বসন্ত হল পাঞ্জাবের একটি বসন্তকালীন ঘুড়ি ওড়ানোর অনুষ্ঠান যা বসন্ত পঞ্চমী উৎসবের সময় উদযাপিত হয়।[১] এটি বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হয় বলে একে বসন্ত পঞ্চমীও বলা হয়। পাঞ্জাবি ক্যালেন্ডার অনুসারে এটি মাঘ মাসের সময় চন্দ্র মাসের পঞ্চম দিনে (জানুয়ারির শেষের দিকে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে) বসন্তের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়।

মধ্য পাঞ্জাব সম্পাদনা

 
মহারাজা রঞ্জিত সিং বসন্ত উতসবের সময় অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরের বাইরে।
 
মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের রানী, 'মোরন সরকার

অমৃতসর, লাহোর এবং কাসুর হল এই উতসবের প্রধান ঐতিহ্যবাহী এলাকা যেখানে ঘুড়ি উড়ানো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।[২] লাহোরে একটি জনপ্রিয় বসন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে শিয়ালকোট, গুজরানওয়ালা এবং গুরুদাসপুরের মতো এলাকাতেও এই উতসব পালিত হয়।

ইতিহাস অনুযায়ী মহারাজা রঞ্জিত সিং একটি বার্ষিক বসন্ত মেলার আয়োজন করেন। ১৯[৩] শতকে অনুষ্ঠিত মেলার একটি নিয়মিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে তিনি ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন করেন। এই উতসবের মধ্যে সুফি মাজারে মেলার অনুষ্ঠানো অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৪] মহারাজা রঞ্জিত সিং এবং তার রানী মোরান বসন্তে হলুদ পোশাক পরতেন এবং ঘুড়ি ওড়াতেন।[৫] বসন্তের সাথে ঘুড়ি ওড়ানোর এই যোগসূত্র শীঘ্রই লাহোরে কেন্দ্রীয় অঞ্চল এবং সমগ্র পাঞ্জাব অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়।[৬] প্রকৃতপক্ষে, মহারাজা রঞ্জিত সিং বসন্তে লাহোরে একটি দরবার বা আদালতের আয়োজন করেছিলেন যা দশ দিন স্থায়ী হয়েছিল সেই সময় সৈন্যরা হলুদ পোশাক পরে তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করতেন।[৭] লাহোরে বসন্তের অন্যান্য ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে মহিলাদের দোলনায় দোল খাওয়া এবং গান গাওয়া।

মালওয়া, পাঞ্জাব, ভারত সম্পাদনা

বসন্ত উৎসব পাঞ্জাবের মালওয়া অঞ্চলে বিশেষভাবে উদযাপিত হয়[৮] যেখানে লোকেরা ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সমাবেশের আয়োজন করে। ফিরোজপুরের মতো অঞ্চলে, শিশুরা সাধারণত কোন শুভ উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ায়। সাঙ্গারুর জেলার ধুরিতে অবস্থিত বাঁসারি ও গুদ্রির শিব মন্দিরে বসন্ত পঞ্চমীর দিন একটি বড় মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার বিশেষত্ব হল বিবিধ প্রকারের দোলনা এবং খাবার।[৯]

