বেঞ্জামিন পিয়ারি পাল

ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞানী

বেঞ্জামিন পিয়ারি পাল বা বিপি পাল (২৬ মে ১৯০৬ - ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯) ছিলেন একজন ভারতীয় উদ্ভিদবিজ্ঞানী এবং কৃষিবিদ যিনি দিল্লিতে ভারতীয় কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং ভারতীয় কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রথম মহাপরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন। গমের জেনেটিক্স এবং প্রজনন নিয়ে গবেষণায় তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপের উপর তার আগ্রহ এবং গবেষণার জন্যও তিনি পরিচিত ছিলেন।[২]

বেঞ্জামিন পিয়ারি পাল
২০০৮ সালের ভারতীয় ডাকটিকিটে বেঞ্জামিন পিয়ারি পাল
জন্ম(১৯০৬-০৫-২৬)২৬ মে ১৯০৬
মৃত্যু১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯(1989-09-14) (বয়স ৮৩)
মাতৃশিক্ষায়তন
পুরস্কার
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রউদ্ভিদ প্রজনন
প্রতিষ্ঠানসমূহইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

বেঞ্জামিন পিয়ারি পাল ভারতের পাঞ্জাবের নওয়ানশহর জেলার বাঙ্গার কাছে মুকন্দপুর নামে একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ডাঃ রালা রাম ও ইন্দর দেবীর কনিষ্ঠ সন্তান।[৩] বেঞ্জামিনের পরিবারের সদস্যরা জলন্ধর থেকে এসেছিলেন কিন্তু তার বাবা মেডিকেল অফিসার হিসেবে বার্মায় চলে যান। জন্মের পর তার নাম রাখা হয় ব্রহ্মা দাস পাল। তবে ১৯১৪ সালে বার্মার মেময়োতে সেন্ট মাইকেল স্কুলে থাকাকালীন তার নাম পরিবর্তন করে বেঞ্জামিন পিয়ারি পাল রাখা হয়।[৩] সেন্ট মাইকেল স্কুলের একটি সুন্দর গোলাপ ফুলের বাগান ছিল। সেই বাগানটি দেখে গোলাপ ফুলের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে।[৩] তিনি রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তার স্নাতকোত্তরের জন্য বার্মিজ চারোফাইটা নিয়ে একটি গবেষণা পত্র ছিল।

এরপর তিনি রোল্যান্ড বিফেনের অধীনে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট অধ্যয়নের জন্য যান। পরে তিনি ফ্রাঙ্ক এংলেডোর কাছে গমের হাইব্রিড শক্তি নিয়ে গবেষণা করেন।[৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৩২ সালে বার্মায় ধান গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবেও তিনি কাজ করেন। পরে দ্বিতীয় অর্থনৈতিক উদ্ভিদবিদ হিসেবে বিহারের পুসায় চলে আসেন। ১৯৩৭ সালে তিনি ইম্পেরিয়াল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ইম্পেরিয়াল ইকোনমিক বোটানিস্ট হন। ১৯৩৬ সালে ভূমিকম্পের পর ইনস্টিটিউটটি নতুন দিল্লিতে চলে আসে। তিনি সেখানে চলে যান এবং ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বরে এই ইনস্টিটিউটের নির্দেশক হন। ১৮ বছর গবেষণার পর ১৯৫৪ সালে তিনি 'এনপি ৮০৯' গম তৈরি করেন। এই জাতের গমের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বেশি। এটি তিন ধরনের গমের রোগ মোকাবেলা করতে পারে।

তিনি ১৯৬৫ সালে নতুন পুনর্গঠিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চের প্রথম মহাপরিচালক হন। ১৯৭২ সালে অবসর গ্রহণের আগে পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। গমের রোগ প্রতিরোধ নিয়ে বেঞ্জামিনের অনেক গবেষণা রয়েছে। তিনি গমের বিভিন্ন জাত নিয়েও বিস্তারিত গবেষণা করেন।[৫]

বেঞ্জামিন ভারতের রোজ অ্যান্ড বোগেনভিলিয়া সোসাইটি এবং ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং-এর প্রতিষ্ঠাতা। ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং জার্নালের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্বভার পালন করেন।

তিনি অবিবাহিত ছিলেন। মৃত্যুর আগে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চকে তার সম্পত্তি দান করে যান।

সম্মাননা এবং পুরস্কার সম্পাদনা

  • ১৯৭২ সালে রয়্যাল সোসাইটির (এফআরএস) ফেলো নির্বাচিত হন।
  • ১৯৫৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান।
  • ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণে ভূষিত।[৬]

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৮৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞানীর জীবনাবসান হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Swaminathan, M. S. (১৯৯৬)। "Benjamin Peary Pal 26 May 1906 – 14 September 1989"। Biographical Memoirs of Fellows of the Royal Society42: 266–274। ডিওআই:10.1098/rsbm.1996.0017 
  2. "Agriculture" (পিডিএফ)। .iisc.ernet.in। ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৫ 
  3. "Benjamin Peary Pal birth anniversary: Interesting facts to know about first Director of Indian Council of Agricultural Research"News9live। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৩ 
  4. "Dr Benjamin Peary Pal"। Indian National Science Academy। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৫ 
  5. Swaminathan, M. S. (১৯৯৬)। "Benjamin Peary Pal. 26 May 1906-14 September 1989"Biographical Memoirs of Fellows of the Royal Society42: 267–274। আইএসএসএন 0080-4606 
  6. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