বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল

বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল হল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহীয় বায়ুমণ্ডল। মোটামুটি সৌর অনুপাতে প্রধানত আণবিক হাইড্রোজেনহিলিয়াম দ্বারা এই বায়ুমণ্ডল গঠিত। এছাড়া মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইডজল সহ অন্যান্য রাসায়নিক যৌগও সামান্য পরিমাণে এই বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত। অনুমান করা হয়, বৃহস্পতি গ্রহে জলের অবস্থান বায়ুমণ্ডলের অনেক গভীরে। তবে সেই জলের সরাসরি পরিমাপকৃত মাত্রা অত্যন্ত কম। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন, সালফারবিরল গ্যাসের অতিপ্রাচুর্য সৌর মানের তুলনায় প্রায় তিন গুননীয়ক বেশি।[২]

বৃহস্পতির ঘূর্ণায়মান বহুবর্ণ মেঘমালা[১]

বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে কোনও সুস্পষ্ট নিম্নসীমা নেই। এই বায়ুমণ্ডল ক্রমশ গ্রহের তরল অন্তর্ভাগে অবস্থান্তরিত হয়েছে।[৩] সর্বনিম্ন অংশ থেকে উপরিতল পর্যন্ত এই বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলি হল যথাক্রমে ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ারএক্সোস্ফিয়ার। প্রত্যেকটি স্তরের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসূচক তাপাঙ্ক নতিমাত্রা রয়েছে।[৪] সর্বনিম্ন স্তর ট্রপোস্ফিয়ার হল মেঘ ও কুয়াশার এক জটিল সমবায়। এই অংশটি গঠিত হয়েছে অ্যামোনিয়া, অ্যামোনিয়াম হাইড্রোসালফাইড ও জলের ভিন্ন ভিন্ন স্তর নিয়ে।[৫] উপরিভাগের অ্যামোনিয়া মেঘগুলি বৃহস্পতির পৃষ্ঠভাগেই দেখা যায়। এগুলি বিষুবরেখার সমান্তরালে এক ডজন ক্ষেত্রীয় বন্ধনীতে সংগঠিত এবং "জেট" নামে পরিচিত শক্তিশালী বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহ (বায়ু) দ্বারা পরিবেষ্টিত। বন্ধনীগুলির রং পর্যায়ক্রমিক: গাঢ় রঙের বন্ধনীগুলিকে বলা হয় "বেল্ট" এবং হালকা রঙের বন্ধনীগুলিকে বলা হয় "জোন"। জোনগুলি বেল্টগুলির তুলনায় শীতলতর, ঊর্ধ্বমুখিনতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অপরদিকে বেল্টগুলি হল অবরোহী গ্যাসের বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন।[৬] মনে করা হয়, অ্যামোনিয়া বরফের উপস্থিতির কারণেই জোনগুলির রং হালকা দেখায়। কিন্তু বেল্টগুলির গাঢ় রঙের কারণ কী সেই ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন।[৬] এই ধরনের শ্রেণিবদ্ধ গঠনশৈলী ও জেট বায়ুর উৎসটিও সঠিক বোঝা যায় না। যদিও এই ক্ষেত্রে একটি "অগভীর মডেল" ও একটি "গভীর মডেল"-এর অস্তিত্ব রয়েছে।[৭]

বার্হস্পত্য বায়ুমণ্ডলে অনেক ধরনের সক্রিয় ঘটনা ঘটে চলেছে। এই ধরনের ঘটনার মধ্যে রয়েছে বন্ধনীগুলির অস্থিরতা, ঘূর্ণি (ঘূর্ণবাতপ্রতীপ ঘূর্ণবাত), ঝড় ও বজ্রপাত।[৮] বৃহস্পতির ঘূর্ণিগুলি বড়ো বড়ো লাল, সাদা ও বাদামি ডিম্বাকৃতি দাগের আকারবিশিষ্ট। বৃহত্তম দাগ দু’টি হল বৃহৎ লাল বিন্দু[৯]ডিম্বাকার বিএ (এটিও লাল)।[১০] এই দাগ দু’টি এবং অন্যান্য বৃহদাকার দাগগুলি প্রতীপ ঘূর্ণবাতমূলক। অপেক্ষাকৃত ছোটো আকারের প্রতীপ ঘূর্ণবাতগুলি প্রায়শই সাদা রঙের হয়ে থাকে। ঘূর্ণিগুলিকে আপেক্ষিকভাবে অগভীর বলেই মনে করা হয়। এগুলির গভীরতা কয়েকশো কিলোমিটারের বেশি নয়। বৃহস্পতির দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত বৃহৎ লাল বিন্দুটি সৌরজগতের জানা ঘূর্ণিগুলির মধ্যে বৃহত্তম। বিগত অন্তত তিনশো বছর ধরে এই দাগটির অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এটি আকারে এতটাই বড়ো যে দুই বা তিনটি পৃথিবী গ্রাস করতে পারে। বৃহৎ লাল বিন্দুর দক্ষিণে অবস্থিত ডিম্বাকার বিএ অপর একটি লাল দাগ। এটির আকার বৃহৎ লাল বিন্দুর এক-তৃতীয়াংশ। ২০০০ সালে তিনটি সাদা ডিম্বাকার দাগ একীভূত হওয়ার ফলে এই দাগটির সৃষ্টি হয়েছিল।[১১]

বৃহস্পতি গ্রহে শক্তিশালী ঝড় উঠে থাকে, যার সঙ্গে প্রায়শই বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটে। এই ঝড়গুলি হল বায়ুমণ্ডলে আর্দ্র পরিচলনের ফল, যা জলের বাষ্পীভবন ও ঘনীভবনের সঙ্গে জড়িত। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অঞ্চলগুলিতে বায়ু সবেগে ঊর্ধ্বমুখে ধাবিত হয়, যার ফলে উজ্জ্বল ও গভীর মেঘসমূহের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ঝড়গুলি প্রধানত ওঠে বেল্ট অঞ্চলগুলিতে। বৃহস্পতিতে যে বজ্রপাত হয় তা পৃথিবীতে সংঘটিত বজ্রপাতের তুলনায় কয়েকশো গুণ শক্তিশালী এবং মনে করা হয় এগুলি জলীয় মেঘমেঘগুলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[১২]

উল্লম্ব গঠন সম্পাদনা

 
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের উল্লম্ব গঠন। ট্রপোপজের উপরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রার হ্রাসের বিষয়টি লক্ষণীয়। গ্যালিলিও বায়ুমণ্ডলীয় প্রোবের সংকেত প্রেরণ বৃহস্পতির ১ বার "পৃষ্ঠভাগ"-এর নিচে ১৩২ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।[৪]

বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলকে চারটি স্তরে ভাগ করা যায়। ক্রমবর্ধমান উচ্চতা অনুযায়ী এই স্তরগুলি হল ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ারএক্সোস্ফিয়ারপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যে মেসোস্ফিয়ার স্তরটি দেখা যায়, তা বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে অনুপস্থিত।[১৩] এই গ্রহের কোনও কঠিন পৃষ্ঠতলও নেই। বার্হস্পত্য বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর ট্রপোস্ফিয়ার মসৃণভাবে গ্রহের তরল অন্তর্ভাগে অবস্থান্তরিত হয়ে গিয়েছে।[৩] এর কারণ এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা ও চাপ হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের পক্ষে প্রান্তিক বিন্দুর অনেক উপরে থাকে, যার অর্থ এখানে গ্যাস ও তরল পর্যায়ের মধ্যে কোনও স্পষ্ট সীমারেখা নেই। ১২ বারের কাছাকাছি চাপে হাইড্রোজেন এক অতিপ্রান্তিক তরলে পরিণত হয়।[৩]

বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের নিম্নসীমাটি সঠিকভাবে বর্ণিত না হওয়ার জন্য ৩৪০ কেলভিন তাপমাত্রার আশেপাশে ১ বারের নিচে প্রায় ৯০ কিলোমটার উচ্চতায় ১০ বার চাপমাত্রাটিকে সাধারণভাবে ট্রপোস্ফিয়ারের নিম্নতল মনে করা হয়।[৪] বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে ১ বার চাপমাত্রাটিকে সচরাচর উচ্চতার শূন্যবিন্দু অর্থাৎ বৃহস্পতির "পৃষ্ঠভাগ" ধরে নেওয়া হয়।[৩] পৃথিবীর মতো বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলেরও উর্ধ্বতম স্তর এক্সোস্ফিয়ারের কোনও সুনির্দিষ্ট উপরিসীমা নেই।[১৪] "পৃষ্ঠভাগ" থেকে প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমতে কমতে মসৃণভাবে আন্তঃগ্রহ মাধ্যমে অবস্থান্তরিত হয়ে যায়।[১৫]

বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের উল্লম্ব তাপ-বিন্যাসক্রম পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেরই অনুরূপ। বৃহস্পতিতেও উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ট্রপোস্ফিয়ারের তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং ট্রপোপজ অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সীমানায় পৌঁছে তা সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পরিণত হয়।[১৬] এই ট্রপোপজের অবস্থান দৃশ্যমান মেঘমণ্ডলীর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (বা ১ বার স্তরে) উচ্চতায়, যেখানে চাপ ও তাপমাত্রা যথাক্রমে প্রায় ০.১ বার ও ১১১ কেলভিন।[৪][১৭] থার্মোস্ফিয়ারে অবস্থান্তরের সময় এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ২০০ কেলভিনে। এই থার্মোস্ফিয়ারের উচ্চতা ও চাপ যথাক্রমে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার ও ১ মাইক্রো-বার।[৪] এই স্তরে বাড়তে বাড়তে ক্রমে ১০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে যায় যেখানে চাপ ১ নিউটন-বার এবং তাপমাত্রা প্রায় ১০০০ কেলভিন।[১৮]