পাঞ্জাব, পাকিস্তান সম্পাদনা

 
বসন্ত ঘুড়ি
 
পাকিস্তানে উৎসব

উত্তর ভারতে, এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে, বসন্তকে একটি মৌসুমী উত্সব হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি ঘুড়ির উত্সব হিসাবে পালিত হয়।[১০] এই উৎসব বসন্ত ঋতুর সূচনাকে চিহ্নিত করে। পাঞ্জাব অঞ্চলে (পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ সহ) বসন্ত পঞ্চমীতে ঘুড়ি ওড়ানো এবং মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে।[১১] পোথোহার মালভূমি অঞ্চলে ঘুড়ি ওড়ানোর সাথে পাকিস্তানের রালওয়ালপিন্ডিতে বসন্ত উদযাপন করা হয়।[১২] ঘুড়ি ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঘুড়িপ্রেমীরা এখনো এই উৎসব পালন করে যাচ্ছেন। দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের তথ্য অনুযায়ী, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, ২০২০ সালে রাওয়ালপিন্ডির পুরানো শহর এলাকায় সব ধরণের ঘুড়ি, টাকু, সুতা অবাধে বিক্রী হ্তে দেখা গেছে।[১৩] এই উতসবে লোকেরা আতশবাজি জ্বালায় এবং উচ্চস্বরে সঙ্গীত বাজায়।[১৪]

নিষেধাজ্ঞা সম্পাদনা

২০০৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের লাহোরে বসন্ত ঘুড়ি উৎসবের তারিখটি কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত হত। সাধারণত ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের শুরুতে কোন রবিবারে এই উতসবের দিন নির্ধারন করা হত। ২০০৭ সালে প্রাথমিকভাবে মৃত্যু এবং গুরুতর আহতের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই উত্সবটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[১৫]

২০১৭ সাল থেকে পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে[১৬] যে ঘুড়ি উতসবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে, কিন্তু ২০১৯ সাল পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।[১৭] ২০০৪ সালে, নওয়া-ই-ওয়াক্ত নামক একটি পাকিস্তানি দৈনিক পত্রিকা ধর্মীয় কারনে পাকিস্তানে বসন্ত পঞ্চমী উদযাপনের বিরোধিতা করে।[১৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Chapter iii"। Punjabrevenue.nic.in। ১৯৩০। ২০১৬-০৬-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-১৭ 
  2. Kaul, Suvir (২০০১)। The Partitions of Memory: The Afterlife of the Division of India। Indiana University Press। পৃষ্ঠা 195। আইএসবিএন 0-253-21566-8 
  3. Mirepoix, Camille (১৯৬৭)। Now Pakistan। Grenich। পৃষ্ঠা 142। 
  4. Ansari, Shahab (26 March 2011) The News Festival of Lights kicks off
  5. Hasan, Masudul. Unique Women of the World: Being Unique Stories of the Sidelights of the Lives, Loves, and Mysteries of Famous Women of All Times, All the World Over p. 96
  6. Desai, Nikita (৯ জুন ২০১০)। A Different Freedom: Kite Flying in Western India; Culture and Tradition। Cambridge Scholars Publishing। পৃষ্ঠা 37। আইএসবিএন 978-1-4438-2310-4 
  7. The Sikh Courier International, Volumes 33-37
  8. Deep, Rajay (১৯ জানুয়ারি ২০১০)। "Kite fliers ready to soar on Basant Panchami"। Tribuneindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-১৭ 
  9. Basant Mela 2015
  10. The Sikh World: An Encyclopedia Survey of Sikh Religion and Culture: Ramesh Chander Dogra and Urmila Dogra; আইএসবিএন ৮১-৭৪৭৬-৪৪৩-৭
  11. Punjabiat: The Cultural Heritage and Ethos of the People of Punjab: Jasbir Singh Khurana
  12. Aamir Yasin and Mohammad Asghar (14.03.2015) Pindi says ‘Bo Kata’ to kite-flying ban
  13. The Express Tribune (08.02.2020)Kite fliers flout ban
  14. Muhammad Irfan Urdupoint (22.02.2020) Kite Flying, Aerial Firing Were Order Of Day During Basant, Police Remain Silent Spectator.
  15. "Kite makers fret over Basant decision"। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১। 
  16. DND.com (02.01.2017) Basant to be celebrated in Lahore after security clearance: Minister
  17. PT (07.02.2017) Punjab govt says ‘NO’ to Basant festival
  18. "EDITORIAL: Can't we have a nice time?"Daily Times। ২০০৪-০২-১৬। ২০১৪-১১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-২৮