প্রভাত চৌধুরী (কবি)
প্রভাত চৌধুরী ( জন্ম- ১৯৪৪ - মৃত্যু - ১৯ জানুয়ারি ২০২২) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের পোস্ট-মডার্ন তথা উত্তরাধুনিক কবিতার পুরোধা কবি। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি সাহিত্যের অনুকরণ ব্যতিরেকে নিজস্ব বক্তব্য নতুন আঙ্গিকে প্রকাশের অন্যতম পরিচিত কবি ছিলেন তিনি। [১]বাংলায় পোস্ট-মডার্ন কবিতাচর্চার পথিকৃৎ, কবি গড়ার কারিগরও ছিলেন।[২]
প্রভাত চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৪ |
মৃত্যু | ১৯ জানুয়ারি ২০২২ (বয়স ৭৭) |
পেশা | উত্তর আধুনিক কবি |
দাম্পত্য সঙ্গী | যূথিকা চৌধুরী |
কবি প্রভাত চৌধুরীর জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার হাটকেষ্টনগরে। তার শৈশব কেটেছে বাঁকুড়ার বাসুদেবপুরে। পরে কলকাতার কালীঘাটে থেকে পডাশোনা করেন। বিদ্যালয়ের পাঠ সাউথ সাবার্বান স্কুলে। স্কুলের প্রাক্তনীদের সাহিত্য প্রয়াসে তিনি ‘সাম্প্রতিক’ নামের ক্ষণজীবী ছোটপত্রিকা বের করতেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ব্যাচে করণিক পদে রাইটার্স বিল্ডিং-এ যোগ দেন। সহকর্মীদের মধ্যে ছিলেন কবি কালীকৃষ্ণ গুহ, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, তারাপদ রায়, মুকুল রায়, দেবপ্রসাদ মৈত্র, সমীরকান্তি বিশ্বাস প্রমুখ কবি সাহিত্যিকেরা। তবে তারাপদ রায়কে কেন্দ্র করে প্রথমদিকে সাহিত্যের আড্ডা বসত। ষাটের দশকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কৃত্তিবাস পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন প্রভাত চৌধুরী। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ শুধু প্রেমিকের জন্য প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে। তারপর প্রায় দুই দশক সাহিত্য জগত হতে দূরে থাকার পর ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ হতে লেখালেখি শুরু করেন। তার প্রথম প্রয়াস ছিল কবিতার চেনা ছন্দ, বৃত্ত, ভাষ্য ও আঙ্গিককে অতিক্রম করার। কিন্তু পরে যখন কবিতা নিয়ে ফিরে আসেন, দেখা যায় সেখানে তার নিজের বক্তব্য জায়গা করে নিয়েছে, আর সেই বক্তব্য বা বাচনভঙ্গিই কবিতার আঙ্গিক তৈরি করে নিয়েছে। বিদেশি সাহিত্যের কোন অনুকরণ বা ছায়া তাতে প্রতিফলিত হয়নি বরং আঞ্চলিকতা ও স্বাতন্ত্র্য প্রাধান্য পেয়েছে। আদ্যন্ত রবীন্দ্রনাথপ্রেমী প্রভাত চৌধুরী সকলকে গীতবিতান পড়ার উপদেশ দিতেন। [৩] পরে তিনি শুরু করেন কবিতা পত্রিকা- কবিতা পাক্ষিক-এর সম্পাদনা। পরে এটি সাপ্তাহিকও হয়েছিল। এই পত্রিকাটি সেসময় তরুণ কবিদের কবিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্ভরযোগ্য ভরসাস্থল। একটানা ঊনত্রিশ বৎসর দুই বাংলার এবং বাংলার বাইরের বহু তরুণ কবির রচিত কবিতা প্রকাশের ব্যবস্থা করে তিনি নিঃস্বার্থ কবি গড়ার কারিগর হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন। ভারতের নানা জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছেন তার অনুরাগিরা। পরে তিনি এই পত্রিকার সঙ্গে এক প্রকাশনা সংস্থারও সূত্রপাত করেন। সেখান থেকে তার নিজের এবং বহু তরুণ কবির রচনা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। শেষেরদিকে প্রভাত চৌধুরী অসুস্থ হলে তার সহযোগী কবি নাসের হোসেন পত্রিকার দেখাশোনা করতে থাকেন। [৪]কিন্তু কবি নাসের হোসেন ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর প্রভাত চৌধুরীর আগেই প্রয়াত হন।
প্রভাত চৌধুরী কবিতা ছাড়াও লিখেছেন কাব্যনাটক, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী ইত্যাদি। তার লেখা গ্রন্থের তালিকা বেশ দীর্ঘ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-
- সাদা খাতা (১৯৯৪)
- সাক্ষাৎকার (১৯৯৭)
- আবার সাক্ষাৎকার (১৯৯৮)
- নোট বই (২০১৪)
- উত্তর পর্বের কবিতা
- এই সব হল্লাগুল্লা
- সুসমাচার
- বানানের হ্যান্ডবুক ইত্যাদি।
মৃত্যু
সম্পাদনাকবি প্রভাত চৌধুরী দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালিসিস চলত তার। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জানুয়ারি করোনায় আক্রান্ত হন। এর মধ্যে কিছু শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। কিছু ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "প্রয়াত কবি প্রভাত চৌধুরী, শোকস্তব্ধ অনুরাগীরা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১১।
- ↑ "বাংলা সাহিত্য জগতে অপূরণীয় ক্ষতি, চলে গেলেন কবি প্রভাত চৌধুরী"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-১১।
- ↑ "আমার মূত্যুতে কাঁদবে না গীতবিতান পড়বে"। ২০২৩-০৬-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২৯।
- ↑ "কবি প্রভাত চৌধুরী প্রয়াত"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২৯।