বাতেন বাহিনী

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত একটি সশস্ত্র গেরিলা বাহিনী।

বাতেন বাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতার পক্ষে টাঙ্গাইল জেলায় গঠিত একটি সশস্ত্র গেরিলা বাহিনী।[১] এ বাহিনীর প্রধান ছিলেন খন্দকার আবদুল বাতেন[২][৩] এ বাহিনী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকার কিছু এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেয়। ২১টি কোম্পানির অধীনে ৬৩টি প্লাটুন ও ১০০টি সেকশনে বাহিনীটি পরিচালিত হয়। বাহিনীর প্রধান হিসেবে আবদুল বাতেন বেশ কিছু গেরিলা আক্রমনের নেতৃত্ব দেন।

বাতেন বাহিনী
নেতাখন্দকার আবদুল বাতেন, মীর শামসুল আলম শাহজাদা ও এ কে এম আজাদ শাহজাহান
অপারেশনের তারিখ১৯৭১
সক্রিয়তার অঞ্চলটাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকার কিছু অংশ
এর অংশমুক্তিবাহিনী
মিত্রভারত
বিপক্ষপাকিস্তান সেনাবাহিনী

গঠন ও ইতিহাস সম্পাদনা

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আবদুল বাতেন টাঙ্গাইলের সরকারী সাদাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন।[৪] ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ সখিপুর উপজেলার আছিমতলায় পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে সাদাত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র জুমারত আলী নিহত হওয়ার পর আবদুল বাতেন তার নিজ এলাকা নাগরপুরে ফিরে আসেন ও তার পরিচিত কয়েকজনকে সাথে নিয়ে বাতেন বাহিনী গঠন করেন।[৫] প্রথমদিকে দুটি বন্দুক ও ১৬৫ রাউন্ড গুলি সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে আরও ৮-১০টি বন্দুক সংগ্রহ করেন। অন্যদিকে আবদুল বাতেনের নিজ গ্রাম নাগরপুরের কোনড়াতে মীর শামসুল আলম শাহজাদার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয় এবং তারাও বাতেন বাহিনীর সাথে যুক্ত হন।[৫]

বাহিনীর নিয়োগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটীতে এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল টাঙ্গাইল জেলা ও ভারত। শুরুর দিকে নিরাপত্তা ও বেসামরিক প্রধান হিসেবে মীর শামসুল আলম শাহজাদা, তথ্য ও গোয়েন্দা হিসেবে উপেন্দ্র নাথ সরকার, উপপ্রধান (নিয়োগ এবং জয় বাংলা কোম্পানি কমান্ডার) হিসেবে দেলোয়ার হোসেন হারিজ, উপপ্রধান (কোয়ার্টার মাস্টার এবং বঙ্গবন্ধু কম্পানি কমান্ডার) এম এ রশিদ এবং নিয়োগ ও ব্যবস্থাপক হিসেবে খন্দকার আবদুস ছালাম দায়িত্ব পালন করেন।[৫] এছাড়া বাহিনীটিতে ৯ জন সহকারী নিরাপত্তা ও বেসামরিক কর্মকর্তা, ২ জন সহকারী নিয়োগ কর্মকর্তা, ১১ জনের চিকিৎসক দল এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ৪ জন দায়িত্ব পালন করেন।[৫]

বাতেন বাহিনী ১৯৭১ সালের ৪ মে মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর থানা আক্রমনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে।[৬] পরবর্তীতে এ বাহিনী একে একে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানা, সাতুরিয়া থানা, ঘিউর থানা, টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানা ও সিরাজগঞ্জের চৌহালী থানা আক্রমণ করে এবং দখল করে। ১৯৭১ সালের ১৮ জুলাই বাতেন অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে ভারত গমন করেন।[৫] এ সময় বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এ কে এম আজাদ শাহজাহান এবং নিরাপত্তা প্রধান ছিলেন মীর শামসুল আলম শাহজাদা। জুলাই মারে পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের নেতৃত্বে যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি আবদুল বাতেন বাংলাদেশে আসেন। তিনি ফিরে আসার পর বাতেন বাহিনী ২৫ জানুয়ারি নাগরপুর ডাকবাংলোতে এবং ৭ ও ৯ মার্চ দেলদুয়ারের লাউহাটী স্কুল মাঠে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দেয়। ৪ ফেব্রুয়ারি আবদুল বাতেনকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।[৫]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা"বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২৬ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  2. "সাবেক সাংসদ আব্দুল বাতেনের ইন্তেকাল"প্রথম আলো। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  3. "বাতেন বাহিনীর প্রধান সাবেক এমপি আব্দুল বাতেন আর নেই | বাংলাদেশ প্রতিদিন"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  4. "টাঙ্গাইলের বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাতেন আর নেই"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  5. "টাঙ্গাইলের বাতেন বাহিনী"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  6. "মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা"টাঙ্গাইল তথ্য বাতায়ন (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