বংশীদাস বাবাজি

হিন্দু আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু

বংশীদাস বাবাজি (English: Vamsidas Babaji; ১৮৫৯ - ২৩ জুলাই ১৯৪৪) ছিলেন বাংলাদেশী হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক এবং বৈষ্ণব ধর্মের আধ্যাত্মিক গুরুবৈষ্ণব ধর্মের বৈষ্ণব চূড়ামণি নামে পরিচিত।[১][২][৩][৪]

বংশীদাস বাবাজী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
ভৈরব চন্দ্র

১৮৫৯
মৃত্যু২৩ জুলাই ১৯৪৪
দর্শনচৈতন্যচরিতামৃত, ভক্তি
সম্মানবাবাজি

জীবনী সম্পাদনা

তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববাংলার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার (অধুনা বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার) মজিতপুর গ্রামে ১৮৫৯ সালে শ্রীল বংশীদাস বাবাজি আবির্ভূত হন। পূর্বাশ্রমে তাঁর নাম ছিল ভৈরব চন্দ্ৰ। দরিদ্র জেলে শ্রীসনাতন মন্ত্রব্রহ্মের (বর্মণ) প্রথম সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁর মা শ্রীমতি সর্বসুন্দরী ছিলেন ধর্মপ্রাণা সাধ্বী রমণী, যিনি শত দারিদ্র্য ও কষ্টের মাঝেও পরিবারের সকল সদস্যের জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণা। তাঁদের অপর দুই পুত্রসন্তানের নাম কুলচন্দ্র ও রাজচন্দ্র এবং তাঁদের আরও চার কন্যা ছিল। পারিবারিক প্রথা অনুসারে ভৈরব চন্দ্র পরিবারের কুলগুরু নিকটস্থ জামালপুর গ্রামের নিগয়া আখড়ার নরোত্তম-পরিবারভুক্ত শ্রীনরোত্তম দাস বাবাজির নিকট দীক্ষিত হন। বাংলার অন্য সাধারণ জেলে পরিবারের সন্তানের মতো ভৈরবও বড় হয়েছিলেন চরম দারিদ্র্যের মাঝে। প্রতিদিন যত মাছ ধরতে পারতেন, তাই দিয়ে সংসার চলত। জীবন ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং সকল প্রকার সুবিধাবিহীন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের তো প্রশ্নই ওঠে না। যুবক বয়সে ভৈরবের মাছ ধরা ও বিক্রি করা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না। এই ছিল জীবন। এর চেয়ে বেশি কিইবা আশা করা যায়? ভৈরব পিতা ও অন্য জেলেদের সাথে সারাদিন নদীতে কাটাতেন। সূর্যাস্তের পরে বাড়ি ফিরে আখড়ায় চলে যেতেন। সেখানে তিনি গ্রাম্য উপভাষায় জড়-জীবনের অনিত্যতা, শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলাকথা ও হরিনামের মাহাত্ম্য শ্রবণ করতেন।[৫]

নবদ্বীপের লীলাসমূহ সম্পাদনা

অন্যান্য সাধুর মতো নবদ্বীপে অপরিচিত অবস্থায় প্রবেশ করলেও বংশীদাস বাবাজি ধীরে ধীরে পরিচিত হতে থাকেন। বেশধারী অনেক সাধু সিদ্ধিলাভের কথা মৃদুস্বরে বলত বা নকল করত। কিন্তু বাবাজি মহারাজ সত্যি সত্যিই তা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। নবদ্বীপ বাসকালে তিনি সেসব ছদ্মবেশী বৈষ্ণবদের সঙ্গ এড়িয়ে চলতেন । একবার এক লোক নবদ্বীপের একাংশকে মহাপ্রভুর জন্মস্থান বলে প্রচার করতে থাকে। সে বলে যে, মহাপ্রভু স্বপ্নে তাকে এ স্থানটির বিষয়ে বলেছেন। কিন্তু ইতোমধ্যে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মায়াপুরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রকৃত আবির্ভাবস্থল আবিষ্কার করেন এবং বৈষ্ণব সার্বভৌম শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজি মহারাজও তা আসল বলে প্রতিপাদন করেন । এজন্য ঐ লোকটি সম্পর্কে শ্রীল গৌরকিশোর দাস বাবাজি মহারাজ বলেছিলেন যাঁরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবস্থল আবিষ্কার করেছেন, তাঁরা সকলের অনুসরণীয়। অমুক-তমুক স্থান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাবস্থল, এমন নিছক একটি স্বপ্ন কোনো প্রমাণ হতে পারে না। যার কাছে ভগবানের ধাম আত্মপ্রকাশ করে, তিনি ধাম থেকে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা কখনো করেন না। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রকৃত অনুসারীরাই কেবল তাঁর আবির্ভাবস্থল আবিষ্কার করতে সক্ষম। সেই সূত্রে শ্রীল জগন্নাথ দাস বাবাজি মহারাজ এবং শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর এ পবিত্র স্থান আবিষ্কার করেছেন— একেই প্রকৃত রূপে গ্রহণ করা উচিত । পরদিন শ্রীল বংশীদাস বাবাজি একটি কুঠার নিয়ে সে নকল স্থানে গিয়ে এর সামনের পরিবেষ্টনী ধ্বংস করে দেন।[৬][৭][৮]

শেষ জীবন সম্পাদনা

২৩ শ্রাবণ (শুক্লা চতুর্থী), ১৩৫১ বঙ্গাব্দ (২৩ জুলাই, ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ) শ্রীল রঘুনন্দন ঠাকুরের তিরোভাব তিথিতে রাত ৮টায় পরমহংস শ্রীল বংশীদাস বাবাজি মহারাজ ইহলীলা সাঙ্গ করে গোলোক বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের নিত্যলীলায় প্রবেশ করেন। বাবাজির নিত্যসঙ্গী মাটির টবে স্থিত সেই তুলসী দেবীও সাথে সাথে ঢলে পড়লেন। মজিতপুরবাসী ভক্তবৃন্দ যথাবিথি বাবাজি মহারাজের অপ্রাকৃত দেহটি সমাধিস্থ করেন।[৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বণিক, সুমিত। "বৈষ্ণবচূড়ামণি 'শ্রীল বংশীদাস বাবাজি' ও লীলা মাহাত্ম্যের কিছুকথা"bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 
  2. iskconbd (২০২২-০৩-১০)। "মজিতপুর (শ্রীল বংশীদাস বাবাজী মহারাজ)"ইসকনবিডি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 
  3. "বৈষ্ণব চূড়ামনি শ্রী শ্রী বংশীদাস বাবাজীর আশ্রম, মজিতপুর"pakundia.kishoreganj.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 
  4. "Sri Vamsidasa Babaji (Glimpses into the Life of a Vaisnava Saint) | Exotic India Art"www.exoticindiaart.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 
  5. "श्री वंशीदास बाबाजी : Sri Vamsidasa Babaji | Exotic India Art"www.exoticindiaart.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 
  6. "কিশোরগঞ্জে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র 'বংশীদাস বাবাজির আশ্রম'"BangladeshDarpan। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 
  7. "শ্রীশ্রীগৌড়ীয়-বৈষ্ণব-জীবন"archive.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 
  8. "Вамшидас Бабаджи- Sri Vamshidas Babaji (Russian) | Exotic India Art"www.exoticindiaart.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 
  9. "মজিতপুরে শুরু হচ্ছে বংশীদাস বাবাজির ৭৫তম তিরোভাব উৎসব"kishoreganjnews.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-২৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা