বড়ির বিয়ে হল রাঢ়-বাংলার হিন্দু গৃহবধূদের মধ্যে প্রচলিত একটি পরম্পরাগত লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান। অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষে নতুন ডালের বড়ি দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাঙালি হিন্দুসমাজে এই রীতি পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় এর প্রচলন আছে। স্থানবিশেষে এই বিয়েকে বুড়োবুড়ির বিয়েও বলা হয়ে থাকে। [১]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

রাঢ়-বঙ্গে অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষে নতুন ওঠা বিউলির ডালচালকুমড়ো বেটে বড়ি দেওয়া শুরু হয়। এসময় বাড়ির সধবা মহিলাদের উপস্থিতিতে বড়ি-বরকনে-বড়ির বিয়ে দেওয়া হয়।

প্রথমে ডাল ও চালকুমড়ো বেটে দুটো বড়ো আকারের বড়ি তৈরি করা হয় — এরা হল বিয়ের 'বর' ও 'কনে'। এছাড়া, আরও পাঁচটি বা সাতটি বড়ি দেওয়া হয় — এদেরকে 'এয়োস্ত্রী' হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর একটা কুলোতে বর ও কনেকে মুখোমুখি বসিয়ে চারপাশে "এয়ো-বড়ি"দের গোল করে ঘিরে বসানো হয়; এবার বিয়ের সময়ে বর ও কনের মাথায় দূর্বাঘাস দিয়ে কনে ও এয়ো-বড়িদের মাথায় সিঁদুর পরানো হয়। এভাবে ধান-দূর্বা দিয়ে, শঙ্খধ্বনিউলুধ্বনি করে বড়ির বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান সমাধা হয়ে গেলে কুলোতে আরও বড়ি দিয়ে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়।

এই বিয়ে সুসম্পন্ন হলে তবেই সারাবছর ধরে বড়ি দেওয়া সম্ভব হবে, বর-বউয়ের সম্মিলিত উর্বরাশক্তির ফলেই পরবর্তী কালের শত শত বড়ি-সন্তানের জন্ম হবে — এই তাদের ঐতিহ্যগত বিশ্বাস। এই লৌকিক আচারের মধ্যে কৃষি ও উর্বরতা বৃদ্ধির সাদৃশ্যসূচক যাদুবিশ্বাস কাজ করে বলে মনে করা হয়। বিয়ের ছড়াও আগে প্রচলিত ছিল, তবে আধুনিক সময়ে এগুলি ক্রমে বিলুপ্তির পথে পৌঁছেছে।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. চক্রবর্তী, ড. বরুণকুমার সম্পাদিত (১৯৯৫)। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতিকোষ। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। পৃষ্ঠা ২৫৭–২৫৮। আইএসবিএন 81-86036-13-X 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা