বহু-মহাবিশ্ব
বহু-মহাবিশ্ব (ইংরেজি: Multiverse) (বা অধি-মহাবিশ্ব) হল মহাবিশ্বগুলির প্রকল্পিত সম্ভাব্য সেট, যার মধ্যে, আমরা যে মহাবিশ্বে বসবাস করি সেটিও অন্তর্ভুক্ত। একত্রে এই মহাবিশ্বগুলি বিদ্যমান : এই স্থান, সময়, পদার্থ, শক্তি, এবং ভৌত নীতিগুলি এবং ধ্রুবকগুলি যেগুলি তাদের বর্ণনা করে, সবকিছু গঠন করে।
এই মাল্টিভার্সের মধ্যে বিভিন্ন মহাবিশ্বকে "সমান্তরাল মহাবিশ্ব", "অন্যান্য মহাবিশ্ব", অথবা "বিকল্প মহাবিশ্ব" বলা হয়।
ধারণার উৎস
সম্পাদনা১৯৫৩ সালে ডাবলিনে এরভিন শ্রোডিঙার একটি ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি কৌতুকপূর্ণভাবে তাঁর শ্রোতাদের সতর্ক করেছিলেন এই বলে যে তিনি যা বলতে যাচ্ছেন তা হয়ত 'উন্মাদের কথা বলে মনে' হবে। তিনি বলেছিলেন যে, যখন তার নোবেল সমীকরণগুলি বিভিন্ন ইতিহাস বর্ণনা করছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এগুলি "বিকল্প নয়, কিন্তু সব সত্যিই একযোগে ঘটেছে"। এটিই মাল্টিভার্সের অলীক উপন্যাসের বাইরে সবচেয়ে পুরানো তথ্যসূত্র।[১]
আমেরিকান দার্শনিক এবং মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস ১৮৯৫ সালে প্রথম "মাল্টিভার্স" উক্তিটি ব্যবহার করেন; যদিও তিনি একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করেছিলেন।[২]
অনন্ত মহাবিশ্বের (ইংরেজি: Multiverse) তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব একটি নয়, অসংখ্য। এই ধারণাটি বিগ ব্যাং তত্ত্বের পরবর্তী তাত্ত্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জগতে স্থান করে নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আমাদের মহাবিশ্ব যদি কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের মধ্য দিয়ে স্থান-কালের শূন্যতার ভিতর দিয়ে আবির্ভূত হয়ে থাকে, তবে এই পুরো প্রক্রিয়াটি কিন্তু একাধিকবার ঘটতে পারে, এবং হয়ত বাস্তবে ঘটেছেও। এই একাধিক মহাবিশ্বের অস্তিত্বের ব্যাপারটি প্রাথমিকভাবে এডোয়ার্ড ট্রিয়ন আর পরবর্তীকালে মূলতঃ আঁদ্রে লিন্ডে এবং আলেকজাণ্ডার ভিলেঙ্কিন-এর গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে। ধারণা করা হয় যে, ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সম্প্রসারিত মহাজাগতিক বুদ্বুদ থেকে আমাদের মহাবিশ্বের মতই অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরী হয়েছে, যেগুলো একটা অপরটা থেকে সংস্পর্শবিহীন অবস্থায় দূরে সরে গেছে। এ ধরনের অসংখ্য মহাবিশ্বের একটিতেই হয়ত আমরা অবস্থান করছি অন্য গুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে একেবারেই জ্ঞাত না হয়ে। স্ট্রিং তত্ত্বিকদের গণনা থেকে জানা গিয়েছে যে, ১০৫০০টির মতো ভ্যাকুয়াম স্তরের তথা মহাবিশ্বের অস্তিত্ব থাকতে পারে [৩] । দীর্ঘদিন ধরে এই তত্ত্বকে যাচাইযোগ্যতা এবং পরীক্ষণযোগ্যতার অভাবে অভিযুক্ত করা হলেও সম্প্রতি অনন্ত মহাবিশ্বের কিছু পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে।
ব্যাখ্যা
সম্পাদনাপ্রমাণের জন্য অনুসন্ধান
সম্পাদনা২০১০ সালের কাছাকাছি সময়ে, স্টিফেন এম. ফিনির মত বিজ্ঞানীরা উইলকিনসন মাইক্রোওয়েভ অ্যানাইসোট্রপি প্রোবের (ডব্লিউএমএপি) তথ্য বিশ্লেষণ করেন। তারা দাবি করেন যে আমাদের মহাবিশ্বের সাথে সুদূর অতীতে অন্যান্য (সমান্তরাল) মহাবিশ্বের সাথে সংঘর্ষ ঘটেছিল এরকম প্রমাণ তারা পেয়েছেন।[৪][৫][৬][৭] তবে, ডব্লিউএমএপি এবং প্ল্যাংক কৃত্রিম উপগ্রহ, যার রেজল্যুশন ডব্লিউএমএপি-এর থেকে ৩-গুণ বেশি, থেকে পাওয়া তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে এরকম কোনও বুদ্বুদ মহাবিশ্ব সংঘর্ষ সম্বন্ধে কোন পরিসংখ্যানগত উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না।[৮][৯] উপরন্তু, আমাদের উপর অন্যান্য মহাবিশ্বের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কোন প্রমাণ নেই।[১০][১১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ David Deutsch, The Beginning of Infinity, page ৩১০.
