পিতা তাকে দেখবার জন্যে ব্যকুল হয়ে পড়েন। প্রথমে সাড়া না দিলেও পরে পিতার ব্যাপক অনুরোধের হেতু বুদ্ধ তাদের সাথে ফালগুনী পূর্ণিমায় দেখা করতে আসেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন দীক্ষা দান করেন।

আশ্বিনী পূর্ণিমা

এই পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় শুরু হওয়া বর্ষাবাস যাপন সম্পন্ন করেন।