মাহমুদুল হক

বাংলাদেশী কথাশিল্পী

মাহমুদুল হক (১৬ নভেম্বর ১৯৪১ – ২১ জুলাই ২০০৮) একজন বাংলাদেশি লেখক। তাকে বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান কথাশিল্পী বলা হয়ে থাকে। তার লেখনশৈলী ও শব্দচয়নের মুনশিয়ানা চমকপ্রদ। তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।[১][২]

মাহমুদুল হক
জন্ম১৬ নভেম্বর ১৯৪১
মৃত্যু২১ জুলাই ২০০৮(2008-07-21) (বয়স ৬৭)
জাতীয়তাবাংলাদেশি
মাতৃশিক্ষায়তনজগন্নাথ কলেজ
পেশাসাহিত্যিক
পরিচিতির কারণঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার
উল্লেখযোগ্য কর্ম
কালো বরফ, জীবন আমার বোন, মাটির জাহাজ, প্রতিদিন একটি রুমাল, আমি সম্রাট
পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৭)

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মাহমুদুল হক ১৯৪১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সিরাজুল ইসলাম, মায়ের নাম মাহমুদা বেগম। ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় পর পিতা সরকারের উচ্চপদে চাকরিসূত্রে পূর্ব পাকিস্তানে যোগদান করেন এবং বেশ পরে তিনি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ১৯৫১ সালে আজিমপুরে বসবাস শুরু করেন। তিনি ছয় ভাই চার বোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শিক্ষা ও পেশাগত জীবন সম্পাদনা

মাহমুদুল হকের পড়ালেখার হাতেখড়ি হয়েছিল বারাসাতের কালীকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৫২ সালে ঢাকার লালবাগের ওয়েস্ট এন্ড স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। রাতকানা রোগের কারণে মাঝখানে কিছুদিন তিনি পড়ালেখায় বিরতি দেন। পরে তিনি ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরে তিনি জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হলেও পড়ালেখার চেয়ে আড্ডাবাজিতে মগ্ন হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার ইতি ঘটান। দৈনিক সংবাদ পত্রিকার অনুবাদক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু তিন মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি প্রথমে মনোহারি, পরে জুয়েলারি ব্যবসার সাথে যুক্ত হন। পরে অবশ্য মীজানুর রহমান এবং প্রতাপউদ্দিনের সাথে মিলি ‘গাঙচিল প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৬৭ সালে; কিন্তু এ ব্যবসাও তার টেকে নি।

সাহিত্যজীবন সম্পাদনা

মাহমুদুল হকের শিক্ষক ছিলেন কথাশিল্পী শহীদ সাবের। তার প্রত্যক্ষ প্রেরণায় তিনি সাহিত্যের সাথে যুক্ত হন এবং প্রথমে ‘অগ্রগামী’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটির মাত্র ৩টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। মাহমুদুল হক যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তখন ‘রেড হর্নেট’ (১৯৫৪) ডিটেকটিভ উপন্যাস রচনা করেন। এ সময় তিনি ‘অরণ্য বাসর’ ও ‘আমি সম্রাট’ নামি দুটি রোমাঞ্চধর্মী উপন্যাসও লিখেছিলেন। তবে তিনি ১৯৮৪ সালের পর আর লেখালেখি করেন নি।[৩]

সাহিত্যকর্ম সম্পাদনা

তার লিখিত কিছু বই হল:[৪]

উপন্যাস সম্পাদনা

  • অনুর পাঠশালা (১৯৬৭)
  • নিরাপদ তন্দ্রা (১৯৬৮)
  • জীবন আমার বোন (১৯৭২)[মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক]--প্রধান চরিত্র(খোকা,রঞ্চু,মুরাদ,ইয়াসিন প্রমুখ]
  • কালো বরফ (১৯৭৭) [দেশভাগ নিয়ে রচিত,কেন্দ্রীয় চরিত্রঃ আঃ খালেক]
  • অশরীরী (১৯৭৯)
  • পাতালপুরী (১৯৮১)
  • খেলাঘর (১৯৮৮)
  • মাটির জাহাজ (১৯৭৭)

শিশুতোষ উপন্যাস সম্পাদনা

  • চিক্কোর কাবুক (১৯৭৯)

গল্পগ্রন্থ সম্পাদনা

  • প্রতিদিন একটি রুমাল (১৯৯৪)
  • মাহমুদুল হকের নির্বাচিত গল্প (১৯৯৯)
  • মানুষ মানুষ খেলা (২০০৯)
  • অগ্রন্থিত গল্প [সংগ্রহ ও সম্পাদনা, আবু হেনা মোস্তফা এনাম] (২০১০)

অনুবাদগ্রন্থ সম্পাদনা

  • পল হোরগ্যানের নির্বাচিত গল্প, দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৬৯)
  • শ্বাপদ (১৯৭০)
  • যুদ্ধ যখন শেষ হলো (১৯৭২)

প্রবন্ধ/স্মৃতিকথা[৪] সম্পাদনা

  • বিড়ালের মামী [সৈনিক পত্রিকায় মুদ্রিত] (১৯৫৪)
  • কি লিখবে? [সৈনিক পত্রিকায় মুদ্রিত] (১৯৫৪)
  • মোহিনী হীরকের কাহিনী [সচিত্র সন্ধানী পত্রিকায় মুদ্রিত] (১৯৭৮)
  • ভয়াবহ কবরখানা [ধ্রুপদী পত্রিকায় মুদ্রিত] (১৯৮৫)
  • প্রথম সম্পাদক [আহসান হাবীব স্মারক-গ্রন্থে মুদ্রিত] (১৯৮৭)
  • শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি [জীবনানন্দ পত্রিকায় মুদ্রিত] (১৯৯৫)

অন্যান্য সম্পাদনা

[৪]

  • মাহমুদুল হক শিশুদের কাগজ আলাপনী, শাহীন সেতারা প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। তার কিছু সাড়া জাগানো উপন্যাসের মধ্যে খেলাঘর-চলচ্চিত্ররূপ ২০০৬
  • মাহমুদুল হক রচনাবলি: প্রথম খণ্ড
  • মাহমুদুল হক রচনাবলি: দ্বিতীয় খণ্ড
  • মাহমুদুল হক রচনাবলি: তৃতীয় খণ্ড

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার"বাংলা একাডেমি। জুন ৭, ২০২১। 
  2. মোস্তফা এনাম, আবু হেনা (২০১৬)। কথাশিল্পী মাহমুদুল হক। বাংলা একাডেমি। 
  3. চন্দন আনোয়ার সম্পাদিত, গল্পকথা (গল্প ও গল্পভাষ্যের কাগজ), ৪র্থ বর্ষ : ৫ সংখ্যা [মাহমুদুল হক সংখ্যা], রাজশাহী (২০১৪); পৃ .৩০০
  4. হক, মাহমুদুল (২০২০)। মাহমুদুল হক রচনাবলি: প্রথম খণ্ড। বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ৪৭৪, ৪৭৫। আইএসবিএন 984-07-5953-1