ফারগো, নর্থ ডাকোটা
ফারগো জনসংখ্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর ও কাস কাউন্টির সদর দপ্তর। নর্থ ডাকোটার ১৭% বাসিন্দা ফারগো শহরে বসবাস করে। ২০১৯ সালে এর প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১,২৪,৬৬২। জনসংখ্যায় এটি যুক্তরাষ্ট্রের ২২৩-তম বৃহত্তম শহর। [১]
রেড নদীর বন্যা অববাহিকায় ১৮৭১ সালে ফারগো শহর প্রতিষ্ঠিত হয়।[২] শিক্ষা, সংস্কৃতি, খুচরা ব্যবসা, শিল্প ও স্বাস্থ্য খাত এখানে উল্লেখযোগ্য বিকাশ লাভ করেছে। এ শহরেই নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনাঐতিহাসিকভাবে ফারগো সু বা ডাকোটা ভূখণ্ডের অংশ ছিল। ১৮৭০ ও ১৮৮০ এর দশকে রেড নদী দিয়ে যাতায়াতকারী বাষ্পীয়পোতগুলো এখানে এসে বিরতি নিত। শুরুতে শহরটির নামকরণ করা হয়েছিল "সেন্ট্রালিয়া।" কিন্তু পরবর্তীতে উত্তরাঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগরীয় রেলপথের পরিচালক ও ওয়েলস ফারহো এক্সপ্রেস কোম্পানির স্বত্বাধিকারী উইলিয়াম ফারগোর নামানুসারে শহরটির নাম হয় ফারগো। প্রশান্ত মহাসাগরীয় রেলসড়ক প্রতিষ্ঠিত হবার পর শহরটি দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। তখন এর নাম হয় পশ্চিমের তোরণ।
১৮৮০ এর দশকে নমনীয় বিবাহবিচ্ছেদ আইনের কারণে ফারগো যুক্তরাষ্ট্রের বিবাহবিচ্ছেদ রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
১৮৯৩ সালের ৭ জুন ফারগো শহরে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। এতে শহরের কেন্দ্রস্থলের ৩১টি ব্লক পুড়ে যায়। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই শহরটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এক বছরের মধ্যেই নতুন করে ২৪৬টি ভবন গড়ে তোলা হয়। আগুনের উৎস নিয়ে চারদিকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। [৩]
১৮৯০ সালে এখানে নর্থ ডাকোটা কৃষি মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ১৯১৫ সালে মধ্য-উত্তর সমিতি বা নর্থ সেন্ট্রাল অ্যাসোসিয়েশন একে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। ১৯৬০ সালে একে নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়।
বিংশ শতকে এখানে গাড়িশিল্পের বিকাশ ঘটে। ১৯০৫ সালে ফারগো শহরে পেন্স অটোমোবাইল কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯১০ সালে শ্রমদিবসে রাষ্ট্রপতি থিওডোর রুজভেল্ট ফারগো ভ্রমণ করেন এবং কৃষি কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি ইতোপূর্বেও ফারগো শহরে বসবাস করতেন। ৩০,০০০ মানুষের সম্মুখে সে অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, "এখানে বসবাসের মুহূর্তগুলো আমাকে রাষ্ট্রপতির সম্মানে ভূষিত হতে সাহায্য করেছে। "[৪]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফারগো শহরে আকাশছোঁয়া উন্নতি সাধিত হয়। ১৯৫৭ সালে একটি ভয়াবহ এফ-ফাইভ মাত্রার ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পরও এর অগ্রযাত্রা থামেনি। ফুজিতা টর্নেডো পরিমাপক স্কেলের জনক, বিখ্যাত টেড ফুজিতা ফারগো শহরের ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের আলোকে "দেয়ালমেঘ" (Wall Cloud) ও "পুচ্ছমেঘ" (Tail Cloud) নামক দুটি শব্দ প্রবর্তন করেন। ফুজিতা ব্যবহৃত এ সকল পারিভাষিক শব্দ ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি অধ্যয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ২৯ ও ৯৪ নং আন্তঃরাজ্য যোগাযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে ফারগোর পরিবহন খাতে বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়। এদের সংযোগস্থলে ১৯৭২ সালে ওয়েস্ট একরস বিক্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে ফারগো খুচরা ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে শহরের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় অনেক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও দ্রুত উন্নতি লাভ করেছে।
নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শহরের সত্তা ও অর্থনীতি অনেকাংশেই এর সাথে জড়িত। অনেক শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রুজভেল্ট এলাকায় অবস্থান করে।
১৯৯০ সালের শেষভাগ থেকেই ফারগো-মুরহেড মেট্রোপলিটন এলাকার বেকারত্বের হার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। অপরাধের নিম্নহার ও বাসাবাড়ির যৌক্তিক মূল্যের কারণে "মানি" পত্রিকা ১৯৯০-২০০০ এর দশকে ফারগো-কে আমেরিকার অন্যতম বসবাসযোগ্য শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
জিপরিক্রুইটার ফারগোকে কাজ খোঁজার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১ নম্বর শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[৫] জিপপিয়া ডটকম ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ফারগোকে যুক্তরাষ্ট্রের ১ নম্বর শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। [৬] টুডে সন্তান পালনের জন্য ফারগোকে যুক্তরাষ্ট্রের ৩য় সেরা শহর অভিহিত করে। [৭]
