বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক হল ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার আলিপুর সদর মহকুমার একটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক। এই ব্লকের সদর ডোঙ্গাড়িয়ায় অবস্থিত।[৩]
বজবজ ২ | |
---|---|
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক | |
স্থানাঙ্ক: ২২°২৮′৫৮″ উত্তর ৮৮°১০′৫৪″ পূর্ব / ২২.৪৮২৭৫৪৮° উত্তর ৮৮.১৮১৭৫৯৪° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা |
মহকুমা | আলিপুর সদর |
আয়তন | |
• মোট | ৭৮.০০ বর্গকিমি (৩০.১২ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৯ মিটার (৩০ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,৯২,১৩৪ |
• জনঘনত্ব | ২,৫০০/বর্গকিমি (৬,৪০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা[১][২] |
• অতিরিক্ত সরকারি | ইংরেজি[১] |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫.৩০) |
পিন কোড | ৭০০১৩৭ |
টেলিফোন কোড | +৯১ ৩৩ |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লিউবি-১৯ থেকে ডব্লিউবি-২২, ডব্লিউবি-৯৫ থেকে ডব্লিউবি-৯৯ |
লোকসভা কেন্দ্র | ডায়মন্ড হারবার |
বিধানসভা কেন্দ্র | সাতগাছিয়া, বজবজ |
ওয়েবসাইট | www |
ভূগোল
সম্পাদনাবজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ২২°২৮′৫৮″ উত্তর ৮৮°১০′৫৪″ পূর্ব / ২২.৪৮২৭৫৪৮° উত্তর ৮৮.১৮১৭৫৯৪° পূর্ব অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই ব্লকের গড় উচ্চতা ৯ মিটার (৩০ ফু)।
বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের উত্তর দিকে হুগলি নদীর অপর পাড়ে হাওড়া জেলার সাঁকরাইল সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, পূর্ব দিকে আলিপুর সদর মহকুমার বিষ্ণুপুর ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, দক্ষিণ দিকে ডায়মন্ড হারবার মহকুমার ফলতা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং পশ্চিম দিকে হুগলি নদীর অপর পাড়ে হাওড়া জেলার সাঁকরাইল ও উলুবেড়িয়া ১ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক দু’টি অবস্থিত।[৪][৫]
বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ৭৮.০০ বর্গ কিলোমিটার। ডিস্ট্রিক্ট স্ট্যাটিস্টিক্যাল হ্যান্ডবুক ফর সাউথ টোয়েন্টি-ফোর পরগনাস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ব্লকে একটি পঞ্চায়েত সমিতি, এগারোটি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৫০টি গ্রাম সংসদ, ৬৪টি মৌজা এবং ৬১টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রয়েছে। ব্লকটি নোদাখালি থানার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার অন্তর্গত।[৬]
বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল: বুরুল, চকমানিক, ডোঙ্গারিয়া রায়পুর, গাজা পোয়ালি, কামরা, কাশীপুর আলমপুর, নস্করপাড়া, উত্তর বোয়ালি, রানিয়া, সাতগাছিয়া ও দক্ষিণ বোয়ালি।[৭]
জনপরিসংখ্যান
সম্পাদনাজনসংখ্যা
সম্পাদনা২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ১৯২,১৩৪; এর মধ্যে গ্রামীণ জনসংখ্যা ১৩৫,২৫৪ এবং শহরাঞ্চলীয় জনসংখ্যা ৫৬,৮৮০। ব্লকে পুরুষের সংখ্যা ৯৮,৫৭০ (৫১ শতাংশ) ও মহিলার সংখ্যা ৯৩,৫৬৪ (৪৯ শতাংশ)। ২০,৯৮৫ জনের বয়স ছয় বছর বা তার কম। তফসিলি জাতি তালিকাভুক্তের সংখ্যা ৩৮,৪৯৫ (২০.০৪ শতাংশ) এবং তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্তের সংখ্যা ২৬২ (০.১৪ শতাংশ)।[৮] ২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৭৩,৪৬৭; এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৯০,০০১ এবং মহিলার সংখ্যা ছিল ৮৩,৪৬৬। ১৯৯১-২০০১ দশকে এই ব্লকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নথিবদ্ধ হার ছিল ১৫.২৩ শতাংশ।[৯][১০][১১]
বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত জনগণনা নগরগুলি হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী জনসংখ্যা দেওয়া হল): চক কাশীপুর (১২,০৩৫), চক আলমপুর (১১,১৪৪), বোয়ালি (১০,৯৬৮), দক্ষিণ রায়পুর (১৪,০৭৬) ও পোয়ালি (৮,৬৫৭)।[৮]
বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত বড়ো গ্রামগুলি (৪০০০+ জনসংখ্যা-বিশিষ্ট) হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী জনসংখ্যা দেওয়া হল): চণ্ডীপুর (৯,০৬৬), মুচিশা (৪,০২৩), ডোঙ্গাড়িয়া (৭,৪২৫), বড়তলা (৪,৫৯৫), তেলাড়ি (৪,৯৩৭) ও বুরুল (৭,০১৪)।[৮]
বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্তর্গত অন্য গ্রামগুলি হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী জনসংখ্যা দেওয়া হল): চকমানিক (২,৯০৩), গজা (৩,৯২৪), রানিয়া গোবিন্দপুর (১,৩৬৬), কামড়া (১,৫০০), লস্করপুর (২,৪৯৫) ও সাতগাছিয়া (২,১২৯)।[৮]
