বুলবুল চৌধুরী

বাঙালি নৃত্যশিল্পী

বুলবুল চৌধুরী (১ জানুয়ারি ১৯১৯- ১৭মে ১৯৫৪; প্রকৃত নাম রশীদ আহমেদ চৌধুরী) ব্রিটিশ ভারতের একজন বাঙালি নৃত্য শিল্পী। তিনি মূলত রক্ষণশীল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নৃত্য প্রতিষ্ঠার চিত্র হিসেবে এবং বাংলাদেশে আধুনিক নাচের অগ্রগামী হিসেবে পরিচিত।[১]

বুলবুল চৌধুরী
জন্ম(১৯১৯-০১-০১)১ জানুয়ারি ১৯১৯
মৃত্যু১৭ মে ১৯৫৪(1954-05-17) (বয়স ৩৫)
মাতৃশিক্ষায়তনস্কটিশ চার্চ কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশানৃত্যশিল্পী
দাম্পত্য সঙ্গীবেগম আফরোজা বুলবুল
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৪)

জন্ম সম্পাদনা

বুলবুল চৌধুরী ১ জানুয়ারি ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার চুনতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামটি বর্তমানে বাংলাদেশের লোহাগাড়া উপজেলায় অবস্থিত।

শৈশব ও শিক্ষা সম্পাদনা

বুলবুল চৌধুরীর পিতা মোহাম্মদ আজমুল্লাহ ব্রিটিশ রাজত্বকালে তৎকালীন বাংলার পুলিশ সার্ভিসে একজন পরিদর্শক (পরে পুলিশের উপপরিদর্শক পদে উন্নীত হন) ছিলেন। তাঁর পিতামহ মুন্সী ফজার আলী দেওয়ান কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। যিনি চট্টগ্রামেও আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন। বুলবুল চৌধুরীর আরবি ও ফারসি ভাষার গৃহশিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি হাওড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মানিকগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৪ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৩৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন এবং কলা শিল্প বিভাগে মাস্টার্স করেন ১৯৪৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।[১]

কলকাতার মাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার সময় তিনি শান্ত শিল্পী, সাধু প্লেয়ার, সুরকার তিমির বারন ভট্টাচার্য, শিল্পী উদয় শংকর ও সাধনা বোসের মতো বিখ্যাত শিল্পীদের সাথে দেখা করেন। এই পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে তিনি একজন নৃত্যশিল্পী হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি রবীন্দ্রনাথ নাট্য কচ ও দেবজনিতে সাধুনা বসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ার সুযোগ পান। তখন সমসাময়িক রক্ষণশীল মুসলমানদের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি এড়ানোর জন্য তিনি ছদ্মনাম বুলবুল চৌধুরী নামটি গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৩৭ সালে তিনি ওরিয়েন্টাল ফাইন আর্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠানেও সহায়তা করেছিলেন।[১]

কর্মজীবন সম্পাদনা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর পর, ১৯৪০ সালের জানুয়ারি মাসে চৌধুরী তাঁর সিডিয়ল নিয়ে ঢাকায় আসেন এবং বেশ কয়েকটি নাচের নাটক সম্পাদন করেন। কলকাতায় ফিরে তিনি ৩১ মার্চ ১৯৪১ সালে কলকাতা সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রামে চলে যান এবং ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কাজ করেন। ১৯৫০-১৯৫২ সময় তিনি ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের নাচের কনসার্টে অভিনয় করেন। ১৯৫৩ সালে, ব্রিটেনে, আয়ারল্যান্ড, হল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং ফ্রান্স সহ ইউরোপে তার সফর যান। ১৯৪৯ সালে চৌধুরীকে পাকিস্তানের জাতীয় শিল্পী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। মুগল ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে নাচ বসিয়ে তিনি নৃত্য প্রতি রক্ষণশীল মুসলিম মনোভাবকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং নাচকে সামাজিক শ্রদ্ধা ও জনপ্রিয়তা অর্জনে সহায়তা করেছিলেন। চৌধুরী ১৯৪২ সালে একটি উপন্যাস প্রকাশিত করেছিলেন। তিনি কয়েকটি ছোট গল্প লিখেছিলেন।[১]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

 
বুলবুল ও তার স্ত্রী

বুলবুল চৌধুরী বেগম আফরোজা বুলবুলকে বিয়ে করেন, যিনিও একজন নৃত্যশিল্পী এবং অভিনেত্রী ছিল। তার স্ত্রী ১৯৯০ সালে মারা যান।

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার সম্পাদনা

১৭মে ১৯৫৪ সালে ৩৫ বছর বয়সে কলকাতায় ক্যান্সারে চৌধুরীর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর, ১৭ মে ১৯৫৫ তারিখে, তার স্ত্রী আফরোজা, কলকাতা বুলবুল ইনস্টিটিউট অফ কালচার এবং ঢাকায় বুলবুল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন (বিএএফএ)। যেটি বর্তমানে বুলবুল ললিতকলা একাডেমি নামেও পরিচিত। এটি সূক্ষ্ম শিল্প প্রতিষ্ঠান যা রক্ষণশীল বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে নাচ জনপ্রিয়করণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আফরোজা চৌধুরীরি লেখেছেন স্মৃতিকথা, সুন্দর এই পৃথিবী অমার।[১]

১৯৫৯ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রাইড অফ পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার পান।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বুলবুল চৌধুরী"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা