রাতকানা (ইংরেজি: Nyctalopia) /ˌnɪktəlˈpiə/ (গ্রিক ভাষায় νύκτ-, nykt- "night"; ἀλαός, alaos "blind, not seeing", and ὄψ, ops "eye"),[১] ইংরেজিতে এর আরেক নাম night-blindness। এই রোগে অপেক্ষাকৃত স্বল্প আলোয় দেখা কঠিন বা প্রায় অসম্ভব। এটা আসলে কতিপয় চোখের রোগের উপসর্গ। কারো ক্ষেত্রে জন্ম থেকে এই সমস্যা থাকে, এছাড়া চোখে আঘাত বা অপুষ্টির কারণে (যেমন ভিটামিন এ এর অভাব) এই সমস্যা হতে পারে। রাতকানা রোগে স্বল্প আলো বা অন্ধকারে চোখের অভিযোজন ক্ষমতা হ্রাস পায় বা নষ্ট হয়ে যায়।

রাতকানা
বিশেষত্বচক্ষুচিকিৎসাবিজ্ঞান উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

রেটিনায় রড কোষকোন কোষ নামে দুই ধরনের কোষ আছে যা যথাক্রমে স্বল্প ও উজ্জ্বল আলোতে কাজ করে। রড কোষে রোডপসিন নামক এক ধরনের রিসেপ্টর প্রোটিন থাকে। রোডপসিনের ওপর আলো পড়লে কয়েক ধাপে এর কিছু গাঠনিক পরিবর্তন হওয়ার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক সঙ্কেত সৃষ্টি হয় যা অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। আলোর অনুপস্থিতিতে রোডপসিন পুনরুৎপত্তি লাভ করে। রোডপসিন সংশ্লেষণে ভিটামিন এ প্রয়োজন, এজন্য এই ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়।

কারণ সম্পাদনা

রাতকানার প্রধান কারণ রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা নামক একটি রোগ, যার ফলে রেটিনার রড কোষ ধীরে ধীরে আলোর প্রতি সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এটা একধরনের জেনেটিক রোগ যেখানে রাত্রিকালীন দৃষ্টির পাশাপাশি দিনের বেলা দেখার ক্ষমতাও নষ্ট হতে থাকে। রাত্রিকালীন অন্ধত্বের ফলে জন্ম থেকে রড কোষ জন্মের পর থেকেই কাজ করে না, বা অল্প পরিমাণ কাজ করে, কিন্তু এই অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে।

রাতকানা রোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো রেটিনল বা ভিটামিন এ-এর অভাবভিটামিন এ মাছের তেল, কলিজা ও বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবারে পাওয়া যায়। ডায়রিয়া, হাম, নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগের কারণে শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। এই ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়।[২] বাচ্চা জন্মকালীন ওজন কম হলে, বাড়ন্ত বয়সে শরীরে অতিরিক্ত খাদের চাহিদা পূরণ না হলে এবং অপুষ্টিতে ভোগার ফলে এই রোগ হয়ে থাকে।[৩]

বিশেষ ঔষধ, যেমন ফেনোথায়াজিন গ্রহণের ফলেও রাতকানা রোগ হতে পারে।[৪] চোখের বিভিন্ন চিকিৎসা, যেমন ল্যাসিক, ফটোরেফ্রেক্টিভ কেরাটেক্টমি, র‍্যাডিয়াল কেরাটোটমির কারণেও রাত্রিকালীন দৃষ্টি হ্রাস পেতে পারে।[৫]

প্রতিরোধ সম্পাদনা

এই রোগ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন: মাছের যকৃতের তেল, কলিজা, সবুজ শাকসবজি, রঙিন ফল(পাকা আম, কলা ইত্যাদি) ও সবজি (মিষ্টি কুমড়া, গাজর ইত্যাদি) এবং মলা-ঢেলা মাছ খেতে হবে। [৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Nyctalopia Origin"ডিকশনারি.কম। সংগ্রহের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  2. আলম, ডা. নূরুল (৩ আগস্ট ২০১৭), "রাতকানা রোগ", দৈনিক আমাদের সময়, ১৩ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৭ 
  3. "রাতকানা কি? রাতকানা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে রাখুন"। জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Goldman, Lee (২০১২)। Goldman's Cecil Medicine (24th সংস্করণ)। Philadelphia: Elsevier Saunders। পৃষ্ঠা 2429আইএসবিএন 1-4377-2788-3 
  5. Quesnel, NM; Lovasik, JV; Ferremi, C; Boileau, M; Ieraci, C (জুন ২০০৪)। "Laser in situ keratomileusis for myopia and the contrast sensitivity function."। Journal of cataract and refractive surgery30 (6): 1209–18। ডিওআই:10.1016/j.jcrs.2003.11.040পিএমআইডি 15177594 
  6. চক্রবর্তী, ডা. সৌমিত্র (২০১৯)। মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান। বাংলাদেশ: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পঠ্যপুস্তক বোর্ড। পৃষ্ঠা ১০১। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা