প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার

প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার ১৯৬৩ সালে ভারতীয় কবি মলয় রায়চৌধুরী রচিত ৯০ লাইনের একটি জলবিভাজক কবিতা। কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে হাংরি বুলেটিনে

প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার 
মলয় রায়চৌধুরী কর্তৃক রচিত
লিখেছেন১৯৬৩
প্রথম প্রকাশিত১৯৬৪
দেশভারত
ভাষাবাংলা
প্রকাশকহাংরি বুলেটিন
প্রকাশনার তারিখ১৯৬৪
লাইন৯০

প্রকাশের পর সাহিত্যে অশ্লীলতার অভিযোগে কবিতাটি নিষিদ্ধ করা হয়। ভারতীয় আদালতে হাংরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় মামলা হয় এবং মলয় রায়চৌধুরীসহ অন্যান্য আন্দোলনকারী গ্রেফতার হন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে মামলাটি নাকচ হয়ে যায়। মামলা চলাকালে আমেরিকা ও ইউরোপে মলয় রায়চৌধুরীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে, এবং বিভিন্ন ভাষায় কবিতাটি অনুদিত হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত 'মর্ডান অ্যান্ড পোস্টমর্ডান পোয়েট্রি অফ দ্য মিলেনিয়াম" সংকলনে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র কবিতা হিসেবে এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

১৯৬৪ অশ্লীলতার বিচার সম্পাদনা

 
১৯৬৬ সালে কলকাতা উচ্চ আদালতের দণ্ডাদেশ।

কবিতাটি "হাংরি বুলেটিন ১৯৬৪" সংখ্যায় প্রকাশের পর হাংরি আন্দোলনকারীদের মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় আদালতে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারতীয় দণ্ড বিধির ১২০বি (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র), ২৯২ (সাহিত্যে অশ্লীলতা) এবং ২৯৪ (তরুণদের বিপথগামী করা) ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এর মধ্যে মলয় রায়চৌধুরীসহ অন্যান্য যাঁরা সংখ্যাটিতে লিখেছিলেন তাদের মধ্যে ছয়জনকে কলকাতা পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৫ সালের মে মাসে বাকি সবাইকে মুক্তি দেয়া হলেও মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৯২ ধারায় চার্জশীট প্রদান করা হয় এবং ৩৫ মাসব্যাপী এ মামলা চলে। মলয়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ভারতীয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল, জ্যোতির্ময় দত্ত এবং সত্রাজিত দত্ত আর বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শৈলেশ্বর ঘোষ, সুভাষ ঘোষ, পবিত্র বল্লভ, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং উৎপলকুমার বসু। নিম্ন আদালতে মলয় রায়চৌধুরীর ২০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ডের আদেশ হয়েছিলো। গ্রেফতারি পরোয়ানার দরুন কবি উৎপলকুমার বসু অধ্যাপনার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। প্রদীপ চৌধুরী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাসটিকেট হন। কবি সমীর রায়চৌধুরী সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। ঔপন্যাসিক সুবিমল বসাক এবং কবি দেবী রায়কে কলকাতা থেকে মফঃস্বলে বদলি করে দেয়া হয়।[১] ১৯৬৭ সালের ২৬ জুলাই কলকাতা উচ্চ আদালত মামলাটি খারিজ করে কবিতাটির সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। কবিতাটি ভারতের এবং ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে।

চলচ্চিত্র সম্পাদনা

২০১৪ সালে এই কবিতা অবলম্বনে মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায় এবং হ্যাশ তন্ময় একটি নির্বাক স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার চলচ্চিত্রটি ব্রিটেনের নো গ্লস লিডস্‌ ইণ্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সহ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, প্যারিস, বার্সেলোনা, জার্মানি, স্পেনসহ মোট ১২টি দেশের ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অফিসিয়াল সিলেকশন এবং স্পেনের ম্যাডাটাক ইণ্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভেলে সবচেয়ে আশাপ্রদ ভিডিও শিল্পীর (Most Promising Video Artist) পুরস্কার পেয়েছে। [২][৩][৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মলয় রায়চৌধুরী (সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০)। "প্রতিসন্দর্ভের স্মৃতি"। arts.bdnews24.com। ৩ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১৪, ২০১৪ 
  2. "কম বাজেটের প্রতিবাদ"ebela। ABP Group। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪। ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  3. "মলয় বিদ্যুৎ"Anandabazar Patrika। ABP Group। 29 october 2014। সংগ্রহের তারিখ 29 october 2014  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. "কয়েক জন কলেজ পড়ুয়া"ei samay। Times Group। 06 october 2014। ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 06 october 2014  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

আরো পড়ুন সম্পাদনা

  • ড. উত্তম দাশ (১৯৮৬)। হাংরি শ্রুতি ও শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন। বারুইপুর, কলকাতা ৭০০ ১৪৪: মহাদিগন্ত প্রকাশনী। 
  • ড. বিষ্ণুচন্দ্র দে (২০১৩)। হাংরি আন্দোলন ও দ্রোহপুরুষ কথা। সহযাত্রী, ৮ পটুয়াটোলা লেন, কলকাতা ৭০০ ০০৯: সহযাত্রী। 
  • ড. শীতল চৌধুরী (২০০৮)। "অনুভবের দর্পণে : প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার"। স্বপ্নআসাম ৭৮৮ ৮০৬: নবীনচন্দ্র কলেজ (মলয় রায়চৌধুরী সংখ্যা)। 
  • এ. এম. মুর্শিদ (এপ্রিল ২০০১)। "এক রাজদ্রোহী রাজকুমারের কাহিনী"। হাওয়া। বাঁশদ্রোণী, কলকাতা ৭০০ ০৭০ (৪৯)। 
  • প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর ২০১৪)। "কিছু কথা"। চন্দ্রগ্রহণকলকাতা ৭০০ ০৩০ (বিশেষ সংখ্যা)। 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা