বুলগেরীয় ভাষা (বুলগেরীয় ভাষায় български ব্যল্‌গার্স্কি আ-ধ্ব-ব: ˈbɤlgarski) বুলগেরিয়ার সরকারি ভাষা। দেশটির প্রায় ৮০ লক্ষ লোক এই ভাষাতে কথা বলেন। এছাড়াও কানাডা, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইসরায়েল, মলদোভা, রোমানিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনেগ্রো, তুরস্ক, ইউক্রেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ভাষাটি প্রচলিত। এথনোলগ অনুসারে সারা বিশ্বে প্রায় ৯০ লক্ষ লোক বুলগেরীয় ভাষাতে কথা বলেন। ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ম্যাসিডোনীয় ভাষার সাথে মিলে বুলগেরীয় ভাষা স্লাভীয় ভাষাসমূহের দক্ষিণ শাখার পূর্ব দলটি গঠন করেছে। রুশ, সার্বীয় এবং ম্যাসিডোনীয় ভাষার মত বুলগেরীয় ভাষাও সিরিলীয় লিপিতে লেখা হয়।

বুলগেরীয়
български
ব্যলগার্স্কি
দেশোদ্ভববুলগেরিয়া, ইউক্রেন, মলদোভা, সার্বিয়ার পশ্চিমাংশ, রোমানিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, গ্রিস, তুরস্ক বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অভিবাসী সম্প্রদায়ে
অঞ্চলবলকান
মাতৃভাষী
৯০ লক্ষ (এথনোলগ)
সরকারি অবস্থা
সরকারি ভাষা
বুলগেরিয়া
নিয়ন্ত্রক সংস্থাবুলগেরীয় ভাষা ইন্সটিটিউট, বুলগেরীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি (Институт за български език)
ভাষা কোডসমূহ
আইএসও ৬৩৯-১bg
আইএসও ৬৩৯-২bul
আইএসও ৬৩৯-৩bul

সরকারী মর্যাদা

সম্পাদনা

বুলগেরীয় ভাষা বুলগেরীয় প্রজাতন্ত্রের সরকারি ভাষা। বুলগেরীয় ভাষাভাষীরা দেশটির সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্ত কর্মকাণ্ড বুলগেরীয় ভাষাতেই সম্পন্ন হয়। শিক্ষার সকল স্তরের মাধ্যম হিসেবে বুলগেরীয় ভাষা ব্যবহার করা হয় এবং ইলেকট্রনিক ও মুদ্রিত গণমাধ্যমেরও এটি প্রধান ভাষা।

ইতিহাস

সম্পাদনা

মূলত পূর্ব বলকান অঞ্চলে স্লাভীয় আগ্রাসন এবং সাধু সিরিল ও সাধু মেথোদিউসের বৃহত্তর মোরাভিয়াতে ৮৬০ সালে মিশনের মাধ্যমে বুলগেরীয় ভাষার প্রাগৈতিহাসিক পর্ব শুরু হয়। এরপর বুলগেরীয় ভাষার ইতিহাসকে তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়—প্রাচীন, মধ্য এবং আধুনিক।

  • বুলগেরীয় ভাষার প্রাচীন যুগটি ৯ম শতক থেকে ১১শ শতক পর্যন্ত বিস্তৃত। এসময়ের বেশির ভাগ লেখাই প্রাচীন গির্জা স্লাভোনীয় ভাষায় লেখা ধর্মীয় রচনাবলী। সাধু সিরিল, সাধু মেথোদিউস ও তাদের আনুসারীরা বাইবেল এবং অন্যান্য ধর্মীয় সাহিত্য গ্রিক ভাষা থেকে এই ভাষাতে অনুবাদ করেন। প্রাচীন বুলগেরীয় ভাষায় লেখা রচনাবলী গোটা স্লাভীয় ভাষাপরিবারেরই প্রাচীনতম লিখিত নিদর্শন।
  • মধ্য বুলগেরীয় পর্বটি ১২শ শতকে শুরু হয়ে ১৫শ শতকে শেষ হয়। এসময় বুলগেরীয় ভাষাতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ভাষাটি স্লাভীয় ভাষার কারক ব্যবস্থা হারিয়ে ফেলে এবং একটি নির্দিষ্টতাবাচক প্রপদের ব্যবহার শুরু করে।
  • ১৬শ শতকে বুলগেরীয় ভাষার আধুনিক পর্বটি শুরু হয়। তবে আধুনিক সাহিত্যের ভাষাটি ১৯শ শতকে এসে বিকাশ লাভ করে।

উপভাষা

সম্পাদনা

আধুনিক বুলগেরীয় ভাষাটি পূর্ব ও পশ্চিমের দুইটি উপভাষা দলে বিভক্ত, যেগুলি আবার একাধিক উত্তর ও দক্ষিণ উপভাষায় বিভক্ত। আধুনিক সাহিত্যিক ভাষাটি মূলত উত্তর-পূর্বে উপভাষাগুলিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

বর্ণমালা ও ধ্বনিব্যবস্থা

সম্পাদনা
বুলগেরীয় ISO 9 লিপ্যন্তর আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালা* বর্ণের নাম বাংলা
А а A a A a /a/ বা /ɐ/ a
Б б B b B b /b/ বা /p/ бъ বা
В в V v V v /v/ বা /f/ въ বা
Г г G g G g /ɡ/ বা /k/ гъ বা
Д д D d D d /d/ বা /t/ дъ বা
Е е E e E e /ɛ/ е
Ж ж Ž ž Zh zh /ʒ/ বা /ʃ/ жъ বা
З з Z z Z z /z/ বা /s/ зъ বা
И и I i I i /i/ и
Й й J j Y y /j/ и кратко য়
К к K k K k /k/ বা /ɡ/ къ বা
Л л L l L l /l/ বা /ɫ/ лъ , ক্ষেত্রবিশেষে ল্য
М м M m M m /m/ мъ
Н н N n N n /n/ нъ , ক্ষেত্রবিশেষে
О о O o O o /ɔ/ বা /o/ о বা
П п P p P p /p/ বা /b/ пъ বা
Р р R r R r /r/ ръ
С с S s S s /s/ বা /z/ съ বা
Т т T t T t /t/ বা /d/ тъ বা
У у U u U u /u/, /o/ বা /w/ y , বা অসমীয়া
Ф ф F f F f /f/ বা /v/ фъ
Х х H h H h /x/ хъ সিলেটি/চাটগাঁইয়া বা অসমীয়া শ/ষ/স
Ц ц C c Ts ts /t͡s/ цъ ৎস
Ч ч Č č Ch ch /t͡ʃ/ чъ
Ш ш Š š Sh sh /ʃ/ বা /ʒ/ шъ বা
Щ щ Št št1 Sht sht /ʃt/ щъ শ্‌ত
Ъ ъ Ǎ ǎ1 A a /ɤ/ বা /ɐ/ ер голям বা বা
Ь ь ' 1 Y y /j/ বা অনুক্ত ер малък য়
Ю ю Ju ju1 Yu yu /ju/, /jo/, /u/ বা /o/ ю য়ু বা য় বা বা
Я я Ja ja1 Ya ya /ja/, /jɐ/, /a/ বা /ɐ/ я য়া বা

ব্যাকরণ

সম্পাদনা

বুলগেরীয় ও ম্যাসডোনীয় ভাষার অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য এগুলিকে অন্যান্য সব স্লাভীয় ভাষা থেকে স্বতন্ত্র করেছে। দুইটি ভাষাতেই একটি নির্দিষ্টতাসূচক প্রপদ (definite article) আছে, যেটি বিশেষ্যের পরে বসে সেটিকে নির্দিষ্ট করে। বাংলা ভাষাতে "টা", "টি", ইত্যাদি নির্দিষ্টতাসূচক প্রপদের ব্যবহারের সাথে ভাষা দুইটির এইদিক থেকে মিল আছে। বুলগেরীয় ভাষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্টতাসূচক প্রপদটি হল "তা"। যেমন বুলগেরীয় ভাষায় ঝ়েনা শব্দের অর্থ মহিলা। এর সাথে নির্দিষ্টতাসূচক প্রপদ "তা" যোগ করলে পাওয়া যায় "ঝ়েনাতা", যার অর্থ "মহিলাটি"। বুলগেরীয় ভাষা ও ম্যাসিডোনীয় ভাষাতে সাধারণ স্লাভীয় ভাষাতে উপস্থিত কারক ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ইংরেজির মত এগুলিতেও বিভক্তির সাহায্যে নয়, বরং পুরঃসর্গ (preposition) ব্যবহার করে কারক তথা বাক্যের বিভিন্ন উপাদান-অংশের মধ্যকার ব্যাকরণিক সম্পর্ক প্রকাশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বুলগেরীয় ভাষাতে "ক্‌নিগাতা জ়া ঝ়েনাতা" বাক্যাংশটির অর্থ "মহিলাটি সম্পর্কিত বই"। এখানে "জ়া" পূর্বসর্গটি দুইটি বিশেষ্যের মধ্যে সম্পর্কবাচক কারক নির্দেশ করছে। আবার "দাদোহ ক্‌নিগাতা না ঝ়েনাতা" বাক্যটির অর্থ "আমি বইটি মহিলাটিকে দিলাম" এই বাক্যে "না" পূর্বসর্গটি দেওয়া ক্রিয়ার সাথে মহিলাটির সম্প্রদান কারক সম্পর্ক নির্দেশ করছে। তবে দুইটি ভাষাতেই স্লাভীয় সম্বোধন কারকের রূপটি এখনও বিদ্যমান। বুলগেরীয় ক্রিয়াগুলির বহু রূপ হতে পারে। সাধারণ বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ কাল, পুরাঘটিত ও অপুরাঘটিত প্রকার, অনির্দিষ্ট (aorist) অতীত, অনুজ্ঞা, ক্রিয়াবাচক ক্রিয়াবিশেষণ, এবং বিভিন্ন ক্রিয়াবাচক বিশেষণ। ক্রিয়ার অসমাপিকা রূপটি বর্তমানে বিলুপ্ত। কিছু কিছু বিশেষ ক্রিয়ারূপ কোন ঘটনার ব্যাপারে সন্দেহ কিংবা সত্যতা কিংবা প্রত্যক্ষদর্শিতা নির্দেশ করতে ব্যবহার করা হয়।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা