বধশালা (চলচ্চিত্র)
বধশালা (নেপালি: वधशाला; অনু. কসাইখানা) ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মনোজ পণ্ডিত নির্মিত একটি নেপালি ঐতিহাসিক রোমাঞ্চ নাট্য চলচ্চিত্র।[২] চলচ্চিত্রটি স্ম্যাশিং অ্যাপল-এর ব্যানারে মোহান দোতেল কর্তৃক প্রযোজিত। এই চলচ্চিত্রের কাহিনি ও চিত্রনাট্য ১৯৯৬ হতে ২০০৬ পর্যন্ত মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নেপালের গৃহযুদ্ধকে ভিত্তি করে রচিত। বধশালায় নেপালের রাজকীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক মাওবাদী ও নিরপরাধ বন্দিদের নির্যাতন ও গুম করা নিয়ে উদ্বেগের প্রকাশ ঘটেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে চলচ্চিত্রটি নেপালে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ করা হয়, পরবর্তীতে "সমস্যাযুক্ত নির্যাতনের দৃশ্য" বাদ দেয়ার পর মুক্তি দেয়া হয়েছিল।[১] চলচ্চিত্রটি নেপালের গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিপরীতে মাওবাদীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে নিরব থাকায় সমালোচিত।
বধশালা | |
---|---|
পরিচালক | মনোজ পণ্ডিত |
প্রযোজক | মোহান দোতেল |
কাহিনিকার | মনোজ পণ্ডিত |
উৎস | নেপালের গৃহযুদ্ধ (১৯৯৬-২০০৬) |
শ্রেষ্ঠাংশে | দয়াহং রাই সৌগত মল্ল খগেন্দ্র লামিছানে অনুপ বড়াল অর্পণ থাপা |
প্রযোজনা কোম্পানি | স্ম্যাশিং অ্যাপল |
পরিবেশক | স্ম্যাশিং অ্যাপল হাইটেক এন্টারটেইনমেন্ট (ডিজিটাল মাধ্যমে) |
মুক্তি | ১৯ এপ্রিল, ২০১৩ (প্রেক্ষাগৃহে) ৩ জানুয়ারি, ২০১৫ (স্ট্রিমিং সেবায়) |
স্থিতিকাল | ১০০ মিনিট |
দেশ | নেপাল |
ভাষা | নেপালি |
নির্মাণব্যয় | ৪০ লাখ নেপালি রুপি (মার্কিন$৪৬,৫১২)[১] |
গল্পসূত্র
সম্পাদনাবধশালা নেপালি গৃহযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনী দ্বারা মাওবাদীদের উপর চালানো নির্যাতনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্রটিতে ভৈরবনাথ ব্যাটালিয়নের যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর নির্যাতন কক্ষগুলি হতে কিছু গ্রাফিক দৃশ্য চিত্রিত করা হয়েছে। চলচ্চিত্রে আটককৃত মাওবাদীদের একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিল যে তারা মাওবাদী। স্বীকার করানোর পরে তাদের একটি জঙ্গলে নিয়ে সেনাবাহিনী দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর একজন অফিসার তাদের নেতা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতেও বলে; যদি তারা অস্বীকার করে তবে তাদের এমন একটি জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে তারা দেখবে বন্দীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তারা বোঝায় যে তারা তথ্য প্রকাশ না করলে তাদের হত্যা করা হবে।
শ্রেষ্ঠাংশে
সম্পাদনা- দয়াহং রাই - কাপ্টেন রাই
- সৌগত মল্ল - মাওবাদী নেতা
- খগেন্দ্র লামিছানে - কৃষ্ণ
- অনুপ বড়াল - মেজর সাহেব
- অর্পণ থাপা - ক্যাপ্টেন থাপা
নির্মাণ
সম্পাদনাবধশালা চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য গৃহযুদ্ধ সম্পর্কিত জিতমন বাসনেটের আন্ধ্যারা ২৫৬ দিনহারু, কৃষ্ণ কে সি'র মানব বধশালা ও একজন অচেনা সৈন্যের স্মৃতিকথা'র ছায়া অবলম্বনে রচিত।[২] সম্পূর্ণ চলচ্চিত্রটি নির্মাণে ২০১৩ সালে ৪ মিলিয়ন নেপালি (৪৬,৫১২ মার্কিন ডলার) রুপী ব্যয় হয়েছিল।[১][৩]
মুক্তি
সম্পাদনানিষেধাজ্ঞা
সম্পাদনা"এমন একটি দেশে বাস করা বিব্ররতকর, যে দেশ(নেপাল) বিশ্বের শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘ শান্তি মিশনে নিজের সৈন্য পাঠায়, কিন্তু নিজঘরে বাক-স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারকে সম্মান করতে পারে না।"
-টাইমস লাইভকে বধশালা'র প্রযোজক মোহান দোতেল[৩]