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে ২০২০ সালের ৩০ মে এখানে বিক্ষোভ হয়। [৮] বিক্ষোভে সহিংসতা সৃষ্টি হলে ফারগোর মেয়র টিম মাহোনি জরুরি অবস্থা ও রাত ১০:৩০টা থেকে কারফিউ জারি করেন। রাত ১১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।[৯]
ভূগোল
সম্পাদনাফারগো ফারগো-মুরহেড মেট্রোপলিটন এলাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। ফারগো ছাড়াও মুরহেড, পশ্চিম ফারগো ও ডিলওর্থ শহর এর অংশ।
ফারগো রেড নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এটি রেড নদী উপত্যকা নামক একটি ভৌগোলিক অঞ্চলের অংশ। অ্যাগাসিজ হ্রদ থেকে ৯,৩০০ বছর পূর্বে রেড নদী উপত্যকার সৃষ্টি। অ্যাগাসিজ-হ্রদ বিধৌত পলির গুণে ফারগোর ভূমি অত্যন্ত উর্বর।
রেড নদীর উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ফারগো তীব্র বন্যাঝুঁকিতে রয়েছে। ২০০৯ সালের রেড নদী বন্যার পর বন্যা প্রশমনে ফারগো বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এর পূর্বে ১৯৯৭ সালে সৃষ্ট বন্যায় ফারগো শহরে বিপদসীমার ৩৯.৫ ফুট উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়, যাতে ফারগো শহরের অনেক ঘর-বাড়ি, কার্যালয় ধ্বংস হয়। ২০০৯ সালের মার্চে রেড নদী বিপদসীমার ৪০.৮৪ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে তেমন ক্ষতি হয়নি। সম্প্রতি রেড নদীর গতিপথ সরিয়ে দেওয়ার জন্য ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলমান আছে।
আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ফারগোর আয়তন ৪৮.৮২ বর্গমাইল। এর সবটুকুই স্থল।
জলবায়ু
সম্পাদনাফারগোর জলবায়ু আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। এর আবহাওয়া অত্যন্ত ঠাণ্ডা প্রকৃতির। জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা থাকে ৯.৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বছরে গড়ে ৪৩ দিন হিমাঙ্ক বা হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা বিরাজ করে। [১০] বছরে গড়ে ৫০.১ ইঞ্চি তুষারপাত হয়। জুলাইয়ে গড় তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বছরে গড়ে ৫৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
২০১১ সালে ফারগো "সবচেয়ে দুর্বিষহ আবহাওয়ার" শহর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর সপক্ষে প্রায় ৮,৫০,০০০ মানুষ ভোট দেন। [১১]
জনমিতি
সম্পাদনা২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ফারগোর জনসংখ্যা ১,০৫,৫৪৯। শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৩৪.৮ জন। শহরের বাসিন্দাদের ৯০.২% শ্বেতাঙ্গ, ২.৭% আফ্রিকান আমেরিকান, ৩% এশীয় ও ১.৪% আদিবাসী আমেরিকান। বাসিন্দাদের ২.২% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।
শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ৬৯,৪০১ ডলার। ফারগোর মাথাপিছু আয় ২৯,১১০ ডলার। ১৬% পরিবার ও ৭.৭% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছিল। [১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ Eligon, John (2 এপ্রিল, 2013)। "Sandbag Season Has Fargo Thinking of a Better Way" – NYTimes.com-এর মাধ্যমে। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Fire of 1893 - Fargo History"। library.ndsu.edu।
- ↑ Jackson, William (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "Almanac of North Dakota mysteries & oddities, 2009-2010"। Valley Star Books – Open WorldCat-এর মাধ্যমে।
- ↑ "The 10 Hottest Job Markets in 2020"। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯। ১২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "The 10 Best Cities to Start Your Career"। ৪ জুন ২০২০।
- ↑ "The 100 best places to raise kids"। TODAY.com।
- ↑ "Fargo Police Moving On Rioters in Downtown Fargo"। ৩১ মে ২০২০।
- ↑ "Governor declares state of emergency and activates ND National Guard"। https://www.valleynewslive.com।
|কর্ম=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ Team, National Weather Service Corporate Image Web। "National Weather Service Climate"। w2.weather.gov। ১৯ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ https://web.archive.org/web/20130611212148/https://weather.com/outlook/weather-news/news/articles/americas-toughest-weather-city-champion_2011-03-31
- ↑ "Fargo, ND Income and Careers - USA.com™"। www.usa.com।