সাক্ষরতা
সম্পাদনা২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ১৩৫,৪২৮ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মোট জনসংখ্যার ৭৯.১৩ শতাংশ); এর মধ্যে মোট সাক্ষর পুরুষের সংখ্যা ৭৩,৫৭৩ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মোট পুরুষ জনসংখ্যার ৮৩.১৩ শতাংশ) এবং মোট সাক্ষর মহিলার সংখ্যা ৬১,৮৫৫ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মোট মহিলা জনসংখ্যার ৭৪.২৬ শতাংশ)। লিঙ্গবৈষম্য (মহিলা ও পুরুষ সাক্ষরতার হারের পার্থক্য) ছিল ৯.৪৯ শতাংশ।[৮] প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উক্ত জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় সাক্ষরতার হার ছিল ৭৭.৫১ শতাংশ[১২] এবং পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৭.০৮ শতাংশ।[১৩] ২০১১ সালে ভারতে সাক্ষরতার হার ছিল ৭৪.০৪ শতাংশ।[১৩]
২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অন্যূন ছয় বছর বয়সী জনসংখ্যার ৭২.৪৬ শতাংশ ছিল সাক্ষর; এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরতার হার ছিল ৮০.২৪ শতাংশ এবং মহিলা সাক্ষরতার হার ছিল ৬৪.০১ শতাংশ। উক্ত জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সামগ্রিক সাক্ষরতার হার ছিল ৬৯.৪৫ শতাংশ; জেলার পুরুষ সাক্ষরতার হার ছিল ৭৯.১৯ শতাংশ এবং মহিলা সাক্ষরতার হার ছিল ৫৯.০১ শতাংশ।[৯]
টেমপ্লেট:দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলিতে সাক্ষরতার হার
ভাষা ও ধর্ম
সম্পাদনা২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মোট জনংখ্যার ৯৭.৯ শতাংশের মাতৃভাষা বাংলা; ১.৫ শতাংশের মাতৃভাষা হিন্দি, ০.৩ শতাংশের মাতৃভাষা উর্দু এবং ওড়িয়া ও তেলুগু-ভাষী লোকের সংখ্যা ০.১ শতাংশ করে।[১৪]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে হিন্দু জনসংখ্যা ১২৯,৭৭৮ (মোট জনসংখ্যার ৬৭.৫৫ শতাংশ), মুসলমানের সংখ্যা ৬১,৯৩৪ (মোট জনসংখ্যার ৩২.২৩ শতাংশ) এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ৪২২ (মোট জনসংখ্যার ০.২২ শতাংশ)।[১৫]
গ্রামীণ দারিদ্র্য
সম্পাদনা২০০৯ সালে প্রকাশিত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মানবোন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৩৪.০৪ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। এই ব্লকের পর দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থানকারী পরিবারের হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জেলার উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত সোনারপুর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, যেখানে এই হার ২৩.৩৬ শতাংশ। জেলার অন্যান্য সকল সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে দারিদ্র্যের এই হার ২০ শতাংশের কম। ২০০৫ সালে আয়োজিত একটি গ্রামীণ পরিবার সমীক্ষায় জানা যায়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ৩৪.১১ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে, যা দারিদ্র্যের রাজ্য ও জাতীয় হারের অনেক উপরে। সুন্দরবনের জনবসতি এলাকায় দারিদ্র্যের হার সর্বাধিক। সেখানকার তেরোটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে দারিদ্র্যের নথিবদ্ধ হার ৩০ শতাংশের উপরে এবং অপর আটটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৪০ শতাংশেরও বেশি পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে।[১৬]
অর্থনীতি
সম্পাদনাজীবিকা
সম্পাদনা২০১১ সালে বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট শ্রমজীবীর মধ্যে কৃষকের সংখ্যা ছিল ৩,৮৯৬ (মোট শ্রমজীবীর ৫.৬০ শতাংশ), কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৬,০৬৮ (মোট শ্রমজীবীর ২৩.১১ শতাংশ), কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৯,১৩৬ (মোট শ্রমজীবীর ১৩.১৪ শতাংশ) এবং অন্যান্য শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪০,৪৪২ (মোট শ্রমজীবীর ৫৮.১৫ শতাংশ)।[১৭] মোট শ্রমজীবীর সংখ্যা ৬৯,৫৪২, যা মোট জনসংখ্যার ৩৬.১৯ শতাংশ এবং অ-শ্রমজীবীর সংখ্যা ১২২,৫৯২, যা মোট জনসংখ্যার ৬৩.৮১ শতাংশ।[১৮]
পরিকাঠামো
সম্পাদনাডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, সাউথ টোয়েন্টি-ফোর পরগনাস, ২০১১ গ্রন্থে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট ৬১টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রয়েছে। ১০০ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ৫৩টি গ্রামে (৮৬.৮৯ শতাংশ) গ্রামে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। সতেরোটি গ্রামে (২৭.৮৭ শতাংশ) ডাকঘর রয়েছে। ৫৮টি গ্রামে (৯৫.০৮ শতাংশ) টেলিফোন সংযোগ (ল্যান্ডলাইন, পাবলিক কল অফিস ও মোবাইল ফোন-সহ) রয়েছে। ২৮টি গ্রামে (৪৫.৯০ শতাংশ) পাকা রাস্তা রয়েছে এবং ২৮টি গ্রামে (৪৫.৯০ শতাংশ) পরিবহন সংযোগ (বাস ও ট্রেন পরিষেবা এবং নাব্য জলপথ) রয়েছে। চারটি গ্রামে (৬.৫৬ শতাংশ) ব্যাংক পরিষেবা সুলভ।[১৯]
কৃষি
সম্পাদনা১৯৪৬ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে শুরু হওয়া তেভাগা আন্দোলনে বৃহত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। এরপর কৃষকদের ভূম্যধিকার রক্ষার তাগিদে অপারেশন বর্গা কর্মসূচি গৃহীত হয়। বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৬১.৯৭ একর জমি অধিগৃহীত এবং তার স্থায়ী অধিকার অর্পিত হয়। অর্পিত জমির ৫৫.৮৩ একর বা ৯০.০৯ শতাংশ বণ্টিত হয়েছিল। মোট ৫৪৮ জন জমির পাট্টা অর্থাৎ নথিপত্র পেয়েছিলেন।[২০]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ২৯টি ফার্টিলাইজার ডিমো, ২৪টি সিড স্টোর ও ৪৪টি রেশন দোকান রয়েছে।[২১]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৩,৯৮৪ হেক্টর জমিতে প্রধান শীতকালীন ফসল আমন ধান উৎপাদিত হয় ৭,৩১২ টন এবং ২,১৬৭ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফসল বোরো ধান উৎপাদিত হয় ৬,৫১৪ টন।[২১]
মৎস্যচাষ
সম্পাদনা২০১৩-১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ১,১৬১ হেক্টর এলাকা জুড়ে কার্যকরীভাবে মৎসচাষ করা হয়। মোট ১১,৯৬৪ জন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত এবং এই চাষে বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৫৭,৮৩২ কুইন্টাল। [২১]
মৎস্যচাষ সমগ্র দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলারই জীবিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ২০০১ সালের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি লোক এই জেলায় মৎস্যচাষের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে ২.৫৭ লক্ষ মানুষের বাস সুন্দরবন বসতি অঞ্চলের তেরোটি ব্লকে।[২২]
ব্যাংক পরিষেবা
সম্পাদনা২০১৩-১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে মোট বারোটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং দু’টি গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয় অবস্থিত। [২১]
অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল
সম্পাদনাদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা অনুন্নত অঞ্চলের তালিকাভুক্ত। এই জেলাটি অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে। ভারত সরকার সৃষ্ট এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট ২৭২টি জেলা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের এগারোটি জেলা রয়েছে।[২৩][২৪]
পরিবহণ ব্যবস্থা
সম্পাদনাবজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে চারটি ফেরি পরিষেবা ও সাতটি প্রান্তিক বাস রুট রয়েছে। নিকটতম রেল স্টেশনটি ব্লক সদর থেকে চোদ্দো কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।[২১]
শিক্ষা
সম্পাদনা২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৭,৯৪৫), সাতটি মধ্য বিদ্যালয় (মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৭৬৭), দশটি উচ্চ বিদ্যালয় (মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩,১৯৬) এবং চোদ্দোটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় (মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৯,৩২৯) রয়েছে। এই ব্লকে একটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ১,৪২৯ জন পড়াশোনা করেন এবং বিশেষ ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত ২৫০টি প্রতিষ্ঠানে মোট ৮,৭৮৫ জন পড়াশোনা করেন।[২১]
২০১১ সালের জনগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট ৬১টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে দু’টি গ্রামে কোনও বিদ্যালয় নেই, ২৮টি গ্রামে দুই বা ততোধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, ২৩টি গ্রামে অন্তত একটি প্রাথমিক ও একটি মধ্য বিদ্যালয় রয়েছে এবং সতেরোটি গ্রামে অন্তত একটি মধ্য ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[২৫]
১৯৯১ সালে বুরুলে স্থাপিত শহিদ অনুরূপ চন্দ্র মহাবিদ্যালয় এই ব্লকের একমাত্র সাধারণ ডিগ্রি কলেজ।[২৬]
স্বাস্থ্য পরিষেবা
সম্পাদনাদক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার কিছু কিছু অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক-দূষিত।[২৭] জেলার বারোটি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ভূগর্ভস্থ হলে উচ্চ মাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে। যে সব এলাকার ভূগর্ভস্থ হলে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিকের (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মান হল প্রতি লিটারে দশ মাইক্রোগ্রাম) তুলনায় বেশি, সেখানকার টিউবওয়েল থেকে জলের নমুনা সংগৃহীত হয়েছে। আর্সেনিক-দূষিত সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকগুলি হল: বারুইপুর, ভাঙর ১, ভাঙড় ২, বিষ্ণুপুর ১, বিষ্ণুপুর ২, বাসন্তী, বজবজ ২, ক্যানিং ১, ক্যানিং ২, সোনারপুর, মগরাহাট ১ ও মগরাহাট ২। [২৮]
