পেনশনভোগী দিবস বা 'পেনশনার দিবস' হল দেশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের মর্যাদা ও শালীনতা নিশ্চিত করণে ভারতের সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক যুগান্তকারী রায় প্রদানের দিবস। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর আদালত সেই রায় প্রদান করে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ হতে প্রতি বৎসর ১৭ ডিসেম্বর পেনশনভোগী দিবস বা পেনশনার দিবস হিসাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।[১][২]

প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য সম্পাদনা

পেনশন পাওয়ার অধিকার নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের সংগ্রাম ১৫০ বৎসরেরও বেশি সময়ের। ব্রিটিশ শাসক ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের পেনশন ব্যবস্থার অনুসরণে ভারতে যে পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা করে, তা ছিল কেবল করুণাস্বরূপের জন্যই। ভারতীয় পেনশন আইন, ১৮৭১ অনুসারে দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু সেটি মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য হত না।

ডি এস নাকারা, ভারতের অর্থ মন্ত্রকের একজন আর্থিক উপদেষ্টা, ভারতীয় প্রতিরক্ষা পরিষেবা অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টসের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। অন্যান্য পেনশনভোগীদের ন্যায় তিনিও পেনশন পেতে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হন। তিনি মাননীয় সুপ্রিম কোর্টে সবিশেষ উল্লেখে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এক মামলা করেন। বহু বছরের প্রতীক্ষা শেষে বিষয়টি মাননীয় প্রধান বিচারপতি যশবন্ত বিষ্ণু চন্দ্রচূড়ের কাছে উপস্থাপিত হয়। তিনি মামলাটি শুনানি মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক রায় দেন। তিনি তার রায়ে উল্লেখ করেন-

"পেনশন কোনও উপহার বা পুরস্কার বা অনুগ্রহ নয়। পেনশন হল অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর জাতির সেবাকর্মের জন্য তার অধিকার।"

[৩]

অর্থাৎ, পেনশন কখনও নিয়োগকর্তার ইচ্ছার অনুসারে কোন এক্স-গ্রাসিয়া পেমেন্ট তথা অনুগ্রহের অর্থ নয়। কর্মচারীর অতীতের পরিষেবার জন্য পরবর্তীকালের অর্থপ্রদান। এটি অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের প্রতি সামাজিক কল্যাণমূলক এক ব্যবস্থা যা আর্থ-সামাজিক ন্যায় বিচার হিসাবেই গণ্য। তারা তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টা নিয়োগকর্তার জন্য অবিরাম পরিশ্রমে ব্যয় করেছেন এই আশ্বাসে যে, তারা বৃদ্ধবয়সে সঙ্কটের মধ্যে অতিবাহিত করবেন।

মাননীয় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের উপরোক্ত তাৎপর্যপূর্ণ রায় ভারতের পেনশনভোগীদের যথোপযুক্ত মর্যাদার সঙ্গে পেনশন পাওয়ার অধিকার প্রদান করেছে এবং যুক্ত হয়েছে মহার্ঘ্য ত্রাণও।

ভি এস নিকারা অবসরের পর বছরের পর বছর ধরে প্রধান বিচারপতির ঐতিহাসিক রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছেন এবং সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মীসম্প্রদায়ের মর্যাদা ও অধিকার পাওয়ার জন্য। নিকারাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য ভারতের সমস্ত পেনশনভোগীরা রায় প্রদানের তারিখটা বেছে নিয়েছেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দ হতে ঐতিহাসিক রায় প্রদানের তারিখ টি ১৭ ডিসেম্বর ভারতে পেনশনভোগীদের বিভিন্ন সংগঠন দ্বারা "পেনশনার দিবস" হিসাবে পালন করা হয়। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সংবাদ উদ্ধৃতিতে, এটি গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস্এ স্থান পেয়েছে। কারণ এই রায়ের কারণে কুড়ি লক্ষ পেনশনভোগী উপকৃত হয়েছেন। বর্তমানে ভারতে পেনশনভোগীর সংখ্যা ৭৩ লক্ষের ও বেশি [৩] এবং ভারত সরকারের 'পেনশন ও পেনশনভোগী কল্যাণ দফতর' (DoPPW) নামক স্বতন্ত্র বিভাগও তাদের কল্যাণে বিভিন্ন দিকে নজর রাখে। [৪]

আরো দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "17th December is an important day for Pensioners in India"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২ 
  2. "CGPWA celebrates National Pensioners' Day"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২ 
  3. "The significance of pensioner's day celebrations"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২ 
  4. "73 লাখ পেনশন প্রাপকের জন্য বড়সড় সুসংবাদ! শীঘ্রই নিয়ম বদল?"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২২