কৃষ্ণদাস পাল

ভারতীয় সাংবাদিক

কৃষ্ণদাস পাল রায়বাহাদুর সিআইই (১৮৩৮  — ২৪ জুলাই  ১৮৮৪) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি সাংবাদিক, বাগ্মী ও রাজনীতিজ্ঞ।[১] তিনি হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার দীর্ঘ সময়ের সম্পাদক ছিলেন। তিনি জাতিতে একজন তিলি (বাংলায় একটি হিন্দু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী জাতি) ছিলেন।[২]

কৃষ্ণদাস পাল
কলকাতার কলেজ স্ট্রিট ও মহাত্মা গান্ধী রোড সংযোগস্থলে কৃষ্ণদাস পালের পূর্ণাবয়ব মূর্তি
জন্ম১৮৩৮
মৃত্যু২৪ জুলাই ১৮৮৪ (বয়স ৪৬)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
পেশাসাংবাদিকতা
পিতা-মাতাঈশ্বরচন্দ্র পাল

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

কৃষ্ণদাস পাল বৃটিশ ভারতের কলকাতার কাঁসারিপাড়ায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র পাল। কৃষ্ণদাস কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে পাঁচ বছর ও তৎকালীন  হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে  তিন বৎসর (১৮৫৪ - ৫৭) পড়াশোনা করেন এবং সেসময়ে তার সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ জন্মে। ডি.এল. রিচার্ডসনের ছাত্র হিসাবে ইংরাজী সাহিত্যে তিনি বিশেষ দক্ষতা লাভ করেন। কলেজে ছাত্রাবস্থায় "ক্যালকাটা লিটারারি ফ্রি ডিবেটিং ক্লাব" প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে তার রচিত 'দি ইয়ং বেঙ্গল ভিন্ডিকেটেড' প্রবন্ধ সে যুগে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। হরিশচন্দ্র মুখার্জি সম্পাদিত হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার আদর্শে 'দি ক্যালকাটা মান্থলি' ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন।সহযোগী ছিলেন শম্ভুচন্দ্র মুখার্জি। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুষ্টিমেয় কিছু উচ্চ সংস্কৃতিবান ব্যক্তিত্ব ও মনীষীদের ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক হন। ঠিক সেই সময়ই হিন্দু প্যাট্রিয়টের হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণের কয়েক মাস পর তিনি ওই পত্রিকার সম্পাদক হন। একাদিক্রমে ২৩ বৎসর সম্পাদনায় তৎকালীন রাজনীতিতে তার প্রভাব বিস্তার লাভ করে। 'ইমিগ্রেশন বিল ', 'ইলবার্ট বিল', 'ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট' ইত্যাদি আইন প্রনয়ণের সময় হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় চা-শ্রমিকদের পক্ষে,  সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে ও দেশীয় ডেপুটি ম্যাজিসেট্রটদের সপক্ষে বিস্তর প্রবন্ধ রচনা করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। চা-শ্রমিকদের নির্যাতন-ব্যবস্থা র প্রতিবাদে কৃষ্ণদাস 'ইমিগ্রেশন বিল'কে 'দ্য স্লেভ ল' অব ইন্ডিয়া' বলে অভিহিত করেন। ক্রমে তিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও রাজনীতি হিসাবে  পরিচিত হয়ে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক থেকে স্থায়ী সম্পাদক হন। [৩]

পরবর্তী কর্মজীবন সম্পাদনা

 
কলেজ স্ট্রিট ও মহাত্মা গান্ধী রোড ক্রসিং-এ তাঁর স্ট্যাচু, মে ২০২২।

১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'জাস্টিস অফ দ্য পিস' নিযুক্ত হন এবং কলকাতা পুরসভার কমিশনার হন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় আইন সভার সদস্য হন এবং এখানেই তার ব্যবহারিক জ্ঞান ও সংযম পরবর্তী লেফটেনান্ট গভর্নর দ্বারা উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভাইসরয়ের লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত হন। 'বেঙ্গল টেন্যান্সি বিল' নিয়ে বিতর্কের সময় কৃষ্ণদাস  জমিদার-শ্রেণীর প্রতিভূরূপে ভারতবর্ষীয় ব্যবস্থাপক সভা'র সদস্য মনোনীত হন।[৩] ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে  তাঁকে রায়বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করা হয় এবং তিনি "রায় কৃষ্ণদাস পাল বাহাদুর" হিসাবে পরিচিত হন। [৩] ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি কমান্ডার অব ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (সি আই ই) হন। [৪]

তিনি হিন্দু মেলার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

কৃষ্ণদাস পাল ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে জুলাই ডায়াবেটিসের কারণে পরলোক গমন করেন। তার প্রয়াণে লর্ড রিপন এক শোক বার্তায় বলেন - 

"আমরা এমন এক সহকর্মীকে হারালাম, যাঁর কাছ থেকে আমরা সকলে তার সহযোগিতা লাভ করেছি,আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্বীকার করি।.... কৃষ্ণদাস পাল তার নিজের প্রচেষ্টায়, বুদ্ধিমত্তায় আলঙ্কারিক সম্মাননা অর্জন করেছিলেন। তার বৌদ্ধিক জ্ঞান ছিল উচ্চমানের, তার বক্তৃতা যারা শুনেছে সকলেই সপ্রশংস স্বীকার করেছেন এবং কাউন্সিলে তার ভাষণ প্রকৃতই ইংরেজি ভাষায় উপর পূর্ণদক্ষতার পরিচায়ক।"

১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড এলগিন কলকাতায় তার পূর্ণাবয়ব মর্মর মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন। [৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1.  সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬ পৃষ্ঠা ১৫১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. সেন, জলধর (১৯৯২)। Banga-gourab Vol. 1, 2। পৃষ্ঠা ২৫। 
  3. Encyclopædia Britannica Eleventh Edition, a publication now in the public domain.
  4. The Modern History of the Indian Chiefs, Rajas, Zamindars, &c। J.N. Ghose। ১৮৮১। পৃষ্ঠা 42। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৬