বু আলী শাহ কালান্দার

শেখ শরফুদ্দিন বু আলী কালান্দার পানিপথী (১২০৯-১৩২৪ খ্রিষ্টাব্দ বা ৭২৪ হিজরি) চিশতিয়া তরিকার একজন সূফি সাধক যিনি ভারতে বাস করতেন।[১] পানিপথের শহরে তার দরগাহ (মাজার) অবস্থিত যা একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান। তার আসল নাম ছিল শেখ শরফুদ্দিন কিন্তু তিনি বু আলী শাহ নামেই অধিক পরিচিত। তার পিতার নাম শেখ ফখর উদ্দিন, যিনি তার সময়ে মহান পণ্ডিত এবং দরবেশ ছিলেন। তিনি খুব অল্প বয়সে তার পড়াশোনা শেষ করেন এবং পরবর্তীকালে প্রায় বিশ বছর দিল্লির কুতুব মিনারের নিকটে পড়াশোনা করেন। দিওয়ানে হযরত শরফুদ্দিন বু আলী কালান্দার[২] নামে তিনি ফার্সি কবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত করেন যা পরবর্তকালে খাজা শাহাউদ্দিন কর্তৃক পাঞ্জাবী ভাষায় অনূদিত হয়। ফার্সি ভাষায় এটি একটি মহান সূফি কাজ।[৩][৪]

শেখ শরফুদ্দিন বু আলী কালান্দার পানিপথী
Six Sufi masters: Khvaja Mu'in al-Din, Ghaus al-A'zam, Khvaja Qutb al-Din, Shaikh Mihr, Shah Sharafuddeen Bu 'Ali Qalandar and Sultan Musa Shaikh.
জন্মc.১২০৯
মৃত্যু১৩ রমজান ৭২৪ হিজরী
c. ১৩২৪
পানিপথ, হরিয়ানা
প্রধান স্মৃতিযুক্ত স্থানবু আলী শাহ কালান্দার দরগাহ, পানিপথ, হরিয়ানা
এর রক্ষাকর্তাহরিয়ানা, ভারত
ঐতিহ্য বা ধরন
সুফিবাদ

জন্মস্থান সম্পাদনা

একটি সূত্রে জানা যায় তিনি ১২০৯ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে ভারতের পানিপথে জন্ম গ্রহণ করেন। তার দরগাহের সমাধিফলকে ফার্সি ভাষায় লেখা আছে, তার জন্মস্থান গাঞ্জায় যা বর্তমানে আজারবাইজান। এ থেকে বুঝা যায় তার বংশ নুমান ইবনে থাবিত হযরত আবু হানিফা থেকে এসেছে। তার পিতার নাম শেখ ফখর উদ্দিন, যিনি তার সময়ের মহান পণ্ডিত এবং দরবেশ ছিলেন। তার মাতা বিবি হাফিজা, মৌলানা সৈয়দ নিমাত উল্লাহ হামদানির কন্যা। ৬০০ হিজরীতে তার পিতা ইরাক থেকে ভারতে আসেন এবং পানিপথে বসতি স্থাপন করেন।[৫]

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

চার বছর বয়স থেকেই বু আলী কালান্দার মায়ের কাছ থেকে পবিত্র কুরআন পাঠ করতে শিখেন এবং পণ্ডিত রাম সানাহি থেকে হিন্দু শাস্ত্রের উপর জ্ঞান অর্জন করেন। তরুণ বয়সে তিনি তিনটি তরিকার (সোহারার্দিয়া, কাদেরিয়া এবং নকশাবন্দিয়া) জ্ঞান অর্জন করেন। তার উনিশ জন আধ্যাত্মিক পীর বা দীক্ষাগুরু রয়েছে, যাদের মধ্যে এগারজন মুসলমান এবং আটজন হিন্দু।[৬]

সমাধিসৌধ সম্পাদনা

উপাখ্যান সম্পাদনা

এই মহান সাধকের অনেক উপাখ্যান লোক মুখে প্রচলিত রয়েছে। একটি উপখ্যান এমন রয়েছে যে, প্রায় ৩৬ বছর কার্নাল নদীর পানিতে দাড়িঁয়ে থেকে সাধনা করার ফল স্বরূপ মুহাম্মাদ তাকে বু আলী (আলীর সুবাস)উপাধি দান করেন। এই মর্যাদাপ্রাপ্ত হওয়ার পর অনেক মহান সুফি সাধক তার সাক্ষাত লাভ করার জন্য আসেন। অন্য আরেকটি উপাখ্যানে উল্লেখ আছে, একদিন মুহাম্মাদ তার বেশারতে (স্বপ্ন) আসেন এবং তাকে একটি ইচ্ছা পূরণের আশ্বাস দেন। কালান্দার নবুওয়াতের আবেদন করল এবং তাকে বলা হল নবুওয়তের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে এবং মুহাম্মাদ হচ্ছেন শেষ নবী। তারপর তিনি আলী হতে চাইলেন এবং বলা হল ঐ মর্যাদাটিও আগেই পূর্ণ হয়েছে। এরপর তিনি আলীর অন্তত সুবাস পাওয়ার জন্য আবেদন করলেন এবং তার এই ইচ্ছা পূর্ণ করা হল। তার নামের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল এই যে, বু আলী কুন্যিয়াত আবু আলী এর অন্যরূপ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০১৫ 
  2. Shahudin, Maulavi। Diwane Bu Ali। Malik Chananuddin। 
  3. Boota, Sohail (২০০৭)। Tazkara Aulia। Sialkot: Shahudin Acadmey। 
  4. Qadri Sarwari, Mumtaz Ali। Hazeena Tul Uns। Sialkot: Zam Zama Printing Press। 
  5. "More about the saint"http://www.aulia-e-hind.com/d। ৪ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৫  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  6. "কালান্দার শাহ"http://www.aulia-e-hind.com/। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১৫  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)