২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে একটি গ্রামীণ হাসপাতাল, দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও চারটি বেসরকারি নার্সিংহোম রয়েছে। মোট শয্যাসংখ্যা ৬১ ও চিকিৎসকের সংখ্যা ১১ (বেসরকারি বাদে)। ব্লকে ২৪টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। ব্লকের হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলির অন্তর্বিভাগে ২,৬৬৬ জন এবং বহির্বিভাগে ১০৮,১৯৯ জন রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।[২১]
২০১১ সালের জনগণনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে একটি গ্রামে সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, তিনটি গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উনিশটি গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র, দু’টি গ্রামে মাতৃ ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, একটি গ্রামে পশু হাসপাতাল ও ষোলোটি গ্রামে ওষুধের দোকান রয়েছে। ৬১টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে দশটি গ্রামে কোনও রকম চিকিৎসা পরিবেষা পাওয়া যায় না।[২৯]
বাখরাহাটে অবস্থিত ও ৩০টি শয্যাবিশিষ্ট লক্ষ্মীবালা দত্ত গ্রামীণ হাসপাতাল বজবজ ২ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের প্রধান সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এছাড়া বুরুলে এবং পোয়ালি ডাকঘর এলাকার অন্তর্গত গজা পোয়ালিতে দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। দু’টি কেন্দ্রই ছয় শয্যাবিশিষ্ট।[৩০][৩১][৩২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Fact and Figures"। Wb.gov.in। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৯।
- ↑ "52nd REPORT OF THE COMMISSIONER FOR LINGUISTIC MINORITIES IN INDIA" (পিডিএফ)। Nclm.nic.in। Ministry of Minority Affairs। পৃষ্ঠা 85। ২৫ মে ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৯।
- ↑ "BDO Offices under South 24 Parganas District"। West Bengal Public Library Network, Government of West Bengal। ৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "District Census Handbook: South 24 Parganas, Series 20, Part XII B" (পিডিএফ)। Map of South 24 Parganas with CD block HQs and Police Stations (on the fourth page)। Directorate of Census Operations, West Bengal, 2011। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "South Twenty-four Parganas"। CD block/ tehsil map। Maps of India। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "District Statistical Handbook 2014 South 24 Parganas"। Table No. 2.1, 2.2। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "Blocks and Gram Panchayats in South 24 Parganas"। South 24 Parganas District Administration। ২৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "CD block Wise Primary Census Abstract Data(PCA)"। 2011 census: West Bengal – District-wise CD blocks। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ ক খ "District Statistical Handbook – 2010-11 – South 24 Parganas"। South 24 Parganas at a glance, Tables 2.2, 2.4 (b), 4.5। Bureau of Applied Economics and Statistics, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৬।
- ↑ "Provisional Population Totals, West Bengal. Table 4"। Census of India 2001 – South 24 Parganas। Census Commission of India। ১৯ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২০।
- ↑ "Provisional Population Totals, West Bengal. Table 4"। Census of India 2001। Census Commission of India। সেপ্টেম্বর ২৭, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-২০।
- ↑ "District Census 2011"। Population Census 2011। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ক খ "Provisional population tables and annexures" (পিডিএফ)। Census 2011:Table 2(3) Literates and Literacy rates by sex। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Census of India 2011, West Bengal, District Census Handbook, South Twentyfour Parganas, Series – 20, Part XII-A, Village and Town Directory" (পিডিএফ)। Page 53, Table 11: Population by Mother-tongue in South 24 Parganas district 1961-2001। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "C1 Population by Religious Community"। West Bengal। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১৬।
- ↑ "District Human Development Report: South 24 Parganas"। Pages 42-43, Chapter 3.8: Poverty Scenario in South 24 Parganas। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "District Census Handbook South Twentyfour Parganas, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Table 33: Distribution of Workers by Sex in Four Categories of Economic Activity in Sub-district 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "District Census Handbook South Twentyfour Parganas, Census of India 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Table 30: Number and percentage of Main workers, Marginal workers and Non workers by Sex, in Sub-districts, 2011। Directorate of Census Operations, West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "District Census Handbook, South Twentfour Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Page 111, Table 36: Distribution of villages according to availability of different amenities, 2011। Directorate of Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "District Human Development Report: South 24 Parganas"। (1) Chapter 1.2, South 24 Parganas in Historical Perspective, pages 7-9 (2) Chapter 3.4, Land reforms, pages 32-33। Development & Planning Department, Government of West Bengal, 2009। ৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ "District Statistical Handbook 2014 South 24 Parganas"। Table No. 16.1, 18.1, 18.3, 20.1, 21.2, 4.4, 3.1, 3.2, 3.3 – arranged as per use। Department of Statistics and Programme Implementation, Government of West Bengal। ২১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "District Human Development Report: South 24 Parganas"। Pages 76 , Chapter 4.5.2: Non-agriculture, (i) Pisciculture। Department of Planning and Statistics, Government of West Bengal। ৫ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Backward Regions Grant Funds: Programme Guidelines" (পিডিএফ)। Ministry of Panchayati Raj, Government of India। ৩০ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Backward Regions Grant Fund"। Press Release, 14 June 2012। Press Information Bureau, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
- ↑ "District Census Handbook, South 24 Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Page 931-932, Appendix I A: Villages by number of Primary Schools and Appendix I B: Villages by Primary, Middle and Secondary Schools। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "Saheed Anurup Chandra Mahavidyalaya"। SACM। ৩০ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "Groundwater Arsenic contamination in West Bengal-India (19 years study)"। Groundwater arsenic contamination status of North 24-Parganas district, one of the nine arsenic affected districts of West Bengal-India। SOES। ২০০৭-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-২৮।
- ↑ "High arsenic levels in South"। The Statesman, 24 June 2007। ২০০৭-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-২৮।
- ↑ "District Census Handbook, South Twentyfour Parganas, 2011, Series 20, Part XII A" (পিডিএফ)। Pages 927-929, Appendix I: Summary showing total number of villages having Educational, Medical and other amenities – CD block level। Directorate of Census Operations, West Bengal.। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৯।
- ↑ "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Rural Hospitals। Government of West Bengal। ৮ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Block Primary Health Centres। Government of West Bengal। ১৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।
- ↑ "Health & Family Welfare Department" (পিডিএফ)। Health Statistics – Primary Health Centres। Government of West Bengal। ২১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১৯।