ট্রপোস্ফিয়ার এক জটিল মেঘের মণ্ডলী দ্বারা গঠিত।[১৯] ০.৬-০.৯ বার চাপের ক্রমবিন্যাসে অবস্থিত উপরের দিকের মেঘগুলি অ্যামোনিয়া বরফ দ্বারা গঠিত।[২০] মনে করা হয়, এই অ্যামোনিয়া বরফের মেঘের নিচে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোসালফাইড ((NH4)SH) বা অ্যামোনিয়াম সালফাইড ((NH4)2S, ১–২ বারের মধ্যে) দ্বারা গঠিত ঘনতর মেঘ এবং জলের (৩-৭ বার) অস্তিত্ব রয়েছে।[২১][২২] এখানে কোনও মিথেন মেঘ নেই। কারণ এখানকার তাপমাত্রা মিথেনের ঘনীভবনের পক্ষে অত্যধিক বেশি।[১৯] মেঘমণ্ডলীর ঘনতম স্তরটি জলীয় মেঘ দ্বারা গঠিত এবং বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের গতিবিজ্ঞানের উপর এই মেঘের প্রভাবই সর্বাধিক। এর কারণ জলের উচ্চ ঘনীভবন তাপ এবং অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাউডের তুলনায় উচ্চ মাত্রায় জলের প্রাচুর্য (নাইট্রোজেন ও সালফার উভয়ের থেকেই অক্সিজেন এক অধিকতর অতিপ্রচুর রাসায়নিক উপাদান)।[১৩] ট্রপোস্ফিয়ারের (২০০-৫০০ মিটার-বারে) এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের (১০-১০০ মিটার-বারে) বিভিন্ন লঘু কুয়াশার স্তর প্রধান মেঘস্তরের উপরে অবস্থান করে।[২১][২৩] স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের লঘু কুয়াশা স্তরটি ঘনীভূত ভারী পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন বা হাইড্রাজাইন দ্বারা গঠিত, যা উচ্চ স্ট্র্যাপোস্ফিয়ারে (১-১০০ মাইক্রোবার) সৌর অতিবেগুনি বিকিরণের প্রভাবে মিথেন থেকে উদ্ভূত হয়।[১৯] আণবিক হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিথেন অতিপ্রাচুর্যের আপেক্ষিকতার হার প্রায় ১০−৪,[১৫] যেখানে আণবিক মেঘের তুলনায় ইথেন ও অ্যাসেটাইলিনের মতো অন্যান্য লঘু হাইড্রোকার্বনের অতিপ্রাচুর্যের হার প্রায় ১০−৬[১৫]

বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল ১ মাইক্রোবারের চেয়ে কম চাপে অবস্থিত। এই বায়ুমণ্ডলে এয়ারগ্লো, মেরুজ্যোতিএক্স-রশ্মি বিচ্ছুরণের মতো ঘটনা লক্ষিত হয়।[২৪] এছাড়া এই বায়ুমণ্ডলে ক্রমবর্ধমান ইলেকট্রন ও আয়নের ঘনত্বের একাধিক স্তর এই গ্রহের আয়নমণ্ডলটি গঠন করেছে।[১৫] থার্মোস্ফিয়ারের উচ্চ তাপমাত্রার (৮০০-১০০০ কেলভিন) কারণ এখনও সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করা যায়নি।[১৮] তবে প্রচলিত মডেলগুলি ৪০০ কেলভিনের বেশি তাপমাত্রার কথা জানায় না।[১৫] এই উচ্চ তাপমাত্রার কারণ সম্ভবত উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন সৌর বিকিরণ (অতিবেগুনি ও এক্স-রশ্মি) বিশোষণ, বার্হস্পত্য চৌম্বকমণ্ডল থেকে অধঃক্ষিপ্ত তড়িদাহত কণার উত্তাপ, অথবা উপরিমুখে-সঞ্চারিত অভিকর্ষজ তরঙ্গের অপচয়।[২৫] বৃহস্পতির মেরু অঞ্চল দু’টিতে ও নিম্ন অক্ষাংশে থার্মোস্ফিয়ার ও এক্সোস্ফিয়ার থেকে যে এক্স-রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়, তা প্রথম পর্যবেক্ষিত হয়েছিল ১৯৮৩ সালে আইনস্টাইন মানমন্দির থেকে।[২৬] বৃহস্পতির চৌম্বকমণ্ডল থেকে আগত শক্তিমান কণাগুলির দ্বারা সৃষ্ট উজ্জ্বল ডিম্বাকৃতি অরোরাসমূহ গ্রহের মেরু অঞ্চল দু’টিকে বৃত্তাকারে ঘিরে থাকে। শুধুমাত্র চৌম্বক ঝড়ের সময় অরোরার যে আঞ্চলিক অনুরূপকগুলি সৃষ্টি হয়, সেগুলি ক্ষণস্থায়ী হলেও এই অরোরাগুলি বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের স্থায়ী বৈশিষ্ট্য।[২৬] বৃহস্পতির থার্মোস্ফিয়ার পৃথিবীর বাইরে প্রথম জায়গা যেখানে ট্রাইহাইড্রোজেন ক্যটায়ন (H+
3
) পর্যবেক্ষিত হয়েছে।[১৫] বর্ণালির মধ্য-অবলোহিত অংশে এই আয়ন প্রবলভাবে বিচ্ছুরিত হয়। বিচ্ছুরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৩ ও ৫ মাইক্রোমিটারের মধ্যে থাকে। এটিই থার্মোস্ফিয়ারের তাপহ্রাসকরণের প্রধান উপায়।[২৪]