প্রাথমিকভাবে নেপাল সেনাবাহিনী অনুমতি ছাড়া সামরিক পোশাক ব্যবহারের কারণেবধশালার প্রদর্শনের আপত্তি জানায়।[৪][৫] পরে, সেনাবাহিনী তাদের আপত্তিতে চলচ্চিত্রটি "শান্তি প্রক্রিয়া বিপথগামী" করতে পারে, মর্মে মন্তব্য করে।[৪] ১০ মার্চ,২০১৩-তে আল জাজিরা টেলিভিশন বধশালা'র নিষিদ্ধ হওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ করে।[৬] নির্মাতা মনোজ পণ্ডিত, চলচ্চিত্রটিকে ঐতিহাসিক তথ্যের ছায়াবলম্বনে নির্মিত কল্পকাহিনি হিসেবে বর্ণনা করেন।[৭] তিনি এই নিষেধাজ্ঞাকে ''বাক স্বাধীনতা'য় আঘাত'' হিসেবে দেখেন এবং নেপালের সুপ্রিম কোর্টে আপিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে চলচ্চিত্র বোদ্ধা, দর্শক, সমালোচকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলেন।[১] চলচ্চিত্রটির কাহিনি সম্পর্কে ধারণা প্রদান ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য একটি ডিভিডি তৎকালীন নেপালের প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাঈকে দেয়া হয়েছিল।[৮]
বাণিজ্যিক মুক্তি ও প্রদর্শনী
সম্পাদনানেপাল ফিল্ম সেন্সর বোর্ড বধশালা'র "সমস্যাযুক্ত নির্যাতনের দৃশ্যসমূহ" বাদ দেয়ার পর চলচ্চিত্রটিকে প্রদর্শনীর ছাড়পত্র দিয়েছিল।[৪] ১৯ এপ্রিল, ২০১৩-তে চলচ্চিত্রটি নেপালের প্রেক্ষাগৃহসমূহে মুক্তি পায়।[৯] ৩ জানুয়ারি, ২০১৫-তে হাইটেক এন্টারটেইনমেন্ট-এর পরিবেশনায় চলচ্চিত্রটি ইউটিউবে সবার জন্য উম্মুক্ত করা হয়।[১০] একই বছর চলচ্চিত্রটি ষোড়শ শিলিগুড়ি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল।[১১]
সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাচলচ্চিত্রটি মুক্তির পর, নেপাল গৃহযুদ্ধে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে চলচ্চিত্রে প্রকাশ ও মাওবাদীদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মৌনতার জন্য সমালোচিত হয়। নেপালি টাইমসের তৃষ্ণা রানা বধশালাকে গৃহযুদ্ধের শুধু একটি পক্ষকে দেখানোর জন্য "ত্রুটিযুক্ত ঐতিহাসিক নাটক" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।[৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ "Nepal blocks film on civil war torture by army"। জি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ ক খ "Badhshala"। khagendralamichhane.com.np। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৭।
- ↑ ক খ "Film on Nepal army torture delayed, director says govt censoring"। TimesLIVE (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ Rana, Trishna (২০১৩)। "Arms and the men"। Nepali Times। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ "Nepal Army urges to ban screening of "Badhshala""। Ekantipur। ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ "Nepal army bans film charting civil-war abuse" (ইংরেজি ভাষায়)। Al Jazeera। ১০ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ "The disappearance of truth" (পিডিএফ)। Nepali Times। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ "Film on Nepal army torture blocked, says director"। South China Morning Post (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ "Nepal: disappeared and tortured for 500 days"। TRIAL International (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ "Badhshala Nepali Movie | Saugat Malla | Dayahang Rai | Khagendra Lamichhane | Arpan Thapa - YouTube"। হাইটেক এন্টারটেইনমেন্ট। ২০১৫-০১-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৮ – ইউটিউব-এর মাধ্যমে।
- ↑ "প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২০১৫-১১-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৯।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে বধশালা (ইংরেজি)