- ↑ James, William, The Will to Believe, 1895; and earlier in 1895, as cited in OED's new 2003 entry for "multiverse": James, William (অক্টোবর ১৮৯৫), "Is Life Worth Living?", Internat. Jrnl. Ethics, 6: 10, ডিওআই:10.1086/205378,
Visible nature is all plasticity and indifference, a multiverse, as one might call it, and not a universe.
- ↑ Stephen Hawking, The Grand Design, Bantam; 2010
- ↑ Lisa Zyga (ডিসেম্বর ১৭, ২০১০)। "Scientists find first evidence that many universes exist"। PhysOrg.com। phys.org। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৩।
- ↑ "Astronomers Find First Evidence Of Other Universe"। technologyreview.com। ডিসেম্বর ১৩, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৩।
- ↑ Max Tegmark; Alexander Vilenkin (জুলাই ১৯, ২০১১)। "The Case for Parallel Universes"। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৩।
- ↑ "Is Our Universe Inside a Bubble? First Observational Test of the 'Multiverse'"। Science Daily। sciencedaily.com। আগস্ট ৩, ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৩।
- ↑ Feeney, Stephen M.; ও অন্যান্য (২০১১)। "First observational tests of eternal inflation: Analysis methods and WMAP 7-year results"। Physical Review D। 84 (4): 43507। arXiv:1012.3667 । ডিওআই:10.1103/PhysRevD.84.043507। বিবকোড:2011PhRvD..84d3507F।
- ↑ Feeney; ও অন্যান্য (২০১১)। "First observational tests of eternal inflation"। Physical Review Letters। 107 (7): 071301। arXiv:1012.1995 । ডিওআই:10.1103/PhysRevLett.107.071301। পিএমআইডি 21902380। বিবকোড:2011PhRvL.107g1301F।. Bousso, Raphael; Harlow, Daniel; Senatore, Leonardo (২০১৩)। "Inflation after False Vacuum Decay: Observational Prospects after Planck"। Physical Review D। 91 (8): 083527। arXiv:1309.4060 । ডিওআই:10.1103/PhysRevD.91.083527। বিবকোড:2015PhRvD..91h3527B।
- ↑ Collaboration, Planck; Ade, P. A. R.; Aghanim, N.; Arnaud, M.; Ashdown, M.; Aumont, J.; Baccigalupi, C.; Balbi, A.; Banday, A. J.; Barreiro, R. B.; Battaner, E.; Benabed, K.; Benoit-Levy, A.; Bernard, J. -P.; Bersanelli, M.; Bielewicz, P.; Bikmaev, I.; Bobin, J.; Bock, J. J.; Bonaldi, A.; Bond, J. R.; Borrill, J.; Bouchet, F. R.; Burigana, C.; Butler, R. C.; Cabella, P.; Cardoso, J. -F.; Catalano, A.; Chamballu, A.; ও অন্যান্য (২০১৩-০৩-২০)। "Planck intermediate results. XIII. Constraints on peculiar velocities"। Astronomy & Astrophysics। 561: A97। arXiv:1303.5090 । ডিওআই:10.1051/0004-6361/201321299। বিবকোড:2014A&A...561A..97P।
- ↑ "Blow for 'dark flow' in Planck's new view of the cosmos"। New Scientist। ৩ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৪।