রাসায়নিক গঠন সম্পাদনা

বৃহস্পতি ও সূর্যে
হাইড্রোজেনের আপেক্ষিকে মৌলের অতিপ্রাচুর্য[২]
মৌল সূর্য বৃহস্পতি/সূর্য
He/H ০.০৯৭৫ ০.৮০৭ ± ০.০২
Ne/H ১.২৩ × ১০−৪ ০.১০ ± ০.০১
Ar/H ৩.৬২ × ১০−৬ ২.৫ ± ০.৫
Kr/H ১.৬১ × ১০−৯ ২.৭ ± ০.৫
Xe/H ১.৬৮ × ১০−১০ ২.৬ ± ০.৫
C/H ৩.৬২ × ১০−৪ ২.৯ ± ০.৫
টেমপ্লেট:Nitrogen/H ১.১২ × ১০−৪ ৩.৬ ± ০.৫ (৮ বার)

৩.২ ± ১.৪ (৯–১২ বার)

O/H ৮.৫১ × ১০−৫ ০.০৩৩ ± ০.০১৫ (১২ বার)

০.১৯–০.৫৮ (১৯ বার)

টেমপ্লেট:Phosphorus/H ৩.৭৩ × ১০−৭ ০.৮২
টেমপ্লেট:Sulfur/H ১.৬২ × ১০−৫ ২.৫ ± ০.১৫
বৃহস্পতি ও সূর্যের আইসোটোপ-সংক্রান্ত অনুপাতসমূহ[২]
অনুপাত সূর্য বৃহস্পতি
13C/12C ০.০১১ ০.০১০৮ ± ০.০০০৫
15N/14N <২.৮ × ১০−৩ ২.৩ ± ০.৩ × ১০−৩

(০.০৮–২.৮ বার)

36Ar/38Ar ৫.৭৭ ± ০.০৮ 5.6 ± 0.25
20Ne/22Ne ১৩.৮১ ± ০.০৮ ১৩ ± ২
3He/4He ১.৫ ± ০.৩ × ১০−৪ ১.৬৬ ± ০.০৫ × ১০−৪
D/H ৩.০ ± ০.১৭ × ১০−৫ ২.২৫ ± ০.৩৫ × ১০−৫

বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের গঠন সামগ্রিকভাবে গ্রহটির গঠনেরই অনুরূপ।[২] ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর গ্যালিলিও বায়ুমণ্ডলীয় প্রোব বার্হস্পত্য বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে সরাসরি সেটিকে পর্যবেক্ষণ করার ফলে সকল গ্যাস দানবের মধ্যে এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলই সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হয়েছে।[২৭] বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলীয় গঠন সম্পর্কে অন্যান্য তথ্যসূত্রগুলি হল ইনফ্রারেড স্পেস অবজার্ভেটরি (আইএসও),[২৮] গ্যালিলিওক্যাসিনি অরবিটারদ্বয়,[২৯] এবং পৃথিবী থেকে কৃত পর্যবেক্ষণের তথ্যাবলি।[২]

বার্হস্পত্য বায়ুমণ্ডলের প্রধান দু’টি উপাদান হল আণবিক হাইড্রোজেন (H
2
) ও হিলিয়াম[২] অণুর সংখ্যা অনুযায়ী আণবিক হাইড্রোজেনের সাপেক্ষে হিলিয়াম অতিপ্রাচুর্যের পরিমাণ ০.১৫৭ ± ০.০০৪ এবং এটির ভর ভগ্নাংশ হল ০.২৩৪ ± ০.০০৫, যা সৌরজগতের আদিম মানের থেকে সামান্য কম।[২] এই অপর্যাপ্ততার কারণ সম্পূর্ণ বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। কিন্তু হিলিয়ামের কিয়দংশ সম্ভবত বৃহস্পতির অন্তস্থলে ঘনীভূত অবস্থায় রয়েছে।[২০] এই ঘনীভবন সম্ভবত হিলিয়াম বৃষ্টির আকারে বিদ্যমান: যেহেতু ১০,০০০ কিলোমিটারের বেশি গভীরে হাইড্রোজেন ধাতুতে রূপান্তরিত হয়, সেই হেতু হিলিয়াম ড্রপলেট গঠন করে হাইড্রোজেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই ড্রপলেটগুলি ধাতব হাইড্রোজেনের তুলনায় ঘনতর হয় এবং অন্তস্থলের দিকে অবতরণ করে। এই ঘটনাটি দিয়েই নিয়নের তীব্র বিক্ষেপটিকে (সারণি দেখুন) ব্যাখ্যা করা যায়। নিয়ন এমন এক মৌল যা সহজেই হিলিয়াম ড্রপলেটগুলিতে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং সেই প্রকার দ্রবীভূত অবস্থাতেই হিলিয়ামের সঙ্গে অন্তস্থলের দিকে পতিত হয়।[৩০]

বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে জল, মিথেন (CH4), হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S), অ্যামোনিয়া (NH3) ও ফসফাইনের (PH3) মতো বিভিন্ন সরল যৌগ পাওয়া যায়।[২] ট্রপোস্ফিয়ারের গভীরে (১০ বারের কম) এগুলির অতিপ্রাচুর্য ইঙ্গিত করে যে বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল কার্বন, নাইট্রোজেন, সালফার ও সম্ভবত অক্সিজেনে সমৃদ্ধ[b] এবং তার পরিমাণ সূর্যের সাপেক্ষে ২-৪ গুণনীয়ক।[c][২] আর্গন, ক্রিপ্টনজেননের মতো বিরল গ্যাসও সৌর মাত্রার তুলনায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় (সারণি দেখুন), কিন্তু নিয়ন তুলনামূলকভাবে অপ্রতুল।[২] আরসাইন (AsH3) ও জারমেনের (GeH4) মতো অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ এখানে খুবই সামান্য পরিমাণে উপস্থিত।[২] বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে ইথেন, অ্যাসিটিলিনডায়াসেটাইলিনের মতো সরল হাইড্রোকার্বনসমূহও নামমাত্র মাত্রায় পাওয়া যায়। সৌর অতিবেগুনি বিকিরণবৃহস্পতির চৌম্বকমণ্ডল থেকে আগত তড়িদাহত কণাগুলির প্রভাবে মিথেন থেকে এগুলির সৃষ্টি হয়।[২] মনে করা হয়, শ্যুমেকার-লেভি ৯-এর মতো ধূমকেতুর সঙ্গে এই গ্রহের সংঘাতের ফলে বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে উপস্থিত কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও জলের উদ্ভব ঘটেছে। ট্রপোস্ফিয়ার যে জলের উৎস হতে পারে না, তার কারণ শীতল ট্রপোপজ একটি শীতল ফাঁদের মতো কাজ করে, যা জলকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উঠে আসতে বাধা দেয় (উপরের উল্লম্ব গঠন অংশটি দেখুন)।[২]

পৃথিবী- ও মহাকাশযান-ভিত্তিক পরিমাপগুলি বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে আইসোটপীয় অনুপাতগুলি সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে। ২০০৩ সালের জুলাই মাসের হিসেব অনুযায়ী, ডিউটেরিয়াম অতিপ্রাচুর্যের স্বীকৃত মান হল (২.২৫ ± ০.৩৫) × ১০−৫,[২] যা সম্ভবত সৌরজগতের উদ্ভবের কারণ প্রাক্-সৌর নীহারিকাটির আদিম মানের নমুনাস্বরূপ।[২৮] বার্হস্পত্য বায়ুমণ্ডলে 15N থেকে 14N নাইট্রোজেন আইসোটোপগুলির অনুপাত হল ২.৩ × ১০−৩, যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রাপ্ত উক্ত অনুপাতের (৩.৫ × ১০−৩) তৃতীয়াংশ কম।[২] বৃহস্পতি সম্পর্কে এই শেষোক্ত আবিষ্কারটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সৌরজগতের উৎপত্তি-সংক্রান্ত পূর্ববর্তী তত্ত্বগুলিতে নাইট্রোজন আইসোটোপগুলির অনুপাতের পার্থিব মানটিকে আদ্যকালীন মনে করা হত।[২৮]

ক্ষেত্র, বেষ্টনী ও প্রবাহসমূহ সম্পাদনা

 
বৃহস্পতির উত্তর মেরুর কাছে কেন্দ্রীভূত বায়ুমণ্ডলের একটি দিগংশীয় সমদূরবর্তী অভিক্ষেপ

বৃহস্পতির দৃশ্যমান পৃষ্ঠভাগটি বিষুবরেখার সঙ্গে সমান্তরাল বেশ কয়েকটি বন্ধনীতে বিভক্ত। এই বন্ধনীগুলি দুই প্রকারের: হালকা রঙিন "ক্ষেত্র" (ইংরেজি: "zones") ও অপেক্ষাকৃতভাবে অন্ধকার "বেষ্টনী" (ইংরেজি: "belts")।[৬] প্রশস্ততর বিষুবীয় ক্ষেত্রটি মোটামুটি ৭° দক্ষিণ থেকে ৭° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে বিস্তৃত। বিষুবীয় ক্ষেত্রের উপরে ও নিচে যথাক্রমে ১৮° উত্তর ও ১৮° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ বিষুবীয় বেষ্টনী দু’টি প্রসারিত। বিষুবরেখা থেকে আরও দূরে উত্তর ও দক্ষিণ ক্রান্তীয় ক্ষেত্র অবস্থিত।[৬] বেষ্টনী ও ক্ষেত্রগুলির পর্যায়ক্রমিক নকশাটি মোটামুটি ৫০° অক্ষাংশে অবস্থিত মেরু অঞ্চল পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। এই অঞ্চলে পৌঁছে সেগুলির দৃষ্টিগোচরতা কিছুটা রুদ্ধ হয়েছে।[৩১] বেষ্টনী ও ক্ষেত্রে বিভক্ত এই মৌলিক গঠনটি সম্ভবত দুই মেরু পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ৮০° উত্তর বা দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত প্রসারিত।[৬]

ক্ষেত্র ও বেষ্টনীগুলির মধ্যে আকারের পার্থক্যের কারণ মেঘগুলির অস্বচ্ছতায় পার্থক্য। ক্ষেত্রগুলিতে অ্যামোনিয়ার ঘনীভবনের মাত্রা উচ্চতর। যার ফলে অধিকতর উচ্চতায় অ্যামোনিয়া বরফের ঘনতর মেঘগুলি দৃশ্যমান হয় এবং তারই ফলে সেগুলি হালকা রঙের দেখায়।[১৬] অন্যদিকে বেষ্টনীর মেঘগুলি ক্ষীণতর এবং নিম্ন উচ্চতায় অবস্থিত।[১৬] ট্রপোস্ফিয়ারের উপরিভাগ ক্ষেত্রগুলিতে শীতলতর এবং বেষ্টনীগুলিতে উষ্ণতর।[৬] বার্হস্পত্য ক্ষেত্র ও বন্ধনীগুলিকে যে রাসায়নিকগুলি রঙিন করে তুলেছে সেগুলির সঠিক প্রকৃতিটি জানা যায় না। কিন্তু সম্ভবত সালফার, ফসফরাসকার্বনের জটিল যৌগসমূহ এগুলির অন্তর্গত।[৬]

বার্হস্পত্য বন্ধনীগুলিকে ঘিরে রয়েছে এক ধরনের ক্ষেত্রীয় বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহ (বায়ু)। এগুলিকে "প্রবাহ" (ইংরেজি: belts) নামে অভিহিত করা হয়। যেখানে ক্ষেত্রগুলি বেষ্টনীতে অবস্থান্তরিত হয় সেখানে প্রবাহগুলি পূর্বমুখী (অগ্রমুখী ও বিষুবরেখার বিপরীতমুখে ধাবমান)। অন্যদিকে পশ্চিমমুখী (পশ্চাদগামী ও প্রত্যক্ষ গতি|পশ্চাদগামী]]) প্রবাহগুলি বেষ্টনী থেকে ক্ষেত্রে অবস্থান্তরের বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন।[৬] এই ধরনের প্রবাহ গতিবেগের নকশার অর্থ বিষুবরেখা থেকে মেরুর দিকে যাত্রাকালে ক্ষেত্রীয় বায়ুর গতি বেষ্টনীগুলিতে হ্রাস পায় এবং ক্ষেত্রগুলিতে বৃদ্ধি পায়। তাই বেষ্টনীগুলিতে বায়ু স্পর্শকপীড়ন ঘূর্ণাবর্তীয় এবং ক্ষেত্রগুলিতে প্রতীপ ঘূর্ণাবর্তীয়[২২] বিষুবীয় ক্ষেত্রটি এই নিয়মের একটি ব্যতিক্রম। এখানে শক্তিশালী পূর্বমুখী (পশ্চাদগামী) প্রবাহ লক্ষিত হয় এবং একেবারে বিষুবরেখায় বায়ুর গতি স্থানীয়ভাবে সর্বনিম্ন। বৃহস্পতিতে প্রবাহের গতি উচ্চ (১০০ মাইল/সেকেন্ডেরও বেশি)।[৬] এই গতি ০.৭-১ বার চাপের বিন্যাসক্রমে অবস্থিত অ্যামোনিয়া মেঘগুলির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অগ্রমুখী প্রবাহগুলি সাধারণভাবে পশ্চাদগামী প্রবাহগুলির তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী হয়।[৬] প্রবাহগুলির উল্লম্ব ব্যাপ্তির কথা জানা যায় না। দুই বা তিন মাত্রা উচ্চতার পরে[ক] মেঘগুলির উপরে এগুলি ম্রিয়মান হয়ে যায়। অন্যদিকে মেঘস্তরের নিচে বায়ুর গতি সামান্য বৃদ্ধি পায় এবং নিচে অন্তত ২২ বার চাপমাত্রা পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকে। গ্যালিলিও প্রোবটি এই চাপমাত্রা পর্যন্তই কার্যকর অবস্থায় পৌঁছাতে পেরেছিল।[১৭]

 
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে ক্ষেত্রীয় বায়ুর গতি

বৃহস্পতির এই বন্ধনীবদ্ধ গঠনটির উৎস সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়। যদিও এটি সম্ভবত যা পৃথিবীর হ্যাডলি কোষকে চালনা করে তার অনুরূপ। সরলতম ব্যাখ্যাটি হল এই যে, ক্ষেত্রগুলি বায়ুমণ্ডলীয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহের স্থান এবং বেষ্টনীগুলি নিম্নমুখী প্রবাহের প্রকাশ।[৩২] ক্ষেত্রগুলিতে বায়ু অ্যামোনিয়ায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠলে তা ছড়িয়ে পড়ে ও শীতল হয়ে যায়। এর ফলে উচ্চ ও ঘন মেঘগুলির উদ্ভব ঘটে। বেষ্টনী অঞ্চলে বায়ু অবতরণ করলেও পৃথিবীর অভিসৃতি ক্ষেত্রের মতোই সমতাপ প্রক্রিয়ায় উষ্ণায়ন চলতে থাকে এবং সাদা অ্যামোনিয়া মেঘগুলি উবে যায়। তার ফলে নিম্নবর্তী অধিকতর ঘোর রঙের মেঘগুলি প্রকাশিত হয়ে পড়ে। বৃহস্পতির বন্ধনীগুলির অবস্থান ও প্রস্থ এবং প্রবাহগুলির গতি ও অবস্থান লক্ষণীয়ভাবে সুস্থির। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে এগুলির মধ্যে পরিবর্তন অতি সামান্যই ঘটেছে। পরিবর্তনের একটি উদাহরণ হল ২৩° উত্তর অক্ষাংশে উত্তর ক্রান্তীয় ক্ষেত্র ও উত্তর নাতিশীতোষ্ণ বেষ্টনীর মধ্যবর্তী সীমানায় অবস্থিত সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী পূর্বমুখী প্রবাহটির গতির হ্রাসপ্রাপ্তি।[৭][৩২] যদিও সময়ে সময়ে বর্ণময়তা ও গাঢ়তার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায় (নিচে দেখুন)। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ায় এই ধরনের পরিবর্তন প্রথম পর্যবেক্ষিত হয়েছিল।[৩৩]

নির্দিষ্ট বন্ধনীসমূহ সম্পাদনা

 
বৃহস্পতির মেঘ বন্ধনীগুলির আদর্শায়িত অলংকরণ, সেগুলির প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষর-সংক্ষেপ সহ। হালকা রঙের ক্ষেত্রগুলিকে ডানদিকে এবং গাঢ়তর বেষ্টনীগুলি বাঁদিকে নির্দেশ করা হয়েছে। বৃহৎ লাল বিন্দু ও ডিম্বাকার বিএ দু’টিকে যথাক্রমে দক্ষিণ ক্রান্তীয় ক্ষেত্র ও দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ বেষ্টনীতে দেখানো হয়েছে।

যে বেষ্টনী ও ক্ষেত্রগুলি বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলকে বিভাজিত করে রেখেছে, সেগুলির প্রতিটির নিজস্ব নাম ও স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলির সূত্রপাত ঘটেছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে, যেগুলি মেরু থেকে মোটামুটি ৪০-৪৮° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত প্রসারিত। এই নীলচে-ধূসর অঞ্চলগুলি সচরাচর ক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যহীন।[৩১]

লিম্ব ডার্কেনিং, ফোরশর্টেনিং ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির সাধারণ ব্যাপনের কারণে উত্তর নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের উত্তর অংশটি মেরু অঞ্চলগুলির তুলনায় অধিকতর অস্পষ্ট। উত্তর-উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলীটি সর্ব-উত্তর প্রান্তে অবস্থিত স্বতন্ত্র বেষ্টনী হলেও মাঝে মাঝে এটি অদৃশ্য হয়ে যায়। বিশৃঙ্খলাগুলিকে সচরাচর গৌণ ও স্বল্পকাল স্থায়ী হয়ে আসতে দেখা যায়। উত্তর নাতিশীতোষ্ণ ক্ষেত্রটির উত্তর দিকটি সম্ভবত অধিকতর সহজলক্ষ্য। এই এলাকাটি সাধারণত শান্তই থাকে এবং এখানকার অন্যান্য অপ্রধান বেষ্টনী ও ক্ষেত্রগুলিকে কখনও কখনও দেখাও যায়।[৩৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. ^ The scale height sh is defined as sh = RT/(Mgj), where R = 8.31 J/mol/K is the gas constant, M ≈ 0.0023 kg/mol is the average molar mass in the Jovian atmosphere,[৪] T is temperature and gj ≈ 25 m/s2 is the gravitational acceleration at the surface of Jupiter. As the temperature varies from 110 K in the tropopause up to 1000 K in the thermosphere,[৪] the scale height can assume values from 15 to 150 km.
  2. ^ The Galileo atmospheric probe failed to measure the deep abundance of oxygen, because the water concentration continued to increase down to the pressure level of 22 bar, when it ceased operating. While the actually measured oxygen abundances are much lower than the solar value, the observed rapid increase of water content of the atmosphere with depth makes it highly likely that the deep abundance of oxygen indeed exceeds the solar value by a factor of about 3—much like other elements.[২]
  3. ^ Various explanations of the overabundance of carbon, oxygen, nitrogen and other elements have been proposed. The leading one is that Jupiter captured a large number of icy planetesimals during the later stages of its accretion. The volatiles like noble gases are thought to have been trapped as clathrate hydrates in water ice.[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Hubble takes close-up portrait of Jupiter"www.spacetelescope.org। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৭ 
  2. Atreya Mahaffy Niemann et al. 2003
  3. Guillot (1999)
  4. Sieff et al. (1998)
  5. Atreya ও Wong 2005
  6. Ingersoll (2004), pp. 2–5
  7. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 1942Vasavada নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 1974Vasavada নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 1978bVasavada নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 1980Vasavada নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  11. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 1976Vasavada নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  12. Smith, Bradford A.; Soderblom, Laurence A.; Johnson, Torrence V.; Ingersoll, Andrew P.; Collins, Stewart A.; Shoemaker, Eugene M.; Hunt, G. E.; Masursky, Harold; Carr, Michael H. (১৯৭৯-০৬-০১)। "The Jupiter System Through the Eyes of Voyager 1"। Science204 (4396): 951–972। আইএসএসএন 0036-8075ডিওআই:10.1126/science.204.4396.951পিএমআইডি 17800430বিবকোড:1979Sci...204..951S 
  13. Ingersoll (2004), pp. 13–14
  14. Yelle (2004), p. 1
  15. Miller Aylward et al. 2005
  16. Ingersoll (2004), pp. 5–7
  17. Ingersoll (2004), p. 12
  18. Yelle (2004), pp. 15–16
  19. Atreya Wong Baines et al. 2005
  20. Atreya Wong Owen et al. 1999
  21. West et al. (2004), pp. 9–10, 20–23
  22. Vasavada (2005), p. 1937
  23. Ingersoll (2004), p. 8
  24. Yelle (2004), pp. 1–12
  25. Yelle (2004), pp. 22–27
  26. Bhardwaj ও Gladstone 2000, পৃ. 299–302।
  27. McDowell, Jonathan (১৯৯৫-১২-০৮)। "Jonathan's Space Report, No. 267"Harvard-Smithsonian Center for Astrophysics। ২০১১-০৮-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৬ 
  28. Encrenaz 2003
  29. Kunde et al. (2004)
  30. Sanders, Robert (২২ মার্চ ২০১০)। "Helium rain on Jupiter explains lack of neon in atmosphere"। University of Berkeley। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০১২ 
  31. Rogers (1995), p. 81.
  32. Ingersoll (2004), p. 5
  33. Graney (2010)
  34. Rogers (1995), pp. 85, 91–4.

উল্লেখপঞ্জি সম্পাদনা

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা